ঢাকা সোমবার, ০৭ জুলাই ২০২৫

স্কুল-কলেজে সেই চিরচেনা পরিবেশ

স্কুল-কলেজে সেই চিরচেনা পরিবেশ

দীর্ঘদিন পর শুরু হয়েছে খুদে শিক্ষার্থীদের সশরীরে ক্লাস। মঙ্গলবার রাজধানীর ভাসানটেক নির্ঝর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুলের ছবি-সমকাল

বিশেষ প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১৫ মার্চ ২০২২ | ১২:০০ | আপডেট: ১৫ মার্চ ২০২২ | ১২:০৬

দুই বছর পর মঙ্গলবার থেকে আবারও মাধ্যমিক পর্যায়ে শুরু হয়েছে পুরোদমে শ্রেণিকক্ষে পাঠদান। মহামারি করোনার কারণে এতদিন স্কুল-কলেজে পাঠদান চলছিল সীমিত পরিসরে। মঙ্গলবার থেকে স্বাভাবিক রুটিনে ফিরেছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো। একই সঙ্গে মহামারির ধাক্কা সামলে টানা ৭২৬ দিন বন্ধ থাকার পর প্রাক-প্রাথমিকের শিশুরাও ফিরেছে শ্রেণিকক্ষে। এদিন খুদে এই শিক্ষার্থীদের আনন্দ-উচ্ছ্বাসও ছিল দেখার মতো। স্বস্তি ফিরেছে অভিভাবকদের মনেও। দেখা গেছে চিরচেনা সেই পরিবেশ।

দেশের স্কুল-কলেজ পুরোদমে ক্লাস চালু হলে সকাল থেকেই শিক্ষক-শিক্ষার্থী-অভিভাবক সবার মধ্যে ছিল খুশির আমেজ। রাজধানী ঢাকার একাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ঘুরে দেখা গেছে, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যাপক উচ্ছ্বাস। প্রতিটি স্কুল-কলেজের সামনে দেখা গেছে শিক্ষার্থী-অভিভাবকের ভিড়। সৃষ্টি হয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠানকেন্দ্রিক যানজট, যা ছড়িয়ে পড়ে পুরো রাজধানীতে। এতে নাকাল হতে হয়েছে অভিভাবক ও সাধারণ মানুষকে।

মঙ্গলবার নির্ধারিত সময়ের বেশ আগেই অনেকে চলে আসেন স্কুল ফটকের সামনে। সেখানে অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা নিজেদের মধ্যে শুভেচ্ছা-কুশল বিনিময় করেন। বিদ্যালয়ের আঙিনায় পা রেখেই আনন্দ-উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে শিক্ষার্থীরা। তারা বলে, অনেক দিন পর আবারও সরাসরি সব ক্লাসের বন্ধুদের একসঙ্গে পেয়েছি। খুবই ভালো লাগছে। করোনার কারণে আমরা এতদিন সবাই মিলে ক্লাসে আসতে পারিনি। এখন থেকে পারব। খেলতেও পারব। একসঙ্গে স্কুলেও আসতে পারব। আবার একসঙ্গে বাসায় যেতেও পারব।

দীর্ঘদিন পর প্রাক-প্রাথমিক স্তরের (প্লে, নার্সারি ও কেজি) কোমলমতি ছাত্রছাত্রীরা ক্লাসে ফেরায় খুশি শিক্ষকরাও। রাজধানীর মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খায়রুন নাহার লিপি সমকালকে বলেন, বাচ্চারা ক্লাসে রুমে ফিরে আশায় আমরা ভীষণ খুশি। ওদের চকোলেট দিয়ে বরণ করেছি। ওরাও আমাদের পেয়ে, ঘরবন্দি অবস্থা থেকে মুক্ত হতে পেরে আনন্দিত। তিনি বলেন, এখন প্রতিদিন সব শ্রেণির শিক্ষার্থীরা আসায় পুরোনো চেহারায় ফিরবে শিক্ষাঙ্গন। প্রতিদিনই ক্লাস হবে।

অভিভাবক ঐক্য ফোরামের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউল কবির দুলু সমকালকে বলেন, পুরোদমে ক্লাস শুরু হওয়ায় আমরা খুশি। মহামারি কালের শিখন ঘাটতি এখন কিছুটা হলেও কাটিয়ে ওঠা যাবে বলে সাধারণ অভিভাবকরা মনে করছেন।

এর আগে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণিতে স্বাভাবিক নিয়মে প্রতিদিন ক্লাস শুরু হয়েছিল ২ মার্চ থেকেই। তবে মাধ্যমিকে ক্লাস হচ্ছিল সীমিতভাবে; গতকাল তারাও পুরোদমে শ্রেণি কার্যক্রমে ফিরল।

এইচএসসি ও এসএসসি পরীক্ষার্থীরা এতদিন চারটি বিষয়ে এবং দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা তিনটি বিষয়ে প্রতিদিন ক্লাস করে আসছিল। আর অষ্টম ও নবম শ্রেণিতে সপ্তাহে দু'দিন তিন বিষয়ে এবং ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে এক দিন তিন বিষয়ের ক্লাস হচ্ছিল।

রাজধানীর গভর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক আবু সাঈদ ভূঁইয়া বলেন, তার বিদ্যালয়ে প্রতিটি ক্লাসই গতকাল হয়েছে। মহামারির আগের মতোই শ্রেণি কার্যক্রম শুরু করা গেছে। বাচ্চারাও খুব উৎসাহী। যথাযথভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ক্লাস নেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।

মগবাজারের ইম্পাহানী গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ সাদেকা বেগম বলেন, 'আবারও আগের চেহারায় ফিরল স্কুল। বিষয়টি একজন শিক্ষক হিসেবে আমার জন্য আনন্দের।' ইস্কাটন গার্ডেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক দুলাল চন্দ্র চৌধুরী বলেন, 'ভাবলেই অবাক লাগে, গত দুই বছর আমরা স্বাভাবিক পাঠদানে অংশ নিতে পারিনি। আজ আবার সেই আগের অবস্থায় ফিরল স্কুল।' প্রভাতী বিদ্যানিকেতনের সিনিয়র শিক্ষক পুলিং মালাকার বলেন, 'আজ মনে হচ্ছে দুই বছর আগের দিনে ফিরে গেলাম।'

ভিকারুননিসা নূন স্কুলের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী শাহমিকা শাহরীন অনামিকার মা রোকেয়া সুলতানা বলেন, অনলাইন ক্লাসে তার মেয়ে তেমন মনোযোগী হতে পারেনি। সরাসরি সশরীরে পূর্ণ রুটিনে ক্লাস শুরু হওয়ায় তিনি আশাবাদী যে, তার মেয়ের মতো মনোযোগ হারিয়ে ফেলা শিক্ষার্থীরা আবারও লেখাপড়ায় মনোযোগ ফিরে পাবে।

আরও পড়ুন

×