বেঁচে গিয়েও তাদের চোখে অশ্রু

সামিয়া প্রীতির ঘনিষ্ঠ বান্ধবী সুমাইয়া আক্তার
সমকাল প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৫ মার্চ ২০২২ | ১০:০৬ | আপডেট: ২৫ মার্চ ২০২২ | ১০:১৪
বৃহস্পতিবার রাত ৩টা। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গের অদূরে ফ্লোরে বসে দু’হাতে মুখ ঢেকে ডুকরে ডুকরে কাঁদছিলেন সুমাইয়া আক্তার। কিছু সময় পরই দৌড়ে মর্গের পাশে গিয়ে চিৎকার করে বলছিলেন, ‘তুই জাগছিস না কেন। কেন ঘুমিয়ে আছিস। কথা বল।’
শাহজাহানপুরে গুলিতে নিহত কলেজছাত্রী সামিয়া প্রীতির ঘনিষ্ঠ বান্ধবী সুমাইয়া। একই রিকশায় থেকে গুলিবিদ্ধ হয়ে সামিয়া নিহত হলেও ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান সুমাইয়া। প্রিয় বান্ধবীকে ছাড়া এই বেঁচে যাওয়াকে ‘অপরাধ’ হিসেবে মনে করছেন তিনি। কোনভাবেই মেনে নিতে পারছেন না।
বিলাপ করছিলেন আর বলছিলেন, ‘এক গুলি কেন আমার গায়ে লাগল না। আমিও তোর সঙ্গে চলে যেতাম।’
এরপরই নিজের মোবাইলে থাকা প্রীতির ছবি দেখিয়ে বললেন, ‘তুই আর কখনও আমার সঙ্গে অভিমান করবি না? আমি কার সঙ্গে অভিমান করব।’
গুলিবিদ্ধ রিকশাচালক মনির হোসেন মুন্না
মধ্যরাতে হাসপাতালে এলেন সুমাইয়ার এক স্বজন। তাকে জড়িয়ে ধরে বলতে লাগলেন, ‘বন্ধুর জন্য কিছু করতে পারলাম না। দু'জনের কত প্ল্যান ছিল।’
এরপরই হাসপাতালের জরুরি বিভাগে রাতে কথা হয় শাহজাহানপুরের ঘটনায় বেঁচে যাওয়া গুলিবিদ্ধ চালক মনির হোসেন মুন্নার সঙ্গে। তার গ্রামের বাড়ি ভোলায়। তিনি আওয়ামী লীগ নেতা টিপুর গাড়িচালক।
মুন্না বলছিলেন, ‘ভাইরে যদি বাঁচাতে পারতাম। গুলি করার পর হতচকিত হয়ে গাড়ি একবার জোরে টানও মারছিলাম। সামনে রিকশা থাকায় বেশিদূর এগোতে পারিনি। হেঁটে এসে একজন মুহুর্মুহু গুলি করতে থাকে। আমার শরীরেও গুলি লাগে। রক্তাক্ত শরীর নিয়ে গাড়ি চালিয়ে ভাইকে নিয়ে প্রথমে ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালে যাই। এরপর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।’
কাঁদতে কাঁদতে তিনি এসব কথা বলছিলেন আর চোখ মুছছিলেন।