ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

সড়কের একগুচ্ছ প্রকল্প প্রধানমন্ত্রীর হাতে

সড়কের একগুচ্ছ প্রকল্প প্রধানমন্ত্রীর হাতে

সমকাল প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৭ অক্টোবর ২০২৩ | ১৮:০০ | আপডেট: ১৮ অক্টোবর ২০২৩ | ১০:৪৬

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামীকাল বৃহস্পতিবার সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ের একগুচ্ছ প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন। উদ্বোধনের তালিকায় রয়েছে দেশের বিভিন্ন এলাকায় সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর (সওজ) নির্মিত ১৫০টি সেতু, ১৪টি ওভারপাস, সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) নির্মিত আট জেলায় স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে গাড়ির ফিটনেস পরীক্ষা কেন্দ্র (ভিআইসি) ও ময়মনসিংহে সড়ক পরিবহন করপোরেশনের (বিআরটিসি) বাস ডিপো।

সরকারপ্রধান ময়মনসিংহে ব্রহ্মপুত্র নদের ওপর কেওয়াটখালী এবং রহমতপুর সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন। আর্থিক সহায়তা তহবিল থেকে সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহতদের ক্ষতিপূরণ প্রদান কার্যক্রমের উদ্বোধন করবেন তিনি। বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় রাজধানীর তেজগাঁওয়ের সড়ক ভবন থেকে এসব প্রকল্প উদ্বোধন এবং ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হবে।

আড়াই হাজার কোটি টাকার দুই সেতু ব্রহ্মপুত্রে

ময়মনসিংহ শহরের কেওয়াটখালীতে বিদ্যমান রেলসেতুর পাশে নতুন সড়ক সেতু নির্মাণ করা হবে। ১ হাজার ১০০ মিটার দৈর্ঘ্যের সেতুতে স্প্যান ২২টি ও পিয়ার (খুঁটি) থাকবে ২১টি। পানির ওপরে তথা সেতুর মূল অংশ হবে স্টিল আর্চ। ৩২০ মিটার দৈর্ঘ্য এবং ৪২ দশমিক ১৫ মিটার প্রশস্ত এ অংশে স্প্যান থাকবে তিনটি। ৬৭০ মিটার দৈর্ঘ্যের তিনটি সড়ক ওভারপাস, ২৪০ মিটার দৈর্ঘ্যের দুটি রেল ওভারপাস, দুই পাশে ধীরগতির যান চলাচলের লেনসহ ৬ দশমিক ২০ কিলোমিটার চার লেনের মহাসড়ক নির্মাণ করা হবে। টোল প্লাজা ছাড়াও দৃষ্টিনন্দন বিশ্রামাগারসহ পর্যটনকেন্দ্র নির্মাণ করা হবে প্রকল্পের আওতায়। গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির লাইনের জন্য যেন ভবিষ্যতে খোঁড়াখুঁড়ি করতে না হয়, সে জন্য সড়কের পাশে থাকবে ইউটিলিটি ডাক্ট। জমি অধিগ্রহণসহ ৩ হাজার ২৬৩ কোটি টাকা ব্যয় হবে স্টিল আর্চ ব্রিজটি নির্মাণে। মূল সেতু নির্মাণে খরচ হবে ২ হাজার ১৩৮ কোটি টাকা। ২০২৫ সালের জুনের মধ্যে সেতু নির্মাণে গত ২৫ সেপ্টেম্বর চীনের চায়না স্টেট কনস্ট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশেন লিমিটেড এবং বাংলাদেশের স্পেক্ট্রা ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেডের যৌথ উদ্যোগের সঙ্গে চুক্তি সই করেছে সওজ। নির্মাণাধীন শেরপুর-নারায়ণখোলা-পরাণগঞ্জ-ময়মনসিংহ শহর সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ময়মনসিংহের খাগডহরে ১ হাজার ৪৭১ মিটার দীর্ঘ সেতু নির্মাণ করা হবে। ১ হাজার ৮৪২ কোটি টাকার এ প্রকল্প সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নে বাস্তবায়ন করা হবে ২০২৫ সালের জুনের মধ্যে। ফুটপাতসহ ১৩ দশমিক ৪ মিটার প্রশস্ত এ সেতুতে স্প্যান থাকবে ২৬টি। দুই সেতুর নিচে নৌ চলাচলে ১২ দশমিক ২ মিটার ভার্টিকেল ক্লিয়ারেন্স রাখা হয়েছে।

১৫০ সেতু এবং ১৪ ওভারপাস

আট বিভাগের মোট ৩৯ জেলায় এসব সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। ওভারপাসগুলো নির্মাণ করা হয়েছে এলেঙ্গা-সিরাজগঞ্জ-রংপুর মহাসড়কে। সড়ক পরিবহন সচিব এ বি এম আমিন উল্লাক নুরী বলেছেন, ১৫০টি সেতু ও ১৪টি নতুন ওভারপাস উদ্বোধনের মাধ্যমে যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও সহজ এবং সমৃদ্ধ হবে।

