ঢাকা রবিবার, ০৬ জুলাই ২০২৫

টপ সয়েল কাটলে জেল খাটতে হবে

টপ সয়েল কাটলে জেল খাটতে হবে

ঈদ মৌসুমেও অলস সময় পার করছেন বগুড়ার দোকানিরা সমকাল

সমকাল প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৯ জুন ২০২৩ | ১৮:০০

কৃষি ও অন্যান্য ফসলি জমির টপ সয়েল (জমির মাটির ওপরের অংশ) কেটে অন্য কাজে লাগানো যাবে না। এমন উদ্যোগ নিলে দুই বছর জেল খাটতে হবে। এ ছাড়া ভূমি-সংক্রান্ত প্রতারণা, জালিয়াতি, অবৈধভাবে ভূমি দখল করলে, মিথ্যা তথ্য দিয়ে একজনের জমি আরেকজন দলিল করে নিলে বা এ-সংক্রান্ত কাজে কেউ সহযোগিতা করলে ২ থেকে ৭ বছরের জেল খাটতে হবে। এমন বিধান রেখে ‘ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন-২০২৩’-এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।

গতকাল সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে তাঁর কার্যালয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। পরে সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে বৈঠকে নেওয়া সিদ্ধান্তের কথা জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেন। তিনি বলেন, বিদ্যমান আইনে এ-সংক্রান্ত পদক্ষেপ নিতে গেলে যন্ত্রপাতি জব্দ করতে জটিলতা ছিল। প্রস্তাবিত এ আইনটি পাস হলে সেই সমস্যা থাকবে না। অন্যদিকে ভূমি মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্টরা জানান, ফসলি জমির ওপরের অংশ কেটে নিয়ে ইটখলা, সিরামিক কোম্পানিগুলো বিভিন্ন কাজে লাগাচ্ছে। এতে বার বার ফসল দেওয়া জমির উর্বরতা কমে যাচ্ছে। এমন অভিযোগ বাড়তে থাকায় নতুন আইনে এ বিষয়টি যুক্ত করা হয়েছে।

এছাড়াও মন্ত্রিসভার বৈঠকে অন্য তিনটি আইনের খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন এবং দুটি নীতিমালার অনুমোদন পেয়েছে। এদিকে ঈদুল আজহা উপলক্ষে এক দিনের (২৭ জুন) বাড়তি ছুটি মন্ত্রিসভায় অনুমোদন করা হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, দেশবাসী যাতে ঈদুল আজহা সুষ্ঠুভাবে উদযাপন করতে পারেন, সেজন্য প্রধানমন্ত্রী নির্বাহী আদেশে ছুটি অনুমোদন দিয়েছেন। সরকারের স্বাভাবিক ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ঈদুল আজহার ছুটি ছিল ২৮ জুন থেকে ১ জুলাই পর্যন্ত। এখন সেটি শুরু হবে ২৭ জুন থেকে।


ভূমি নিয়ে প্রতারণা-জালিয়াতিতে ৭ বছরের জেল

ভূমি নিয়ে প্রতারণা ও জালিয়াতিসহ বিভিন্ন বেআইনি কর্মকাণ্ডের জন্য সংশ্লিষ্ট অপরাধীদের সর্বোচ্চ সাত বছর ও সর্বনিম্ন দুই বছরের কারাদণ্ড ভোগের বিধান আসছে। ‘ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন’-এর খসড়া চূড়ান্ত হয়ে জাতীয় সংসদে পাস হলে এ দণ্ড কার্যকরে উদ্যোগ নেওয়া যাবে।

এ বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, খসড়া আইনে ভূমির কতগুলো অপরাধকে চিহ্নিত করা হয়েছে। সেসব অপরাধের জন্য শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে, যাতে করে নাগরিকরা নিজ-নিজ মালিকানাধীন ভূমির নিরবচ্ছিন্ন ভোগদখল প্রাপ্য অধিকার নিশ্চিত করতে পারেন।

প্রস্তাবিত আইনের বৈশিষ্ট্যগুলো তুলে ধরে মাহবুব হোসেন বলেন, ভূমি সম্পর্কিত বিরোধ আদালতের বাইরে সালিশি বৈঠকের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করার সুযোগ আইনে রাখা হয়েছে। তিনি জানান, অন্যের মালিকানাধীন ভূমি নিজের মালিকানাধীন ভূমি হিসেবে প্রকাশ করা, কোনো ভূমি সম্পর্কে ইচ্ছাকৃতভাবে তথ্য গোপন করে তা অন্য ব্যক্তির কাছে হস্তান্তর বা সমর্পণ, নিজ মালিকানাধীন ভূমির অতিরিক্ত ভূমি বা অন্যের মালিকানাধীন ভূমি জেনেশুনে অন্য ব্যক্তির কাছে হস্তান্তর বা সমর্পণ, কোনো ব্যক্তি অপর কোনো ব্যক্তি বলে ভান করে বা জ্ঞাতসারে এক ব্যক্তিকে অপর ব্যক্তিরূপে প্রতিস্থাপিত করে কিংবা কোনো ব্যক্তি প্রকৃতপক্ষে যে ব্যক্তি সেই ব্যক্তি থেকে ভিন্ন কোনো ব্যক্তি বলে পরিচয় দিয়ে সম্পত্তি হস্তান্তর বা সমর্পণ– এসব কাজ করলে সাত বছর কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।

