ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০৩ জুলাই ২০২৫

নেতৃত্বের উৎকর্ষে, সমৃদ্ধির প্রত্যয়ে: শেহ্‌জাদ মুনীমের জীবনের প্রেরণার কথা

নেতৃত্বের উৎকর্ষে, সমৃদ্ধির প্রত্যয়ে: শেহ্‌জাদ মুনীমের জীবনের প্রেরণার কথা

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২২ | ০১:০৩ | আপডেট: ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২২ | ০৮:০১

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও ব্যবসায়িক খাতকে সুপ্রতিষ্ঠিত করার ক্ষেত্রে এদেশে পরিচালিত বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো বরাবরই গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, কর্মসংস্থান তৈরি ও জিডিপি-তে অবদান ছাড়াও, দেশের ব্যবসায়িক পরিমণ্ডলে বেস্ট প্র্যাকটিস, রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট, টেকনোলজি এবং অর্গানাইজেশনাল কালচারের মতো কর্পোরেট বৈশিষ্ট্য প্রবর্তনেও বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। একটা সময় এসকল বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ পদের দায়িত্বে শুধুমাত্র বিদেশি নাগরিকদেরই দেখা যেত। কিন্তু বিগত কয়েক বছরে এই ধারায় পরিবর্তন এসেছে। বর্তমানে দেশে-বিদেশে বিভিন্ন বহুজাতিক কোম্পানির নেতৃত্বে রয়েছেন প্রায় অর্ধ শতাধিক বাংলাদেশি।

প্রেরণার কথা’র তৃতীয় সিজনের চতুর্থ পর্বে অতিথি হয়ে এসেছিলেন এমনই এক বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ কর্মকর্তা যিনি ব্যবসায়িক ব্যবস্থাপনা ও নেতৃত্বে বাংলাদেশি মেধা সম্পর্কে ধারণা পাল্টে দিতে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছেন। বিএটি বাংলাদেশ-এর মত প্রসিদ্ধ এক বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের প্রায় ১১০ বছরের ইতিহাসে প্রথম বাংলাদেশি ম্যানেজিং ডিরেক্টর হিসেবে, তিনি দীর্ঘ ৯ বছর ধরে সফলতার সাথে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। তিনি দেশের করপোরেট সেক্টরের খুবই পরিচিত মুখ, শেহ্‌জাদ মুনীম।

শেহ্‌জাদ মুনীম বড় হয়েছেন এক সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারে। চার ভাইয়ের মধ্যে তিনি সবার ছোট। তার ছেলেবেলার অধিকাংশ সময় কেটেছে ঢাকায়। বাবা ছিলেন সরকারি কর্মকর্তা, চাকরির সুবাদে পোস্টিং হত দেশের নানা প্রান্তে। সন্তানদের সুশিক্ষিত করার প্রয়াসে তার মা তাই ঢাকাতেই থেকে যান। সেসময় তাদের ঢাকার বাসায় পড়াশোনার উদ্দেশ্যে সবসময়ই আত্মীয়-স্বজন কেউ না কেউ অবস্থান করতেন। এতে করে পরিবারের অন্যান্য সদস্য ছাড়াও তার চাচাতো-মামাতো ভাইবোনদের নিয়ে একসাথে থাকার সুযোগ হয়, যা তার মধ্যে পরিবর্তিত নানান পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়ার শিক্ষার পাশাপাশি অন্যের প্রতি যত্নশীল এবং দায়িত্বশীল হওয়ার মতো গুণাবলীরও বিকাশ ঘটায়। এই দিকটিই তাকে পরবর্তী সময়ে তার পেশাগত জীবনে অন্যদের মতামতকে সম্মান করতে, তাদের চিন্তাভাবনা অনুধাবন করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

