উদ্ভিদ
ট্রামপেট লতার মোহনীয় ফুল

আমেরিকান ট্রামপেট ভাইন বা ট্রামপিট ভাইন। কমলা রঙের ফুল ফোটে বলে কেউ কেউ নাম দিয়েছেন কমললতা লেখক
মৃত্যুঞ্জয় রায়
প্রকাশ: ১৮ জুন ২০২৫ | ০১:০৩ | আপডেট: ১৮ জুন ২০২৫ | ০৬:৫৯
গ্রীষ্মেও রঙটা আগুনে। তাপিতকালের রঙ তো এমনই হওয়া উচিত। এ কারণে কিনা জানি না, গ্রীষ্মকালে টকটকে লাল রঙে রেঙে ওঠে কৃষ্ণচূড়া, গোলাপি রঙে লাল সোনালু, হলুদ রঙে সোনাইল ও কনকচূড়া, বেগুনি রঙে জারুল ফুল। এর সঙ্গে উজ্জ্বল কমলা রঙের আরেকটি গ্রীষ্মের ফুলের দেখা পেলাম চট্টগ্রামের খুলশীতে কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের প্রবেশদ্বারে। ঢাকায় ফিরে সে গাছ দেখলাম জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যান ও রমনা পার্কে।
গাছটির ইংরেজি নাম আমেরিকান ট্রামপেট ভাইন বা ট্রামপেট ভাইন। অভিধানে ট্রামপেট শব্দের তিনটি বাংলা অর্থ পেলাম– ডঙ্কা, তুরি ও ভেরী। ধারণা করা যায়, এসব অর্থ থেকেই এ গাছের বাংলা নাম করা হয়েছে তুরিলতা বা ভেরীলতা। কমলা রঙের ফুল ফোটে বলে কেউ কেউ একে আদর করে নাম দিয়েছেন কমললতা। শিঙ্গা আকৃতির ফুল, তাই এর আরও একটা নাম পেলাম শিঙ্গালতা। তবে ডঙ্কা দ্রাক্ষালতা নামটা মনঃপূত হয়নি। আঙুরগাছকে বলে দ্রাক্ষালতা। যাহোক, গাছটি এদেশে ট্রামপেট লতা নামেই বেশি পরিচিত। উদ্ভিদতাত্ত্বিক নাম ক্যাম্পসিস র্যাডিক্যানস (Campsis radicans) ও গোত্র বিগ্নোনিয়েসী। এর প্রজাতিগত নামের শেষাংশ র্যাডিক্যানসের অর্থ শিকড়যুক্ত কাণ্ড।
ট্রামপেট লতা আধা-পাতাঝরা স্বভাবের কাষ্ঠল লতানে গুল্ম প্রকৃতির গাছ, ১০ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। গাছের চারপাশ থেকে চারদিকে প্রায় ২ মিটার লম্বা লতা জন্মে। সেসব দোলায়মান লতার মাথায় থোকা ফুল ফোটে। ঝুলন্ত লতার গিঁট থেকে বায়বীয় শিকড় বের হয়। লতা হালকা সবুজ, পাতা যৌগিক। পত্রদণ্ডের দুপাশে পত্রকগুলো বিপরীতমুখীভাবে সাজানো থাকে। পাতার পত্রকগুলো সবসময় বিজোড় সংখ্যায় থাকে। পাতার বোঁটা খুব সংক্ষিপ্ত। নিচের পিঠ রোমশ, উপরের পিঠ চকচকে সবুজ। পাতার কিনারা করাতের মতো খাঁজকাটা, আগা সুচালো। লতার আগায় ঝুলন্ত থোকায় বেশ কয়েকটি ফুল ফোটে। ফুল বড়, কমলা বা সিঁদুরে লাল পাপড়ি, মাঝে মাঝে হলদে-কমলা রঙের ফুলও দেখা যায়। ফুল ফোটে গ্রীষ্ম-বর্ষায়। গাছে থাকে তিন মাসের জন্য।
ফুল ঘণ্টাকৃতি, পাপড়ি পাঁচটি। গোড়া যুক্ত হয়ে নলের মতো গড়ন তৈরি করে, পাপড়ির অগ্রভাগ পাঁচটি খাঁজে বিভক্ত। পুরুষ কেশর চারটি, ভেতর দিকে বাঁকানো। ফল লম্বা ক্যাপসুলের মতো, ভেতরে অসংখ্য বীজ থাকে। পাকলে অনেক সময় তা দু’ভাগ হয়ে ফেটে ভেতর থেকে বীজ ছড়িয়ে পড়ে। বীজ থেকে ও লতার কাটিং থেকে চারা হয়। তোরণের ওপর লতিয়ে দেওয়ার জন্য এটি উৎকৃষ্ট লতা।
গরম ও আর্দ্র আবহাওয়ায় গাছ ভালো হয়। লতার গিঁট থেকে গজানো শিকড় দিয়ে আশ্রয়দাতাকে আঁকড়ে ধরে। এতে আশ্রয়দাতার ক্ষতি হয়। এমনকি এর পাতা ত্বকে লাগলে চুলকায় বলে একে কেউ কেউ ‘কাউ-ইচিং’ গাছ বলে।
ট্রামপেট লতার জন্ম পূর্ব-উত্তর আমেরিকায়। বাংলাদেশে অনেক বাগানে এ গাছ দেখা যায়। বিশেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হল প্রাঙ্গণ, রমনা উদ্যান, জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যান এবং দেশের অনেক নার্সারিতে এ গাছ দেখা যায়। এ গাছ আছে আর্জেন্টিনা, অস্ট্রেলিয়া, ফ্রান্স, জার্মানি, ঘানা, ভারত, ইতালি, জাপান, নিউজিল্যান্ড, স্পেন, ইউক্রেন ও যুক্তরাষ্ট্রে। বিভিন্ন দেশের গবেষক ও উদ্যানতত্ত্ববিদরা এখন এর কিছু নতুন জাত উদ্ভাবন করেছেন।
- বিষয় :
- ফুলচাষি