উৎসবের আমেজে বিদ্যাদেবীর আরাধনা

উৎসবের আমেজে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) বিদ্যাদেবী সরস্বতীর আরাধনা চলছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থীসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা জড়ো হচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলের পূজা প্রাঙ্গণে।  

বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টায় হলের উপাসনালয়ে প্রতিমায় অঞ্জলি দেওয়ার মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে পূজার কার্যক্রম শুরু হয়। গত দুই বছরে করোনার কারণে ছোট পরিসরে আয়োজন করা হলেও এবার ঐতিহ্যবাহী রীতিতে পুরোনো আমেজে অনুষ্ঠিত হচ্ছে দেবী বন্দনা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ ও ইনস্টিটিউট জগন্নাথ হল প্রাঙ্গণজুড়ে বিভিন্ন আইডিয়া ও থিমভিত্তিক ৭৩টি মণ্ডপ তৈরি করা হয়েছে। জগন্নাথ হল উপাসনালয়ে কেন্দ্রীয়ভাবে আয়োজিত একটি পূজা ছাড়াও এই মহোৎসবের বিশেষ আকর্ষণ হিসেবে রয়েছে হলের পুকুরে চারুকলা অনুষদের তৈরি বড় একটি প্রতিমা।

পূজা উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হল ছাড়াও রোকেয়া হল, কবি সুফিয়া কামাল হল, শামসুন্নাহার হল, বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল, বাংলাদেশ কুয়েত-মৈত্রী হলকে সাজানো হয়েছে বর্ণিল সাজে। বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। আজকের দিনে বন্ধ আছে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রমও।

শামসুন নাহার হলে পূজামণ্ডপ পরিদর্শন করেন  উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান -সমকাল

জগন্নাথ হল প্রাঙ্গণে পূজা অর্চনার পাশাপাশি আনন্দে মেতে উঠেছেন দর্শনার্থীরা। শিশুদের খেলার জন্য আছে নানা আয়োজন। বিভাগের মণ্ডপগুলোতে পুরোহিতরা বিভিন্ন ধরনের বাণী ভক্তদের নিয়ে একসঙ্গে পাঠ করছেন। বিভিন্ন বিভাগ ও হলের শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করছেন এতে। সব মিলিয়ে পূজাকে ঘিরে উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে জগন্নাথ হল প্রাঙ্গণে। পরিবার-পরিজন নিয়েও অনেকে এসেছেন পূজা দেখতে।

জগন্নাথ হলের প্রাধ্যক্ষ ও পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ড. মিহির লাল সাহা বলেন, করোনার পর এবারই প্রথম উৎসাহ-উদ্দীপনা ও পুরোনো আমেজে জগন্নাথ হলে সরস্বতী পূজা পালন করা হচ্ছে। সুন্দর পরিবেশে পূজা উদযাপন চলছে। বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রশাসন সর্বাত্মক সহযোগিতা করছে আমাদের। সবাই উপভোগ করছে।

তিনি আরও বলেন, পুলিশ প্রশাসন, প্রক্টরিয়াল টিম ও শিক্ষার্থীদের সহযোগিতায় আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করেছি। যাতে একটা সুন্দর পূজা উপহার দেওয়া যায়। এছাড়া সার্বক্ষণিক ৭০টি সিসিটিভি ক্যামেরা রয়েছে। পুলিশ প্রশাসন আমাদের সর্বোচ্চ সহযোগিতা করছে।

একই সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান সরস্বতী পূজা উৎসবে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল, রোকেয়া হল, শামসুন নাহার হল, বাংলাদেশ কুয়েত মৈত্রী হল এবং কবি সুফিয়া কামাল হলের পূজামণ্ডপ পরিদর্শন করেন। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রবীর কুমার সরকার, স্ব স্ব হলের প্রাধ্যক্ষসহ আবাসিক শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অতিথিবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, সরস্বতী বিদ্যা, জ্ঞান ও সুরের দেবী। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব হচ্ছে সরস্বতী পূজা। বিদ্যা দেবীর আরাধনার মাধ্যমে অকল্যাণ ও অশুভ শক্তির বিনাশ হবে এবং মানুষের মাঝে সৃজনশীলতার বিকাশ ঘটবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যাক্ত করেন। অসাম্প্রদায়িক ও মানবিক মূল্যবোধ ধারণ করে সকল ধর্ম ও মতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে সত্য, সুন্দর, সৌহার্দ্য, সম্প্রীতি ও জ্ঞানের আলোয় আলোকিত হওয়ার জন্য উপাচার্য শিক্ষার্থীদের প্রতি আহ্বান জানান।