সেন্ট যোসেফ উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং ঢাকা কলেজ থেকে এইচএসসি শেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (আইবিএ)-এর বিবিএ প্রথম ব্যাচ থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেন শেহ্‌জাদ মুনীম। পড়াশোনা শেষে ১৯৯৭ সালে বিএটি বাংলাদেশের সেলস্ অ্যান্ড মার্কেটিং বিভাগে টেরিটরি অফিসার হিসেবে যোগ দেন তিনি। টেরিটরি অফিসার হতে দুই দশকেরও কম সময়ে প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং ডিরেক্টর হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের এই যাত্রায় শেহ্‌জাদ মুনীম শুধুমাত্র নিজের মেধা ও কর্মদক্ষতার প্রমাণই দেননি, বরং এরই সাথে অগণিত তরুণকে দেখিয়েছেন ক্যারিয়ারে এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন। ২০১৩ সালে বিএটি বাংলাদেশের ম্যানেজিং ডিরেক্টর হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হন শেহ্‌জাদ মুনীম। 

নেতৃত্ব অর্থ কেবলমাত্র তত্ত্বাবধায়কের দায়িত্ব পালন নয়। একজন নেতাকে অবশ্যই এমন একটি সহজাত পরিবেশ তৈরি করতে হয় যেখানে দলের সকলে একে অন্যের থেকে শিক্ষা নিতে পারে এবং একত্রে কাজ করতে পারে। নিজ সাক্ষাৎকারে, শেহ্‌জাদ মুনীম তার পেশাদারী জীবনের শুরুর দিকের একটি গল্প আমাদের শোনান, যা থেকে বোঝা যায় কর্মক্ষেত্রে সমষ্টিগত শিক্ষা বা কালেকটিভ লার্নিং-কে তিনি কতটুকু গুরুত্ব দিয়ে থাকেন। “আমি তখন টেরিটরি অফিসার হিসেবে জয়েন করেছি। প্রায় দুই সপ্তাহ পরেই আমার বস আমাকে স্থুলকায় একটি ম্যানুয়াল বুক দিয়ে বললেন, ‘এটা হচ্ছে সেলস্ অ্যান্ড মার্কেটিং বেসিকস্-এর ট্রেনিং ম্যানুয়াল’ . . . তিনি আমাকে ম্যানুয়াল বুকটি পড়ে নিয়ে সেলস ডিস্ট্রিবিউটরদের ট্রেনিং সেশন তৈরি করতে বললেন . . . যেদিন ট্রেনিং, সেদিন গিয়ে আমি দেখলাম আমার সামনে বসা প্রায় ৩০ জন মানুষ, এবং বয়সে তারা সবাই আমার থেকে বড় . . . অভিজ্ঞতার দিক থেকে কেউই ৫ বছরের নিচে নেই . . . আমি ভাবতে লাগলাম, ‘আমি আমার ২ সপ্তাহের এক্সপেরিয়েন্স থেকে তাদের কি শেখাবো?’ . . . তো, আমি সাথে সাথেই আমার অ্যাপ্রোচে পরিবর্তন আনলাম, এবং পরবর্তীতে বহু বছর আমি সে পন্থাতেই কাজ করে গিয়েছি . . . আমি তাদের বললাম যে আমরা আজ এখানে একসাথে শিখতে এসেছি। আমি বললাম, ‘এই বইয়ের মধ্যে পৃথিবীর বেস্ট প্র্যাকটিসগুলো আছে, অনেক উদাহরণ আছে। আপনারা আমাকে হেল্প করুন এটা জানিয়ে যে কোনটা বাংলাদেশের ক্ষেত্রে চলতে পারে। তারপরে আমরা একসাথে মিলে সেই পরিকল্পনার নকশা করবো যেটা আমাদের জন্য প্রযোজ্য হয়,’” বলেন শেহ্‌জাদ মুনীম।

একজন ক্রিকেট ভক্ত হিসেবে তিনি বিশ্বাস করেন, একটি ক্রিকেট দলের অধিনায়কের মতো, একটি প্রতিষ্ঠানের নেতাকেও অবশ্যই তার দলের সদস্যদের সক্ষমতা, শক্তিমত্তা এবং সীমাবদ্ধতাগুলিকে চিহ্নিত করতে জানতে হবে এবং তাদের অনুপ্রাণিত করতে হবে যাতে তারা তাদের কর্মদক্ষতাকে কাজে লাগাতে পারে এবং সাফল্যের নতুন উচ্চতায় পৌঁছাতে পারে।

