ঢাকা রবিবার, ০৬ জুলাই ২০২৫

আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস আজ

আবারও সাবেক আমলানির্ভর মানবাধিকার কমিশন

আবারও সাবেক আমলানির্ভর মানবাধিকার কমিশন

সমকাল প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৯ ডিসেম্বর ২০২২ | ১২:০০ | আপডেট: ০৯ ডিসেম্বর ২০২২ | ১৭:৩৫

দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্যেই ফের একজন সাবেক আমলাকে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান করায় হতাশ মানবাধিকারকর্মীরা। নতুন নিয়োগ পাওয়া একজন সদস্যও সাবেক আমলা। মানবাধিকারকর্মীরা বলছেন, কমিশনের চেয়ারম্যান ও সদস্য নিয়োগে বিদ্যমান আইন অনুসরণ করা হচ্ছে না। অবসরপ্রাপ্ত আমলাদের পুনর্বাসন কেন্দ্রে পরিণত করা হয়েছে প্রতিষ্ঠানটিকে। ফলে মানবাধিকার রক্ষায় কার্যত কোনো ভূমিকা রাখতে পারছে না প্রতিষ্ঠানটি।

গত আড়াই মাস অভিভাবকহীন থাকার পর বৃহস্পতিবার মানবাধিকার কমিশনের নতুন চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় কমিশনের সার্বক্ষণিক সদস্য সাবেক স্বরাষ্ট্র সচিব ড. কামালউদ্দিন আহমেদকে। একই সঙ্গে কমিশনের সার্বক্ষণিক সদস্য এবং অবৈতনিক সদস্যদের নিয়োগ দিয়েছে সরকার। এর মধ্যে সার্বক্ষণিক সদস্য হয়েছেন সাবেক সচিব সেলিম রেজা। তবে বাকি চার সদস্য অন্যান্য পেশার। আইন অনুযায়ী, কমিশনে চেয়ারম্যান ছাড়া অন্য সদস্যদের ভূমিকা গৌণ।

এর আগেও দুইবার সাবেক আমলাকে কমিশনের চেয়ারম্যান করা হয়। তবে শুধু একবার নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের একজন অধ্যাপককে।

জাতীয় মানবাধিকার কমিশন আইনের ৬.২ ধারায় বলা হয়েছে, 'আইন বা বিচারকার্য, মানবাধিকার, শিক্ষা, সমাজসেবা বা মানবকল্যাণে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখিয়াছেন এমন ব্যক্তিদের মধ্য হইতে চেয়ারম্যান ও সদস্যগণ, এই ধারার বিধান সাপেক্ষে, নিযুক্ত হইবেন।'

এ প্রসঙ্গে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক মিজানুর রহমান সমকালকে বলেন, কমিশনে বারবারই আমলা নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে, এটা দুর্ভাগ্যজনক। কমিশন আমলানির্ভরতা থেকে বের হতে পারছে না। নাগরিক ও সুশীল সমাজের দাবি উপেক্ষা করে আমলাদের নিয়োগ দেওয়া কোনোভাবেই সঠিক হয়নি।

বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্টের (ব্লাস্ট) চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট জেড আই খান পান্না সমকালকে বলেন, জাতীয় মানবাধিকার কমিশন গঠনের পর গত ১৩ বছর ধরে মানবাধিকার পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটেছে। কেউ আজ নিরাপদ নয়। চতুর্দিক থেকে অবক্ষয় হচ্ছে।

কমিশনে অন্তহীন সমস্যা :জনগণ ও সরকারের মধ্যে 'সেতুবন্ধন' হিসেবে কাজ করার অঙ্গীকার থাকলেও ১৩ বছরেও তা পারছে না সংবিধিবদ্ধ স্বাধীন সংস্থা জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। নানা কৌশলে হাত-পা বেঁধে রাখা হয়েছে এই প্রতিষ্ঠানকে। অভিযোগের তদন্ত করার অনুমতি থাকলেও বিবৃতি-চিঠি দেওয়া আর সুপারিশ করা ছাড়া কোনো ক্ষমতা নেই কমিশনের। দুর্বল আইন ও আমলানির্ভর হওয়ায় গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারছে না কমিশন। দাপ্তরিক কাজ করতে জনবল ও সহায়ক শক্তি না থাকায় কমিশন যেন 'ঠুঁটো জগন্নাথ'। আর্থিক ও প্রশাসনিক কাজের জন্য সরকারের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে হচ্ছে কমিশনকে।

এরকম পরিস্থিতির মধ্যেই মধ্যে আজ শনিবার পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস। 'মানব মর্যাদা স্বাধীনতা আর ন্যায়পরায়ণতায় দাঁড়াব সবাই মানবাধিকার সুরক্ষায়'- এ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে আজ দেশে পালিত হচ্ছে দিবসটি। তবে পর্যবেক্ষকরা বলছেন, দেশে প্রতিদিনই বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম, খুন, ধর্ষণ, নির্যাতনসহ নানা ধরনের অপরাধ অহরহ সংঘটিত হচ্ছে। এসব মানবাধিকার লঙ্ঘনের মতো ঘটনা দেশে-বিদেশে আলোচিত হচ্ছে। এ ছাড়া ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনসহ নানা কারণে বিভিন্ন পেশাজীবী, অধিকারকর্মী, বিরোধী দল ও সমালোচকরা নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। দিনটি পালন উপলক্ষে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও মানবাধিকার সংগঠন নানা কর্মসূচির আয়োজন করেছে।

আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আশক) নির্বাহী পরিচালক নুর খান বলেন, দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি অত্যন্ত 'বিভীষিকাময়'। এমন সময় আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস পালিত হচ্ছে, যখন জনগণ সমাবেশ করার অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। মানুষের জীবনহানির মতো ঘটনা ঘটছে। তিনি বলেন, 'ক্রসফায়ার ও গুমের' ঘটনায় আমরা শঙ্কিত। এটা বন্ধে একটি নিরপেক্ষ তদন্ত কমিশন গঠন করতে হবে।

হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট অ্যাডভোকেট মনজিল মোরশেদ বলেন, রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও আইনের শাসনের ওপর নির্ভর করে দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি কেমন। আমাদের আইনের শাসন যেভাবে থাকার কথা সেভাবে নেই।

তবে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সমকালকে বলেন, দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও মানবাধিকার উন্নয়নে বর্তমান সরকার সবচেয়ে বেশি কাজ করেছে। দেশের বর্তমান মানবাধিকার পরিস্থিতি অনেক ভালো।

আরও পড়ুন

×