আপন নিবাসে শুরু নতুন পথচলা

নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের আমানউল্লাহপুরে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর পেয়ে ৫০ পরিবারে উৎসবের আমেজ। বুধবারের ছবি - সমকাল
মাজহারুল ইসলাম রবিন, নোয়াখালী থেকে
প্রকাশ: ০৯ আগস্ট ২০২৩ | ১৮:০০ | আপডেট: ০৯ আগস্ট ২০২৩ | ২৩:৫৩
পাকা সড়কের পাশে বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠ। এরই মাঝে সারি সারি লাল টিনের ৫০টি ছোট বাড়ি। সড়ক থেকে ফসলি জমির পাশ দিয়ে ইটের রাস্তা ধরে প্রায় এক মিনিট হাঁটলে আশ্রয়ণ প্রকল্প। নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের আমানউল্লাহপুরে এই প্রকল্পে পুনর্বাসিত হয়েছে ৫০টি পরিবার। তাদের মাথা গোঁজার ঠাঁই ছিল না। যারা স্বপ্ন দেখত এক টুকরো ভিটের, তারা এখন জমিসহ পাকা ঘরের মালিক।
ঘর পাওয়া এসব মানুষ এখন স্বপ্ন দেখছে সামনে এগিয়ে যাওয়ার। সমাজে মাথা উঁচু করে চলার। সবার সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে নিজেকে জানান দেওয়ার। বুধবার আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর আওতায় দুই শতক জমিসহ একটি সেমিপাকা বাড়ি ২২ হাজার ১০১টি পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়। গণভবন থেকে তিন উপজেলার আশ্রয়ণ প্রকল্পের অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যোগ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বাড়ি বিতরণের ঘোষণা দেন। সেগুলোরই একটি হলো আমানউল্লাহপুর প্রকল্প। প্রধানমন্ত্রী একই সঙ্গে ১২টি জেলা ও ১২৩টি উপজেলাকে গৃহহীন-ভূমিহীনমুক্ত ঘোষণা করেন। এ সময় উপকারভোগী পরিবারগুলোর সঙ্গে কথা বলেন তিনি।
এদিন আমানউল্লাহপুর আশ্রয়ণ প্রকল্প এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, উদ্বোধন উপলক্ষে এলাকায় সাজ সাজ রব। ঘরগুলো সাজানো হয়েছে নীল-সাদা বেলুনে। ঘর পাওয়া পরিবারের সদস্যদের গায়ে নতুন পোশাক। সব মিলিয়ে এলাকাবাসীর মধ্যে উৎসবমুখর পরিবেশ। পুনর্বাসিতরা বলছেন, মাথা গোঁজার ঠাঁই মেলাকে তারা জীবনের সবচেয়ে বড় পরিবর্তন হিসেবে দেখছেন। তারা এখন স্বপ্ন দেখেন সন্তানদের শিক্ষিত করার। পরিশ্রম করে সচল করতে চান ভাগ্যের চাকা।
আশ্রয়ণ প্রকল্পে ২৮ নম্বর বাড়ির মালিক হাসিনা বেগম ও মো. রাজিব দম্পতি। হাতে পেয়েছেন জমি ও বাড়ির দলিল। হাসিনা বলেন, ‘আগে চন্দ্রগঞ্জ বেড়িবাঁধের পাশে সরকারি জায়গায় থাকতাম। আমার তিন সন্তান। দুইজন পড়াশোনা করে। আগে আমরা অনেক কষ্ট করে থাকতাম। কখনও ভাবিনি নিজের একটা বাড়ি হবে।’
প্রকল্পের ২৫ নম্বর বাড়ির মালিক অটোরিকশাচালক কালাম মিয়া বলেন, ‘আগে চন্দ্রগঞ্জ সেতুর নিচে সরকারি জায়গায় কোনো রকম একটা কুঁড়েঘর তুলে থাকতাম। আমার কোনো জায়গা জমি ছিল না। বৃষ্টি হলে বা কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ এলে পরিবার নিয়ে বিপদে পড়তে হতো।’
বেগমগঞ্জ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা ইয়াসির আরাফাত সমকালকে বলেন, এই প্রকল্পের জায়গা প্রায় দেড় কোটি টাকায় কেনা হয়েছে। এই লোকজন আগে রাস্তার পাশে সেতুর নিচে থাকতেন। তারা কখনও কল্পনা করেননি ঘর পাবেন। যারা ঘর পেয়েছেন তারা সব সুবিধা মিলিয়ে প্রায় ১০ লাখ টাকার মালিক। তাদের জন্য অনেক কিছু বাস্তবায়ন করা হয়েছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্যব্যবস্থাসহ নানা সুযোগ-সুবিধা তাদের হাতের নাগালেই।