ভালো সুযোগ ও আর্থিক সুবিধার আশায় এখনকার তরুণ মেধাদের মাঝে ঘনঘন চাকরি বদল করার প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। একটি প্রতিষ্ঠানের সাথেই সম্পূর্ণ কর্মজীবন কাটিয়ে দেয়া, শেহ্‌জাদ মুনীমের কাছে এ বিষয়ে মতামত জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, “ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে নতুনদের অবশ্যই ‘লার্ন-টু-আর্ন’ অর্থাৎ নিজের আত্ম-বিকাশের উপর জোর দিতে জানতে হবে। যখন আমি চাকরিজীবন শুরু করি, আমি শেখার জন্য প্রতিষ্ঠানে জয়েন করি। এখানে কত টাকা পেলাম, ১০ টাকা বেশি পেলাম নাকি ২০ টাকা বেশি পেলাম নাকি কয়েক হাজার বেশি পেলাম সেটা আমার কাছে মুখ্য ছিল না। বরং আমি শিখতে পারছি কিনা, আমি আমার মেধার বিকাশ করাতে পারছি কিনা সেটাই গুরুত্বপূর্ণ। এবং একটি প্রতিষ্ঠান যতক্ষণ পর্যন্ত  সে সুযোগটা আমাকে দিবে ততক্ষণ পর্যন্ত আমার সে প্রতিষ্ঠানের প্রতি লয়্যাল থাকাটাই ভালো . . . তাছাড়া, একটি নতুন প্রতিষ্ঠানে গিয়ে কিন্তু আমাকে আমার ক্রেডিবিলিটি তৈরি করতে হবে . . . কিন্তু আপনার বর্তমান প্রতিষ্ঠানে আপনি সেই ক্রেডিবিলিটি আপনার কাজের মাধ্যমে আগেই তৈরি করেছেন। সুতরাং, আপনার কাছে নতুন চ্যালেঞ্জ, বড় অ্যাসাইনমেন্ট নিয়ে ভরসা করার সু্যোগ বেশি। তবে সেরকম নতুন কাজের সু্যোগ যদি না দেয়া হয় তবে অন্য কোথাও যাওয়ার কথা চিন্তা করা যেতে পারে।”

প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা বিকাশের সু্যোগের বিবেচনায় নিউজিল্যান্ডে ব্র্যান্ড ম্যানেজারের পদে দায়িত্ব গ্রহণকে নিজ কর্মজীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অভিজ্ঞতা হিসেবে উল্লেখ করেন শেহ্জাদ মুনীম। বিএটি-এর হয়ে বিশ্বের নানা প্রান্তে বিভিন্ন মার্কেটে কাজের অভিজ্ঞতার ব্যাপারে শেহ্‌জাদ মুনীম বলেন, “বাংলাদেশ থেকে নিউজিল্যান্ডে যখন আমার পোস্টিং হয়, আমার মনে হয়েছিল এখানে আমি নিজের শেখার জন্য অনেক সুযোগ পাবো . . .  মাথায় এটাই ঘুরছিলো যে, অনেক নতুন কিছু জানতে পারবো, শিখতে পারবো . . . কিন্তু মাস তিনেকের ভেতর বুঝতে পারলাম, শেখার আছে কিছু, দেবারও আছে অনেক কিছু। কারণ, আমরা বাংলাদেশে যেভাবে কাজ করি, অনেকক্ষেত্রেই আমরা নিউজিল্যান্ডের থেকে অনেকটাই এগিয়ে আছি।” শেহ্‌জাদ মুনীমের মতে নিউজিল্যান্ডের মত উন্নত দেশের কর্মসংস্কৃতি থেকে অনেক কিছুই শেখার আছে। কিন্তু এই শিক্ষাগুলোকে আরও দৃঢ় করার ক্ষেত্রে একজন ব্যক্তিকে অবশ্যই নিজ সংস্কৃতির প্রতি লয়্যাল  থাকতে হবে, যাতে সে তার স্বকীয়তা বজায় করতে পারে।

