২৬ মার্চের মধ্যে হচ্ছে না রাজাকারের তালিকা

আবু সালেহ রনি
প্রকাশ: ১৭ জানুয়ারি ২০২০ | ১৩:৩১
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশিত ভুলেভরা 'রাজাকারসহ
স্বাধীনতাবিরোধীদের তালিকা' ব্যাপক সমালোচনার মুখে স্থগিতের পর ফের
প্রকাশের বিষয়ে এখনও কোনো অগ্রগতি হয়নি। গঠিত হয়নি রাজাকারের তালিকা প্রণয়ন
সংক্রান্ত কমিটিও।
তবে গত ১৮ ডিসেম্বর ভুলেভরা রাজাকারের তালিকা প্রত্যাহারের দিনই
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছিল, আগামী ২৬
মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবসে এ তালিকা প্রকাশের প্রচেষ্টা থাকবে। তালিকা
প্রত্যাহারের পর একাধিক অনুষ্ঠানেও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম
মোজাম্মেল হক বলেছিলেন, যাচাই-বাছাই করে ২৬ মার্চের মধ্যে রাজাকার তালিকা
প্রকাশ করা হবে।
তবে মন্ত্রণালয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নতুন করে এ তালিকা প্রকাশের কোনো
উদ্যোগ এখনও নেওয়া হয়নি। এ নিয়ে দাপ্তরিক কোনো কার্যক্রমও চলছে না। তবে
এবার রাজাকারের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের আগে অবশ্যই পুঙ্খানুপঙ্খ
যাচাই-বাছাই করা হবে। বিষয়টি নিয়ে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলেও (জামুকা)
আলোচনার প্রয়োজন রয়েছে। সেখান থেকে রাজাকারের তালিকা প্রণয়নে কমিটি গঠন ও
নীতিমালা তৈরির বিষয়টি অনুমোদন করা হবে। নীতিমালার আলোকে রাজাকারের তালিকা
প্রণয়নের পর তা প্রকাশ করবে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়।
এদিকে রাজাকারের সংরক্ষিত নথি কোন পরিপ্রেক্ষিতে তৈরি হয়েছিল, তা
পুনঃপরীক্ষা-নিরীক্ষা করার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যৌথ বৈঠকের সুপারিশ করেছে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক
মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। গত ১৫ জানুয়ারি কমিটির বৈঠকে
রাজাকার, আলবদর, আলশামস, শান্তি কমিটি ও স্বাধীনতাবিরোধী সব শ্রেণিভুক্ত
ব্যক্তির তালিকা পাঠানোর জন্য জেলা প্রশাসকদের কাছে চিঠি দেওয়ারও নির্দেশ
দেওয়া হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক সমকালকে বলেন,
'রাজাকারের তালিকা হবেই। মুক্তিযোদ্ধা ও সংশ্নিষ্টদের নিয়ে এ তালিকা
প্রকাশের পর প্রয়োজনে উপজেলা পর্যায়ে তা ফের যাচাই-বাছাই করা হবে। আবার ভুল
হোক এমনটি চাই না। তাই কিছুটা সময় লাগবে। ২৬ মার্চের মধ্যে এটি সম্ভব হবে
না।'
স্বাধীনতার ৪৮ বছর পর গত ১৫ ডিসেম্বর প্রথমবারের মতো ১০ হাজার ৭৮৯ জন
রাজাকারসহ 'স্বাধীনতাবিরোধীদের নামের তালিকা' প্রকাশ করে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক
মন্ত্রণালয়। কিন্তু ওই তালিকায় জাতীয় বা স্থানীয়ভাবে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের
শক্তি হিসেবে পরিচিত অনেক প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা এবং সংগঠকের নামও পাওয়া যায়,
যাদের অনেকে আবার নিয়মিত মুক্তিযোদ্ধা ভাতাও পেয়ে আসছেন। এতে দেশের
বিভিন্ন স্থানে প্রকাশিত তালিকা নিয়ে ক্ষোভ দেখা দেয়। এমন প্রেক্ষাপটে ১৮
ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট থেকে রাজাকারের তালিকা
সরিয়ে ফেলা হয়।
বিশিষ্টজনের অভিমত :এ প্রসঙ্গে অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন সমকালকে বলেন,
'আমলানির্ভরতার কারণেই রাজাকারের তালিকায় মুক্তিযোদ্ধাদের অন্তর্ভুক্তির
ঘটনা ঘটেছিল। এমন ঘটনার যেন পুনরাবৃত্তি না হয়, সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
আগামীতে ১০ হাজার রাজাকারের তালিকা প্রকাশ না হোক, অন্তত ধাপে ধাপে
গেজেটভুক্ত রাজাকার, আলবদর, আলশামস ও শান্তি কমিটির সদস্যদের তালিকা প্রকাশ
করা হোক। তবে যেটাই প্রকাশ করা হোক, সেটা যেন খোঁজখবর করে নিশ্চিত হয়ে
সবার সঙ্গে আলোচনা করে প্রকাশ করা হয়।'
এ প্রসঙ্গে ওয়ার ক্রাইমস ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান ডা. এম এ
হাসান বলেন, 'প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধ-গবেষকদের নিয়ে কমিটি গঠন
করতে হবে। আবারও যাতে তালিকা প্রশ্নবিদ্ধ না হয় সেদিকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব
দিতে হবে।'
মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ আবদুল
আহাদ চৌধুরী বলেন, 'একটি নীতিমালা করে উপজেলা পর্যায়ে প্রকৃত
মুক্তিযোদ্ধাদের উপস্থিতিতে আলোচনার ভিত্তিতে রাজাকার তালিকা চূড়ান্ত করতে
হবে। তাহলে সংশোধিত তালিকা নিয়ে বিতর্ক অনেকাংশেই থাকবে না।'
- বিষয় :
- রাজাকারের তালিকা