ডিজিটাল বাংলাদেশ দিবস আজ
ডিজিটাল জীবনমানে দেশ এখনও বহু পিছিয়ে

প্রতীকী ছবি
হাসনাইন ইমতিয়াজ
প্রকাশ: ১১ ডিসেম্বর ২০২২ | ১২:০০ | আপডেট: ১১ ডিসেম্বর ২০২২ | ১৪:৪৪
গত এক যুগে দেশে ইন্টারনেটের ব্যবহার বেড়েছে। অনলাইনে অনেক সেবা মিলছে। ভার্চুয়াল লেনদেন বেড়েছে। অনলাইন প্ল্যাটফর্মে সভা-সেমিনার অনুষ্ঠিত হচ্ছে। কিন্তু মানসম্মত ডিজিটাল সেবা মিলছে না। সরকারি বিভিন্ন সেবা অনলাইনে মিললেও হয়রানি কমেনি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অবকাঠামো গড়ে উঠলেও ডিজিটাল জীবনমানে এখনও বহু পিছিয়ে বাংলাদেশ। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার জরিপেও এমনটি বলা হচ্ছে। সরকার অবশ্য এখন ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে স্মার্ট বাংলাদেশের পথে যাত্রার কথা বলছে।
২০০৮ সালে নির্বাচনী ইশতেহারে আওয়ামী লীগ ২০২১ সালের মধ্যেই ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনের ঘোষণা দেয়। ২০১৭ সালের ২৭ নভেম্বর সরকার ১২ ডিসেম্বরকে ডিজিটাল বাংলাদেশ দিবস হিসেবে পালনের ঘোষণা দেয়। এবার পালিত হচ্ছে ষষ্ঠ ডিজিটাল বাংলাদেশ দিবস।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের তথ্যমতে, গত এক যুগে দেশের ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত সম্প্র্রসারণ করা হয়েছে অপটিক্যাল ফাইবার। সরকারের দাবি, ইউনিয়ন পর্যায়ের ডিজিটাল সেন্টার ও ডিজিটাল ডাকঘরের মাধ্যমে ৬০০ ধরনের ডিজিটাল সেবা পাচ্ছে সাধারণ মানুষ। মোবাইল সিম নিবন্ধন হচ্ছে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে। ই-পাসপোর্ট চালু হয়েছে। ২০১৮ সালে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করা হয়েছে। সরকারি ওয়েবপোর্টাল তথ্য বাতায়নে যুক্ত আছে ৪৬ হাজারেরও বেশি সরকারি অফিস। ৪৬টি হাইটেক পার্ক ও ইনকিউবেশন সেন্টার গড়ে উঠেছে। দেশে ৬ লাখ ফ্রিল্যান্সার রয়েছে বলে দাবি তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের। বছরে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে রপ্তানি আয় দাঁড়িয়েছে ১ দশমিক ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০০৮ সালে দেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ছিল মাত্র ৮ লাখ। গত অক্টোবরে এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২ কোটি ৬১ লাখে। মোবাইল ব্যাংকিং, অনলাইন ব্যাংকিং, রাইড শেয়ারিং, ই-কমার্স খাত সম্প্রসারিত হয়েছে। স্কুল-কলেজে ভর্তি কার্যক্রম অনলাইনে হচ্ছে।
এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অবকাঠামো খাতে অগ্রগতি হলেও ডিজিটাল উদ্যোগের পরিপূরক সংস্কৃতির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ পিছিয়ে আছে। নেদারল্যান্ডসভিত্তিক সাইবার নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠান সার্ফশার্কের করা চলতি বছরের ডিজিটাল জীবনমান সূচকে বিশ্বের ১১৭টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৭৬তম। প্রতিবেশী ভারতের অবস্থান ৫৯তম। এশিয়ার ৩৪ দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ২৩তম।
বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) জ্যেষ্ঠ গবেষণা পরিচালক ড. মঞ্জুর হোসেন বলেন, ডিজিটাল অবকাঠামোগত দিক দিয়ে গত এক যুগে বাংলাদেশ অনেক এগিয়েছে। কিন্তু একটা বড় অংশের মানুষের ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহারের সক্ষমতা নেই। ডিজিটাল সেবার অধিকাংশ উদ্যোগ জনগণ সম্পৃক্ত নয়। ডিজিটাল অবকাঠামোগুলো ব্যবহারের মতো কনটেন্ট ও জনশক্তি গড়ে ওঠেনি এখনও।
একই মতপ্রকাশ করে তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ সুমন আহমেদ সাব্বির বলেন, পাসপোর্ট ফরম অনলাইনে পূরণ করে আবার পাসপোর্ট অফিসে যেতে হচ্ছে, লাইন ধরতে হচ্ছে, দালালের পাল্লায় পড়তে হচ্ছে। তাহলে ডিজিটাল হলো কোথায়?
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার সমকালকে বলেন, দেশের নামেই ডিজিটালকে ব্র্যান্ডিং শুধু বাংলাদেশই করেছে। সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ পেরিয়ে এখন স্মার্ট বাংলাদেশের দিকে এগোচ্ছে।