শেহ্‌জাদ মুনীম বরাবরই প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে ডাইভার্সিটি এবং ইনক্লুশনের মতো বিষয় নিশ্চিতকরণে কাজ করে গিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “ডাইভার্সিটি এবং ইনক্লুশন প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের জন্যই খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন মতের মানুষ থাকবে। তাদেরকে তাদের ভয়েসটা দিতে পারতে হবে। তাদেরকে বলতে দিতে হবে তাদের চাহিদাগুলো নিয়ে, তাদের চিন্তা সম্পর্কে, কোনটা তাদের ভালো মনে হচ্ছে বা কোনটা খারাপ ইত্যাদি। এ ব্যাপারটি অনেকটা ঘরের জানালা খুলে দেয়ার মতো। যতক্ষণ পর্যন্ত জানালা খোলা থাকবে, ঘরে ফ্রেশ এয়ার ঢুকবে। জানালা বন্ধ হয়ে গেলে কিন্তু ঘরটা গুমোট হয়ে যাবে, এবং সেই গুমোট পরিস্থিতিতে কোন জিনিসের উন্নতি হয় না। সুতরাং জানালাটা খোলা রাখা খুব জরুরি।”

বিএটি বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দেওয়ার পাশাপাশি ফরেন ইনভেস্টরস’ চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফআইসিসিআই)-এর প্রেসিডেন্ট হিসেবে দুই বছর মেয়াদের দায়িত্ব পালন করেন শেহ্জাদ মুনীম। এই দায়িত্ব সম্পর্কে বলতে গিয়ে তিনি ক্রিকেটের উপমা টেনে বলেন, “আইবিএ ক্রিকেট টিমে যারা আমার অধিনায়কত্বে খেলত তারা কেউ কিন্ত আমাকে রিপোর্ট করতো না। সবাই আমারই মতন ছাত্র। অধিনায়ক হিসেবে আমার দায়িত্ব ছিল দলের সকলকে একটি লক্ষ্য অর্জনে একত্র করা। এফআইসিসিআই-তে আমাদের মূলমন্ত্র ঠিক তাই ছিল। দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সিইও মিলে একসাথে একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জনে কাজ করে যাওয়া। আমি প্রেসিডেন্ট হতে পারি, কিন্তু এখানে তো সকলেই বড় বড় প্রতিষ্ঠানকে রিপ্রেজেন্ট করছেন। মূলচিন্তাটা একই- যে লক্ষ্য অর্জনে আমরা একসাথে জড়ো হয়েছি।” এফআইসিসিআই-এর উদ্দেশ্য সম্পর্কে তিনি জানান, এখানে সকল প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ কর্মকর্তারা একসাথে কাজ করছেন বাংলাদেশের ব্যবসায়িক পরিবেশের উন্নতি এবং নতুন ব্যবসার জন্য একটি ভালো ইকোসিস্টেম তৈরির প্রয়াস নিয়ে।

