ঢাকা রবিবার, ০৬ জুলাই ২০২৫

সম্রাটের রিমান্ডে আতঙ্কে সহযোগীরা

সম্রাটের রিমান্ডে আতঙ্কে সহযোগীরা

আদালতে সম্রাট -সমকাল

সমকাল প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৫ অক্টোবর ২০১৯ | ১০:২৮

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের বহিস্কৃত সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাটকে অস্ত্র ও মাদক মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মোট ১০ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। একই দিনে মাদক মামলায় সম্রাটের ঘনিষ্ঠ সহযোগী আরেক বহিস্কৃত যুবলীগ নেতা এনামুল হক আরমানকে নেওয়া হয়েছে পাঁচ দিনের রিমান্ডে।

মঙ্গলবার ঢাকা মহানগর হাকিম মোহাম্মদ তোফাজ্জল হোসেন এই রিমান্ড মঞ্জুর করেন। ক্যাসিনোকাণ্ডে আলোচিত সম্রাটকে জিজ্ঞাসাবাদে গুরুত্বপূর্ণ অনেক তথ্য পাওয়ার আশা করছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। 

সংশ্লিষ্ট সূত্রের মতে, ঢাকার কোথায় কোন ক্লাবে ক্যাসিনো বা জুয়ার আসর চলত, সেগুলো থেকে রাজনৈতিক নেতাকর্মী ও পুলিশসহ অন্যান্য মহলের কে কত টাকা পেতেন, কারা এসব কর্মকাণ্ডকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিতেন তা স্পষ্ট হতে পারে জিজ্ঞাসাবাদে। এতে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন সম্রাটের সহযোগী ও ক্যাসিনো কারবারের সুবিধাভোগীরা। কারণ এতদিন নানা কৌশলে গা বাঁচিয়ে চলা অনেকেই এবার ফেঁসে যেতে পারেন বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

ঢাকা মহানগর পুলিশের গণমাধ্যম ও জনসংযোগ শাখার উপকমিশনার মাসুদুর রহমান সমকালকে বলেন, অস্ত্র ও মাদক আইনে রমনা থানায় করা মামলা দুটি তদন্তের দায়িত্ব পেয়েছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। রিমান্ড মঞ্জুর হওয়ার পর এসব মামলার আসামি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট ও এনামুল হক আরমানকে ডিবি হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরুর পর আত্মগোপনে চলে যাওয়া যুবলীগের প্রভাবশালী নেতা সম্রাটকে গত ৬ অক্টোবর কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম থেকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। পরদিন তাকে নিজ কার্যালয়ে বন্যপ্রাণীর চামড়া রাখার দায়ে ছয় মাসের দণ্ড দিয়ে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত। একই দিনে তাকে অস্ত্র ও মাদক আইনের দুই মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে ১০ দিন করে রিমান্ড চায় রমনা থানা পুলিশ। ৯ অক্টোবর শুনানির দিন ধার্য থাকলেও সেদিন সম্রাট হাসপাতালে ভর্তি থাকায় আদালতে হাজির করা হয়নি। ফলে শুনানির জন্য ১৫ অক্টোবর দিন ধার্য করেন আদালত।

ডিবি সূত্র জানায়, রিমান্ড মঞ্জুর হওয়ার পর সম্রাট ও আরমানকে বিকেলে মিন্টো রোডে ডিবি কার্যালয়ে নেওয়া হয়। সেখানে সম্রাটকে আলাদা একটি কক্ষে রাখা হয়েছে। তিনি অসুস্থ হওয়ায় একজন চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে সতর্কতার সঙ্গে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করার কথা রয়েছে। সম্রাটের কাছ থেকে ক্যাসিনো কারবারের আদ্যোপান্ত জানার চেষ্টা করা হবে। তার সহযোগী হিসেবে কারা ক্যাসিনো-জুয়ার কারবার ও অন্যান্য অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছিলেন, কারা নানাভাবে অনৈতিক সুবিধা নিয়ে তাদের অপকর্মকে প্রশ্রয় দিয়েছেন তা জানতে চাওয়া হবে। পাশাপাশি ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানের শুরুতে গ্রেফতার যুবলীগ নেতা (পরে বহিস্কৃত) খালেদ মাহমুদ ভুঁইয়া ও ঠিকাদার জি কে শামীমসহ অন্যদের জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া বিভিন্ন তথ্যের ব্যাপারেও সম্রাটকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। রিমান্ডে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে সম্রাটের সহযোগী ও ক্যাসিনো কারবারে জড়িত অন্যদের গ্রেফতারে অভিযান চালাবে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

আদালত সূত্র জানায়, সম্রাট ও আরমানকে গতকাল আদালতে হাজির করে রমনা থানার মাদক আইনের মামলায় ১০ দিন করে রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করা হয়। একই থানায় অস্ত্র আইনের মামলায় সম্রাটকে আরও ১০ দিনের রিমান্ডে চায় গোয়েন্দা পুলিশ। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ঢাকার মহানগর আদালতের পিপি আব্দুল্লাহ আবু, অতিরিক্ত পিপি সাজ্জাদুল হক শিহাব, তাপস পাল ও এপিপি আজাদ রহমান। আসামির পক্ষে শুনানি করেন গাজী জিল্লুর রহমান, আব্দুল কাদের প্রমুখ। শুনানি শুরুর আগে হাতকড়া পরা অবস্থায় সম্রাটকে কাঠগড়ায় তোলা হয়। এ সময় তাকে অসহায় ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। তিনি প্রচণ্ড ঘামছিলেন দেখে একজন টিস্যু পেপার এগিয়ে দেন। প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা ধরে চলা শুনানিতে তিনি একাধিকবার নিজের ও রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলেন। সহযোগী এনামুল হক আরমানও তার সঙ্গে কাঠগড়ায় ছিলেন।

মাদক মামলার রিমান্ড আবেদনে বলা হয়, প্রাথমিক তদন্তে জানা যায়, আসামিরা ঢাকা শহরের বিভিন্ন স্থানে অবৈধ মাদক ব্যবসা, জুয়া ও চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপকর্মে জড়িত।

আরও পড়ুন

×