ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

কলম্বিয়ার ম্যাডেলিন শহর

উত্তপ্ত নগরী যেভাবে ফিরে পেলো সবুজের শীতলতা

উত্তপ্ত নগরী যেভাবে ফিরে পেলো সবুজের শীতলতা

শহরটিতে ৩০টি গ্রিন করিডোর তৈরির পেছনে বরাদ্দ করা হয় ১৬.৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। ছবি: পিটার ইয়ুং, দ্যা হিউম্যান জার্নালিজম নেটওয়ার্ক

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১১ মে ২০২৪ | ১৭:৪৪ | আপডেট: ১১ মে ২০২৪ | ১৭:৫০

ইট-সিমেন্টের অবকাঠামো আর সারি সারি যানবাহনের ভীড় যতটা বাড়ে, ততটাই বাড়ে গ্রীষ্মের দাবদাহ। এমন উন্নত অথচ উত্তপ্ত শহরকেও কীভাবে আরামদায়ক করে তোলা যায়, তারই এক উদাহরণ হলো দক্ষিণ আমেরিকার দেশ কলম্বিয়ার ম্যাডেলিন শহরটি। 

খুব দ্রুত নগরায়ন হয়েছিল ম্যাডেলিনে। কম সময়ের মাঝে অনেক অবকাঠামোগত উন্নয়ন হওয়ার ফলে আরবান হিট আইল্যান্ড এফেক্ট দেখা যায় শহরটিতে- আশেপাশের শহরতলী এবং গ্রামাঞ্চলের তুলনায় এতে তাপমাত্রা বেড়ে যায় চোখের পলকে। এর কারণ হলো, গাছপালার তুলনায় রাস্তাঘাট এবং কংক্রিটের ভবন অনেকটা তাপ ধরে রাখে। 

দাবদাহে অতিষ্ঠ হয়ে শহরটির বাসিন্দারা 'গ্রিন করিডোর' প্রকল্প হাতে নেন। এর ফলস্বরূপ শহরটিকে এখন বলা হয় 'সিটি অব ইটারনাল স্প্রিং', অর্থাৎ অনন্ত বসন্তের শহর। কী করে সম্ভব হলো এই দুঃসাধ্য কাজটি?

২০১৬ সাল থেকে ম্যাডেলিনে এই পরিবর্তন শুরু হয়। শহরটিতে ৩০টি গ্রিন করিডোর তৈরির পেছনে বরাদ্দ করা হয় ১৬.৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। ৭০ হেকটর জুড়ে তৈরি এসব করিডোর তৈরি করা হয় শহরটির ২০ কিলোমিটার রাস্তা এবং জলপথের পাশে। 

গ্রিন করিডোরগুলোতে যেমন হরেক প্রজাতির বড় বড় বৃক্ষ লাগানো হয়, তেমনি মাঝারি আকারের ঝোপঝাড়ও রাখা হয়। এমনভাবে গাছ লাগানো হয় যেন পথচারীরা প্রাকৃতিক বনভুমির অনুভূতি পান। এই প্রকল্পের আওতায় মেট্রো স্টেশন, সেতু এসব অবকাঠামোর আশেপাশেও লেগেছে সবুজের ছোঁয়া। উত্তাপ কমাতে কাজে লাগানো হয়েছে ছাদবাগান এবং ভার্টিক্যাল গার্ডেন। 

বছরের পর বছর ছোট ছোট বিভিন্ন উদ্যোগের মাধ্যমে পাল্টে দেওয়া হয়েছে শহরটির চেহারা। এখন সেখানে আছে ৭২ প্রজাতির প্রায় নয় লাখ বৃক্ষ এবং ২৫ লাখ অন্যান্য গাছ। তাপ কমাতে যেন কাজে লাগে, এজন্য প্রতিটি গাছ লাগানোর আগে তার গুণাগুণ বিচার করে নেওয়া হয়েছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ছয় ধরণের বৃক্ষ পরীক্ষা করে দেখা যায় এদের মাঝে সবচেয়ে ভালো হলো আম গাছ, কারণ তা বায়ু দূষণ কমায়, অ্যাজমা, ব্রংকাইটিস ও হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়, এবং দুষিত এলাকাতেও টিকে থাকতে পারে। 

ম্যাডেলিনের এই গ্রিন করিডোর প্রকল্প এখনো চলমান, আর এর পেছনে নিরলস শ্রম দিয়ে চলেছেন শহরটিরই ১৫০ জন বাসিন্দা এবং ১৫ জন বিশেষজ্ঞ। ইতিমধ্যেই তাদের পরিশ্রমের ফলাফল চলে এসেছে। প্রকল্প শুরুর প্রথম তিন বছরেই শহরটির তাপমাত্রা কমে আসে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আগামী কয়েক দশকে এই তাপমাত্রা আরও ৪-৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমে আসবে বলে শহরটির কর্মকর্তারা আশা করছেন। শুধু তাই নয়, প্রতিটি গ্রিন করিডোর বিপুল পরিমাণ কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ করে নিচ্ছে বাতাস থেকে, কমিয়ে আনছে বায়ুদূষণ। এতে বায়ুদূষণে মৃত্যুর সংখ্যাও কমে আসছে। 

এসব বড় বড় উপকারের পাশপাশি আরও ছোট ছোট ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে শহরটিতে। রাস্তাগুলো দৃষ্টিনন্দন এবং আরামদায়ক হওয়ায় সাইকেলে যাতায়াতকারীর সংখ্যা বেড়েছে। গাছপালার সাথে সাথে বেড়ে গেছে প্রাণীবৈচিত্র্য। মাত্র পাঁচটি গ্রিন করিডোর থেকে সংগ্রহ করা নমুনায় পাওয়া গেছে অন্তত ৩০টি প্রজাতির প্রজাপতি। 

ম্যাডেলিন শহরের এই দারুণ পরিবর্তন থেকে শিক্ষা নিচ্ছে কলম্বিয়ার অন্যান্য শহরগুলোও। বোগোটা এবং বারাংকিলা শহরেও একই ধরণের প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। ব্রাজিলের সাও পাওলো শহরে গ্রিন করিডোর প্রকল্প শুরু হয় ২০২২ সালে, এবং তার প্রসার চলছে এখন। 


সূত্র: পিটার ইয়ুং, দ্যা হিউম্যান জার্নালিজম নেটওয়ার্ক

আরও পড়ুন

×