একদিকে বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানে শীর্ষ পদে বাংলাদেশিদের সংখ্যা বেড়েছে, অন্যদিকে বহুসংখ্যক মেধা বিদেশ পাড়ি জমানোর ফলে, আমাদের দেশে মেধাসংকটের সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে। এই ‘ব্রেইন ড্রেইন’ সমস্যা প্রসঙ্গে শেহ্জাদ মুনীম বলেন, “যে কোন প্রতিষ্ঠান বা যে কোন দেশের ক্ষেত্রে সবচাইতে বড় অ্যাসেট হচ্ছে মেধা। মেধা না থাকলে কিন্তু আস্তে আস্তে নদী শুকিয়ে যাওয়ার মতন অবস্থা হবে . . . প্রতিষ্ঠান কর্তৃক মেধাকে আকৃষ্ট করলেই চলবেনা। পর্যাপ্ত ট্রেনিং-এর মাধ্যমে মেধা বিকাশের সুযোগ দিতে হবে। এবং, এরই সাথে মেধাকে তার যোগ্যতা অনুযায়ী পারিশ্রমিক দিতে হবে।” এছাড়াও, জনশক্তি উন্নয়ন বিষয়ে বিশদ আলোচনায় তিনি বলেন, “আপনি যদি লক্ষ্য স্থির করেন, সব রকম উপকরণ দিয়ে থাকেন, পর্যাপ্ত ট্রেনিং দেন এবং তাদেরকে উৎসাহিত করেন, তাহলে কিন্তু আমাদের লোকেরা পারে, আমরা পারি . . . শিক্ষার ক্ষেত্রে আমাদেরকে টেকনিক্যাল ট্রেনিং-এর বিষয়ে সবাইকে উৎসাহিত করতে হবে। এ খাতে আমাদের কিছু ‘হিরো’ তৈরি করতে হবে। ভোকেশনাল কোর্স করে সফল ব্যক্তিদের গল্প সবাইকে জানাতে হবে যাতে অন্যরাও উৎসাহ পায়।”

টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে দেশের অর্থনীতিতে বেসরকারি খাতের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে বলে মনে করেন শেহ্‌জাদ মুনীম। বিশেষ করে প্রতিভা বিকাশ, কাজের সুযোগ তৈরি এবং প্রবৃদ্ধির প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো বেসরকারি খাতের উদ্যোগ ছাড়া বাস্তবায়ন করা অনেকটাই চ্যালেঞ্জিং বলে তিনি মনে করেন। “একসাথে কাজ করার জন্য যে মানসিকতা দরকার সেটি আমার কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ। তাহলেই কিন্তু একটি বড় প্রতিষ্ঠান তার নিজস্ব ক্যাপাসিটি অনুযায়ী বিকশিত হতে পারে। এক্ষেত্রে আমি সবসময় বলি, জানালা খোলা রেখে ঘরে ট্যালেন্ট আনতে পারতে হবে। তাহলেই ইনোভেশনের ক্ষেত্র তৈরি হবে, নতুন জিনিস তৈরি হবে।”

শেহ্‌জাদ মুনীম মনে করেন, এই মুহূর্তে বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে দরকারি হচ্ছে ইমেজ বিল্ডিং। বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার জন্য প্রয়োজন আন্তর্জাতিকভাবে একটা ব্র্যান্ড ক্যাম্পেইন। তার মতে, সারা বিশ্বের সকলকে বর্তমান সময়ের পরিবর্তিত বাংলাদেশের গল্প, আমাদের জাতির সাফল্যের সকল কাহিনী জানানো প্রয়োজন।

সাক্ষাৎকারের শেষ পর্যায়ে শেহ্‌জাদ মুনীম বিশ্বায়নকে দুহাতে বরণ করে নেয়ার কথা বলেন। স্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে দেশের বাইরে ব্যবসার প্রসারে সুযোগ করে দেয়ার নেপথ্যে সরকারের ভূমিকা নিয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আমাদের বেশ কিছু ইউনিকর্ন প্রতিষ্ঠান আছে যাদেরকে সুযোগ দিতে হবে যাতে তারা সফল হয়। আমি খুব আশান্বিত হচ্ছি যে সরকার এখন এই বড় বড় সাকসেসফুল স্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে দেশের বাইরেও বিকশিত হওয়ার সুযোগ করে দিচ্ছেন। এ প্রতিষ্ঠানগুলো কিন্তু বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশের পতাকা বহন করছে। এই প্রতিষ্ঠানগুলো যত দেশের বাইরে বিস্তার করবে, দেশের জন্য ততই ভালো।”

প্রেরণা ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে প্রেরণার কথা’র অংশ হিসেবে সাক্ষাৎকারটি গ্রহণ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএর অধ্যাপক ড. মেলিতা মেহজাবিন। প্রেরণার কথা’র পুরো পর্বটি দেখা যাবে প্রেরণা ফাউন্ডেশনের ইউটিউব চ্যানেলেঃ https://youtu.be/02ifohrY0hc

আরও পড়ুন

×