প্রস্তাবিত আইনের খসড়ায় জালিয়াতি-সংক্রান্ত বিষয়ে বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তিকে সম্পত্তি পরিত্যাগ করতে বা চুক্তি সম্পাদন করতে বাধ্য কারা, প্রতারণা করা যেতে পারে এরকম মিথ্যা দলিল বা দলিলের অংশবিশেষ প্রস্তুত করা, কোনো দলিল সম্পাদিত হওয়ার পর আইনানুগ কর্তৃত্ব ছাড়া অসাধু বা প্রতারণামূলক পথে কর্তন করে বা অন্য কোনোভাবে তাঁর গুরুত্বপূর্ণ অংশ পরিবর্তন করা ইত্যাদির জন্য সর্বোচ্চ সাত বছর কারাদণ্ড হতে পারে। এসব অপরাধে সর্বনিম্ন দুই বছর কারাদণ্ড। এসব কাজে ভূমি অফিসের কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী অর্থাৎ সরকারি চাকুরে যুক্ত থাকলেও তাঁরা সমানভাবে আইনের আওতায় আসবেন। এছাড়া ভূমি অবৈধ দখল করলে সেটি দুই বছর, সরকারি স্বার্থযুক্ত এবং জনসাধারণের ব্যবহার্য ভূমি অবৈধভাবে ভরাট, শ্রেণি পরিবর্তন ইত্যাদি করলে দুই বছর কারাদণ্ড দেওয়ার বিধান আইনে রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে।
হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসায় শৃঙ্খলা

 ‘বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা শিক্ষা আইন, ২০২৩’-এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, বর্তমানে একটি হোমিওপ্যাথিক বোর্ড আছে। সেটি প্রতিস্থাপন করে একটি কাউন্সিল গঠন করা হবে। কাউন্সিল হোমিওপ্যাথিক সংক্রান্ত চিকিৎসা, সেবা, ওষুধের ব্যাপারে তদারকি করবে। হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা আনতে এ আইনের প্রস্তাব করা হয়েছে।

হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকরা নামের আগে ‘ডাক্তার’ লিখতে পারবেন কিনা, এ-সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, সেটি আইনের অধীনে গঠিত কাউন্সিল সিদ্ধান্ত নেবে।

নতুন বাজার খোঁজার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

মন্ত্রিসভায় ‘কৃষি ও খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প উন্নয়ন নীতিমালা-২০২৩’ অনুমোদন পেয়েছে। এ বিষয়ে সরকারপ্রধান কিছু নির্দেশনা দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব। তিনি জানান, কৃষিজাত পণ্য রপ্তানিতে নতুন নতুন বাজার খোঁজার নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এছাড়া অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কোঅপারেশনভুক্ত (ওআইসি) দেশগুলোতে যাতে আরও বেশি পণ্য রপ্তানি করা যায় সে ব্যাপারে নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি।

গতকালের মন্ত্রিসভায় ‘জাতীয় গ্রন্থাগার নীতি-২০২৩’, বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইনের খসড়া, লক্ষ্মীপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্বিবদ্যালয় আইনের খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়। এছাড়াও বাংলাদেশ ও সৌদি আরবের মধ্যে অপরাধ-সংক্রান্ত তথ্য আদান-প্রদানবিষয়ক চুক্তির খসড়া, বাংলাদেশ-ভুটানের মধ্যে ট্রাফিক ও ট্রানজিট সংক্রান্ত চুক্তির খসড়া, বিমসটেক সনদের খসড়া প্রস্তাবের অনুসমর্থন, বাংলাদেশ-কানাডার এয়ার ট্রান্সপোর্ট চুক্তির খসড়ার অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।

মন্ত্রিসভার বৈঠকের বাইরে গতকাল গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর হাতে পদ্মা সেতু নির্মাণে সরকারি ঋণ পরিশোধের জন্য তৃতীয় ও চতুর্থ কিস্তির ৩১৬ কোটি টাকার চেক তুলে দেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। একই সময়ে মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষের প্রথম কিস্তির ৫৫ কোটি টাকার চেক প্রধানমন্ত্রীর হাতে তুলে দেওয়া হয়।

আরও পড়ুন

×