ঢাকা মঙ্গলবার, ০৮ জুলাই ২০২৫

রেলক্রসিংয়ে হযবরল

রেলক্রসিংয়ে হযবরল

ছবি: ফাইল

রাজীব আহাম্মদ

প্রকাশ: ১১ মার্চ ২০২২ | ১২:০০ | আপডেট: ১১ মার্চ ২০২২ | ১৪:৩২

রেললাইন পারাপারের ক্রসিংয়ে (লেভেল ক্রসিং) সৃষ্টি হয়েছে হযবরল অবস্থা। রেলওয়ের হিসাবে দেশে বৈধ ক্রসিংয়ের সংখ্যা এক হাজার ৪১২টি; তবে এর ৯৪৬টিতেই নেই গেটকিপার। এ ছাড়া রেললাইনের ওপর দিয়ে সরকারের বিভিন্ন সংস্থা রাস্তা নির্মাণ করার কারণে ২০১৯ সাল পর্যন্ত অবৈধ ক্রসিংয়ের সংখ্যা ছিল এক হাজার ৮৫টি, যা আরও বেড়েছে। লেভেল ক্রসিংয়ের মান উন্নয়নে ২০১৫ সালে নেওয়া প্রকল্পও এখনও শেষ হয়নি। অরক্ষিত ক্রসিংয়ে নিয়মিতই প্রাণ যাচ্ছে মানুষের।

এ বিষয়ে রেলের যুগ্ম মহাপরিচালক (প্রকৌশল) মামুনুল ইসলাম বলেন, ইউনিয়ন পরিষদ থেকে শুরু করে বিভিন্ন সংস্থা অনুমতি ছাড়াই রেললাইনের ওপর সড়ক নির্মাণ করছে। ফলে সেখানে একটি ক্রসিংয়ের সৃষ্টি হচ্ছে। কিন্তু সেখানে গেট, গেটকিপার কিছুই নেই। ফলে দুর্ঘটনা ঘটছে।

প্রকৌশল বিভাগের হিসাবে, পূর্ব ও পশ্চিম রেলের দুই অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি অবৈধ লেভেল ক্রসিং সৃষ্টি করেছে এলজিইডি। এলজিইডির কারণে সৃষ্ট অবৈধ ক্রসিংয়ের সংখ্যা ৪৪২টি। ইউনিয়ন পরিষদ নির্মাণ করেছে ৩৬৩টি, পৌরসভা ৭৯টি, সিটি করপোরেশন ৩৪টি, জেলা পরিষদ ১৩টি ও সওজ ১১টি। ৩৩টি লেভেল ক্রসিং নির্মাণ করা হয়েছে স্থানীয় পর্যায়ে। এ ব্যাপারে তথ্য নেই রেলের কাছে। এদিকে, রেললাইনে বাজারও বসছে। ২০১৫ সালে রাজধানীর সায়েদাবাদে লেভেল ক্রসিংয়ে ট্রেন-বাসের সংঘর্ষের ঘটনা তদন্তে গঠিত কমিটি ক্রসিংয়ের আশপাশে অবৈধ স্থাপনা ভেঙে ফেলা ও ক্রসিংয়ে লোকবল বৃদ্ধির সুপারিশ করে। কিন্তু তা বাস্তবায়ন হয়নি।

ট্রেন চলাচলের সংখ্যা হিসাবে লেভেল ক্রসিংয়ে এক থেকে চারজন গেটকিপার থাকেন। আট ঘণ্টার শিফট হিসাবে ক্রসিংয়ের ৩ থেকে ১২ জন গেটকিপার প্রয়োজন। ঢাকা শহরে কিংবা জনবহুল এলাকায় থাকার কথা ১২ জন, আছেন ছয়জন করে। জনবল সংকটের কারণে যেখানে বৈধ ক্রসিংয়েই গেটম্যান নিয়োগ দেওয়া যাচ্ছে না, সেখানে অবৈধ ক্রসিং অরক্ষিত রাখা ছাড়া উপায় নেই।

