জরিপ
ঢাকার ১৩ ওয়ার্ড, বাইরের চার এলাকা ডেঙ্গুর উচ্চঝুঁকিতে

বরগুনা সদর উপজেলায় প্রতিদিন বাড়ছে ডেঙ্গু রোগী। হাসপাতালে শয্যায় জায়গা না পেয়ে রোগীরা অবস্থান করছেন মেঝেতে। বুধবার বরগুনা জেনারেল হাসপাতাল থেকে তোলা। ছবি: সমকাল
সমকাল প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৯ জুন ২০২৫ | ০৬:৩৯
ঢাকার বাইরে চার পৌর এলাকায় এডিস মশার উপস্থিতি বেশি পাওয়া যাচ্ছে। সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) সম্প্রতি পাঁচটি পৌরসভা এলাকায় জরিপ করে চারটিতে এডিস মশার ঘনত্ব বেশি পেয়েছে। এই চার পৌরসভা হলো– ঝিনাইদহ, মাগুরা, পিরোজপুর ও পটুয়াখালী। এসব এলাকাকে ডেঙ্গুর উচ্চঝুঁকি হিসেবে চিহ্নিত করেছে সংশ্লিষ্টরা।
গতকাল বুধবার আইইডিসিআর আয়োজিত ‘ডেঙ্গু রোগের বাহকের কীটতাত্ত্বিক জরিপ ২০২৪-২০২৫ অবহিতকরণ সভায়’ এ তথ্য জানানো হয়েছে। সভায় জানানো হয়, এডিস মশার উপস্থিতি জানতে গত মার্চে ঢাকার বাইরে তিন সিটি করপোরেশন ও পাঁচটি পৌরসভায় এ জরিপ কার্যক্রম পরিচালিত হয়। জরিপ করতে প্রতিটি এলাকায় ৯ ওয়ার্ডে ২১৪টি বাড়ি পরিদর্শন করা হয়। এ ছাড়া গত ফেব্রুয়ারিতে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এলাকায় জরিপ করা হয়। সভায় জরিপের ফলাফল উপস্থাপন করেন আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক ডা. তাহমিনা শিরিন। তিনি বলেন, এডিস মশার লার্ভার ঘনত্ব পরিমাপের স্বীকৃত পদ্ধতি হলো ‘ব্রুটো ইনডেক্স (বিআই)’। এই মানদণ্ডে লার্ভার ঘনত্ব ২০ শতাংশের বেশি হওয়া মানে সেখানে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব নিশ্চিতভাবে বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করা হয়। এ ছাড়া হাউস ইনডেক্স ১০-এর বেশি হলে ঝুঁকিপূর্ণ বলা হয়।
জরিপে দেখা গেছে, ঝিনাইদহ পৌর এলাকায় ব্রুটো ইনডেক্স ৬০ শতাংশ। এর পর মাগুরায় ৫৫ দশমিক ৫৬ শতাংশ, পিরোজপুরে ২০ শতাংশ ও পটুয়াখালীতে ১৯ দশমিক ২৬ শতাংশ, কুষ্টিয়ায় ৭ দশমিক ৮৭ শতাংশ। তিন সিটি করপোরেশন এলাকার মধ্যে চট্টগ্রামে ৫ দশমিক ৬২ শতাংশ, রাজশাহীতে ৪ দশমিক ৭৯ শতাংশ ও বরিশালে ২ দশমিক ৫ শতাংশ।
পাঁচ পৌরসভার মধ্যে হাউস ইনডেক্স সবচেয়ে বেশি মাগুরায়। এই পৌর এলাকায় গড় হাউস ইনডেক্স ৩৫ দশমিক ৫৬ শতাংশ। এর পর ঝিনাইদহে ৩২ দশমিক ৯৬ শতাংশ। পটুয়াখালীতে ১৮ দশমিক ১৫ শতাংশ। পিরোজপুরে ১৪ দশমিক ৪৪ শতাংশ ও কুষ্টিয়ায় ৭ দশমিক ২৯ শতাংশ।
তিনি বলেন, গত ফেব্রুয়ারিতে ঢাকার দুই সিটির ৩ হাজার ১৪৭টি বাড়ি থেকে নমুনা সংগ্রহ করে ৪৬৩ বাড়িতে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া গেছে। এ হিসেবে রাজধানীর ১৪ দশমিক ৭১ শতাংশ বাড়িতে এডিস মশার অস্তিত্ব রয়েছে। এবার বহুতল ভবনে ৫৮ দশমিক ৮৮ শতাংশ লার্ভা পাওয়া গেছে। এ ছাড়া নির্মাণাধীন ভবনে ১৯ দশমিক ৬৩ শতাংশ, আধা পাকা ভবনে ৮ দশমিক ৮৮ শতাংশ, পরিত্যক্ত ভবনে ২ দশমিক ৮ শতাংশ এডিসের লার্ভা পাওয়া গেছে। তিনি আরও বলেন, ঢাকার দুই সিটির ৯৯টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১৩টিতে ব্রুটো ইনডেক্স ২০-এর বেশি। এর মধ্যে উত্তরের ওয়ার্ডগুলো হলো– ১২, ২, ৮, ৩৪, ১৩ ও ২২। আর দক্ষিণের ওয়ার্ডগুলো হলো– ৩১, ৪১, ৩, ৪৬, ৪৭, ৪ ও ২৩।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হাসপাতাল শাখার পরিচালক ডা. মঈনুল আহসান বলেন, ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসা উপজেলায় বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছি।
এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক মো. হালিমুর রশিদ বলেন, জরিপের তথ্য আজই আমরা হাতে পেয়েছি। এ অনুযায়ী আমরা প্রস্তুতি নেব। তিনি আরও বলেন, অর্থের অভাবে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া রোগীদের মৃত্যুর কারণ পর্যালোচনা (ডেথ রিভিউ) করতে পারছি না। গেল বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া ১২৪ রোগীর তথ্য সংগ্রহ করা হলেও মৃত্যুর কারণ পর্যালোচনা করা যায়নি।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, জনস্বাস্থ্যে জরুরি পরিস্থিতি যত দ্রুত সম্ভব মানুষকে জানাতে হবে। এতে মানুষ প্রাথমিকভাবে একটু ধাক্কা খেলেও প্রস্তুতি নিতে পারে। তারা অভ্যস্ত হয়ে যায়– এই বিপদটা আসছে। জরিপের তথ্য অনুযায়ী আগামীতে ডেঙ্গু বাড়বে।
ঢাকার বাইরে ডেঙ্গু প্রতিরোধে আগাম প্রস্তুতি বিষয়ে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবু জাফর বলেন, চার জেলায় এডিসের লার্ভা বেশি পেয়েছে। এসব এলাকায় মশা নিধন কর্মসূচি নিতে পারে সিটি করপোরেশন ও স্থানীয় সরকার বিভাগ। কীটতত্ত্ববিদ পরিস্থিতি বিবেচনা করে ওষুধে পরিবর্তন আনতে পারেন। চিকিৎসার ক্ষেত্রে কিছু পরিবর্তন আনবে। তবে সচেতনতার জায়গায় কোনো পরিবর্তন আসবে না। আগের মতো সবাইকে সচেতন ও সতর্ক হতে হবে।
- বিষয় :
- ডেঙ্গু আক্রান্ত