১৫০ সেতুর মোট দৈর্ঘ্য ৯ হাজার ৪৫৩ মিটার। নির্মাণে খরচ হয়েছে ৩ হাজার ২৮৭ কোটি টাকা। সেতুগুলো ১৩ থেকে ৫৫৮ মিটার দীর্ঘ। উল্লেখযোগ্য সেতুগুলো হলো– ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ৫৫৮ মিটার দীর্ঘ তিতাস সেতু, ৪০২ মিটার দীর্ঘ সুনামগঞ্জের ছাতক-সুরমা সেতু, বগুড়ায় ২৯৮ মিটার দীর্ঘ আড়িয়ারঘাট সেতু, ১৯৩ মিটার দীর্ঘ ঢাকার নয়াহাট সেতু। বিভিন্ন স্থানে জরাজীর্ণ, অপ্রশস্ত বেইলি সেতুর পরিবর্তে ১৫টি আরসিসি সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। গাজীপুরের ১৮৭ মিটার দীর্ঘ চাপাইর সেতু ও নারায়ণগঞ্জের ১৪৯ মিটার দীর্ঘ রামচন্দ্রী সেতুও এর মধ্যে রয়েছে।

১৪টি ওভারপাসের মোট দৈর্ঘ্য ৬৮৯ মিটার। নির্মাণে খরচ হয়েছে ২০৮ কোটি ৮০ লাখ টাকা। এগুলো ৬ থেকে ১০৮ মিটার পর্যন্ত দীর্ঘ।

আবারও ভিআইসি

রাজধানীর মিরপুরে বিআরটিএ কার্যালয়ে ২১২ কোটি টাকায় স্থাপন করা দুটি ভিআইসিতে থাকছে ১২টি লেন। এর মাধ্যমে হালকা ও ভারী যানের ফিটনেস পরীক্ষা করা যাবে। ঘণ্টায় ৭০টি গাড়ি হিসাবে দিনে ছয় শতাধিক যানবাহনের ফিটনেস যাচাই করা হবে। প্রতিটি ধাপ আলাদা ও চূড়ান্ত ফল স্বয়ংক্রিয়ভাবে তৈরি করবে ভিআইসি। এর কপি পাবেন গাড়ির মালিকও। জানতে পারবেন গাড়িতে কী ধরনের ত্রুটি রয়েছে।

নিবন্ধিত যানবাহনের তুলনায় বিআরটিএর মোটরযান পরিদর্শকের সংখ্যা নগণ্য। ফিটনেস যাচাইয়ে ২৬ ধরনের পরীক্ষা করতে হয়। পরিদর্শকরা চোখের দেখায় এক মিনিটের মধ্যে তা করেন। ফলে লক্কড়ঝক্কড় গাড়িও বছর বছর ফিটনেস সনদ পাচ্ছে। সড়কে ঘটছে দুর্ঘটনা। বিআরটিএ চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদার সমকালকে বলেছেন, ভিআইসিতে এ সুযোগ থাকবে না। প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধনের পর ভিআইসিগুলো অপারেশনে যাবে। বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে নোয়াখালী, কুমিল্লা, ফরিদপুর ও ময়মনসিংহে ভিআইসি নির্মাণ করা হচ্ছে। ঢাকার ইকুরিয়া, খুলনা, রাজশাহী ও চট্টগ্রামে হবে সরকারি অর্থায়নে। এসব পরীক্ষাকেন্দ্রে তিনটি করে লেন থাকবে। নুর মোহাম্মদ মজুমদার বলেছেন, নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে।

ভিআইসির অতীত অভিজ্ঞতা সুখকর নয়। ১৯৯৭ সালে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক ৪০ কোটি টাকায় মিরপুর ও ইকুরিয়া, রাজশাহী, চট্টগ্রাম এবং খুলনায় যানবাহনের ফিটনেস পরীক্ষাকেন্দ্র স্থাপন করে। কিন্তু তা একবারও ব্যবহার করা হয়নি। ২০১৬ সালে মিরপুর কার্যালয়ে কোরিয়ার আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থার অনুদানে নতুন যন্ত্রপাতি সংযোজন করে ভিআইসি চালু করা হয়। কিন্তু কয়েক দিনেই বিকল হয়। শুরু হয় আগের মতো চোখের দেখায় ফিটনেস সনদ দেওয়া।

দুর্ঘটনায় হতাহতদের জন্য ক্ষতিপূরণ

সড়ক পরিবহন আইনের ৫৩ ধারায় গঠিত আর্থিক সহায়তা তহবিল থেকে ক্ষতিপূরণ পাবেন দুর্ঘটনায় হতাহতরা। গত বছরের ২৭ ডিসেম্বর বিধিমালা কার্যকরের দিন থেকে তহবিলে চাঁদা নিচ্ছে সরকার। দুর্ঘটনায় নিহত ব্যক্তির উত্তরাধিকারী ৫ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ পাবেন। স্থায়ীভাবে পঙ্গু ব্যক্তি ৩ লাখ ও আহত হলে মিলবে ১ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ।

গত ১০ মাসে মাত্র একজনকে ক্ষতিপূরণ দিয়েছে তহবিলের দায়িত্বে থাকা ট্রাস্টি বোর্ড। গত ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত ৩৯৬টি আবেদন জমা পড়েছে। ১৬২ আবেদনকারীকে ক্ষতিপূরণ দিতে যাচ্ছে সরকার। ১৩৬ নিহত ব্যক্তির উত্তরাধিকারীদের মধ্যে কয়েকজনকে ক্ষতিপূরণের চেক তুলে দেবেন প্রধানমন্ত্রী। আহত ২৬ জনকে টাকা দেওয়া হবে তহবিল থেকে।

আরও পড়ুন

×