রেলের পূর্বাঞ্চলের ৩৪৩টি বৈধ ক্রসিংয়ের ১৮৯টিতে একজন গেটকিপারও নেই। পশ্চিমাঞ্চলের ৯৭৮টির মধ্যে ৭৫৭টিতে গেটকিপার নেই। দুই অঞ্চলের ৬৫৪টি লেভেল ক্রসিংয়ের পুনর্বাসন ও মান উন্নয়নে ২০১৫ সালে ৯৭ কোটি টাকার পৃথক দুটি প্রকল্প নেয় রেলওয়ে। প্রকল্পের ব্যয় ও সময় বৃদ্ধিতে তা ১০০ কোটি টাকা বেড়েছে। আগামী জুনে প্রকল্প শেষ হওয়ার কথা থাকলেও ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত বর্ধিত হতে যাচ্ছে।

দুই প্রকল্পের অধীনে এক হাজার ৮৮৯ জন গেটকিপারকে অস্থায়ী নিয়োগ দেওয়া হয়। চাকরি স্থায়ীকরণের দাবিতে ১২ দিন ধরে তারা কমলাপুর স্টেশনে রেলের প্রশাসনিক ভবনের সামনে অনশন করছেন। গেটকিপাররা আন্দোলনে থাকায় বহু লেভেল ক্রসিং অরক্ষিত পড়ে রয়েছে। কিন্তু এ আন্দোলন নিরসনে এখন পর্যন্ত রেলের তরফে কোনো উদ্যোগ নেই। গত ২৭ ফেব্রুয়ারি রেলের পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর ও পূর্বাঞ্চলের লেভেল ক্রসিংয়ের মান উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক শেখ নাঈমুল হক আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলার পর আর কেউ যাননি বলে জানিয়েছেন আন্দোলনকারীদের মুখপাত্র মো. আল মামুন। তিনি বলেন, অনশনে শতাধিক গেটকিপার অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। ১৫ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।

রেলের পশ্চিমাঞ্চলের প্রকল্পের ব্যয় ৪৭ কোটি ৮৪ লাখ থেকে বাড়িয়ে ৯২ কোটি ২৮ লাখ টাকা হয়েছে। তা ১৪১ কোটি ৪৭ লাখ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রকল্প পরিচালক বীরবল মণ্ডল সমকালকে জানান, ৩২৬টি লেভেল ক্রসিংয়ে মান উন্নয়ন ও পুনর্বাসনের কাজ চলছে। প্রকল্পের মেয়াদ তিন বছর বাড়বে। অস্থায়ী নিয়োগ পাওয়া গেটকিপাররাই বর্ধিত মেয়াদে চাকরি করবেন।

পূর্বাঞ্চলের প্রকল্প ৪৯ কোটি থেকে দুই দফায় বেড়ে ১০৪ কোটি ৫০ লাখ টাকা হয়েছে। ১৭৬ কোটি ৬৪ লাখ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ প্রকল্পের আওতায় ৩২৮টি লেভেল ক্রসিংয়ের মান উন্নয়নের কাজ চলছে।

পশ্চিমাঞ্চলের প্রকল্পের আওতায় অস্থায়ী ভিত্তিতে ৭৭৩ জন গেটকিপার নিয়োগ করা হয়। পূর্বাঞ্চলে নিয়োগ করা হয় এক হাজার ১১৬ জনকে। দুই প্রকল্পের স্টিয়ারিং কমিটির (পিএসসি) সভা সূত্রে জানা গেছে, পূর্বাঞ্চলে কতগুলো বৈধ ও অবৈধ গেট রয়েছে, তার তালিকা প্রণয়ন এবং তাতে কত জনবল দরকার, তা নির্ধারণে কমিটি করা হবে। এক হাজার ৩৮টি গেটকিপার পদ তৈরি করতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব করা হয়েছে। কিন্তু এখনও অনুমোদন মেলেনি।

আরও পড়ুন

×