ঢাকা রবিবার, ০৬ জুলাই ২০২৫

যানজট কমাবে, পরিবেশও বাঁচাবে

যানজট কমাবে, পরিবেশও বাঁচাবে

মেট্রোরেল চালুর পর কমে যাবে রাজধানী ঢাকার যানজট। আগারগাঁও থেকে তোলা ছবি - মাহবুব হোসেন নবীন

সমকাল প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৭ ডিসেম্বর ২০২২ | ১৮:০০ | আপডেট: ২৮ ডিসেম্বর ২০২২ | ০৫:২২

মেট্রোরেল চলবে নির্বিঘ্নে, বিনা বাধায়। সড়কের গাড়ির মতো কোথাও সিগন্যালে পড়বে না। আবার রেলের মতো ক্রসিংয়েও আটকাবে না। ফলে ঘড়ি ধরা সময়ে যাতায়াত করা যাবে মেট্রোরেলে। ফলে কমবে যানজট। মেট্রোরেল চলবে বিদ্যুৎ শক্তিতে। ফলে পরিবেশ দূষণও হবে না।

বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) তথ্যমতে, বছরে দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ২ দশমিক ৫ শতাংশ ক্ষতি করছে যানজট। টাকার অঙ্কে তা ৮৭ হাজার কোটি টাকা। দিয়াবাড়ী থেকে কমলাপুর পর্যন্ত নির্মাণাধীন এমআরটি-৬ লাইন যানজটের ক্ষতি কমাবে ৯ শতাংশ।

মেট্রোরেলের নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা সরকারি কোম্পানি ডিএমটিসিএলের তথ্য অনুযায়ী, দিয়াবাড়ী থেকে কমলাপুর পর্যন্ত ২১ দশমিক ২৬ কিলোমিটার পথ মেট্রোরেল পাড়ি দেবে ৪০ মিনিটে। বিশ্বব্যাংকের হিসাবে ঢাকায় দিনের বেলায় গাড়ির গতি এখন ঘণ্টায় পাঁচ কিলোমিটার। অর্থাৎ দিয়াবাড়ী থেকে কমলাপুর যেতে সময় লাগে চার ঘণ্টার বেশি। মেট্রোরেলে সময় সাশ্রয় হবে ৮০ শতাংশ। পুরো লাইন চালু হলে যানজটের ক্ষতি কমবে প্রায় ২০ শতাংশ। ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এম, এ, এন, ছিদ্দিক সম্প্রতি সমকালকে বলেন, পুরোপুরি বাণিজ্যিক অপারেশনের পর উত্তরা নর্থ (দিয়াবাড়ী) থেকে কমলাপুর যেতে ৩৮ মিনিট সময় লাগবে।

ঢাকার যানজট নিরসনে ২০০৫ সালে প্রণীত হয় কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনা (এসটিপি)। এই পরিকল্পনায় রাজধানীর যানজট নিরসনে তিনটি মেট্রোরেল এবং তিনটি বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) নির্মাণের সুপারিশ করা হয় ২০২৪ সালের মধ্যে। কিন্তু তা মানা হয়নি। নির্মাণ করা হয় প্রাইভেটকারকে উৎসাহিত করা ফ্লাইওভার। এতে যানজট আরও বেড়েছে। এসটিপি সংশোধন করে ২০১৫ সালে প্রণীত হয় আরএসটিপি। এ পরিকল্পনায় রাজধানীতে ছয়টি মেট্রোরেল লাইন এবং দুটি বিআরটি নির্মাণের সুপারিশ করা হয়েছে ২০৩৫ সালের মধ্যে।

আরএসটিপির তথ্য অনুযায়ী, ২০১৬ সালে ঢাকায় দৈনিক গাড়ির ট্রিপের সংখ্যা ছিল তিন কোটি। ২০২৫ সালে তা বেড়ে হবে চার কোটি। ২০৩৫ সালে হবে পাঁচ কোটি। ছয়টি এমআরটি লাইন চালুর পর ১৭ শতাংশ ট্রিপ সড়ক থেকে যাবে মেট্রোরেলে। এতে যানজট কমবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতর দিয়ে যাবে মেট্রোরেল। প্রকল্পের শুরুর দিকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভেতর দিয়ে মেট্রোরেল নেওয়ার বিরোধিতা করা হয়। তবে কর্তৃপক্ষ বলেছে, সড়কের মাঝ বরাবর (মিডিয়ান) মাটির ১৩ মিটার ওপর দিয়ে যাওয়া মেট্রোরেলে কম্পন নিয়ন্ত্রণে রয়েছে ফ্লোটিং স্ল্যাব ট্র্যাক। মেট্রোরেলের লাইনের নিচে রয়েছে ম্যাস স্প্রিং সিস্টেম (এমএসএস)। ফলে আশপাশের ভবনে মেট্রোরেলের চলাচলে কম্পন সৃষ্টি হবে না। গত বছর শুরু হওয়া মেট্রোরেলের পরীক্ষামূলক যাত্রাতেও তার প্রমাণ মিলেছে। মেট্রোরেলের পথে সংসদ ভবন, জাদুঘর, তিন নেতার মাজার, বর্ধমান হাউস, মোগল মসজিদ, ঢাকা গেটের মতো ঐতিহাসিক স্থাপনা রয়েছে। সেগুলোর ক্ষতি এড়াতেই বসানো হয়েছে ফ্লোটিং স্ল্যাব ট্র্যাক। মেট্রোরেলে শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণেও রয়েছে ব্যবস্থা। মেট্রোরেলের ভায়াডাক্টের (উড়াল পথ) দুই পাশে রয়েছে শব্দ প্রতিরোধক দেয়াল।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. শামসুল হক সমকালকে বলেছেন, মেট্রোরেলে যানজট ও দূষণ দুই-ই কমবে। আরও আগেই মেট্রোরেল নির্মাণ করা উচিত ছিল। কিন্তু ফ্লাইওভার করে মেট্রোরেলের সুযোগকে সংকুচিত করা হয়েছে।

আরও পড়ুন

×