ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

সমকাল সংলাপ

সবাই সংলাপ চান, তবে...

সবাই সংলাপ চান, তবে...

‘চলমান রাজনৈতিক সংকট ও উত্তরণ’ শীর্ষক সমকাল সংলাপে অতিথিরা। বুধবার তেজগাঁওয়ের টাইমস মিডিয়া ভবনে। ছবি: সমকাল

 সমকাল প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৫ অক্টোবর ২০২৩ | ২৩:৪৫ | আপডেট: ২৫ অক্টোবর ২০২৩ | ২৩:৪৫

নাগরিক সমাজের মতো রাজনৈতিক দলগুলোও রাজনৈতিক সংকট নিরসনে সংলাপের পক্ষে। তবে আলোচনায় বসতে নিজ নিজ শর্তে অনড় রয়েছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টিও (জাপা) আলোচনার পক্ষে। তবে সরকার সমর্থক অন্য দলগুলোর অবস্থান আওয়ামী লীগের মতোই। আগামী নির্বাচন নিয়ে দেশি-বিদেশি তৎপরতায় নাগরিক সমাজের আশঙ্কা– রাজনৈতিক সমাধান না এলে অস্বাভাবিক পরিস্থিতির উদ্ভব হতে পারে। 

‘চলমান রাজনৈতিক সংকট ও উত্তরণ’ শীর্ষক সমকাল সংলাপে এসব কথা বলেছেন তারা। গতকাল বুধবার রাজধানীর তেজগাঁওয়ে কার্যালয়ে সমকালের উপদেষ্টা সম্পাদক আবু সাঈদ খানের সঞ্চালনায় এই সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। 

এতে আওয়ামী লীগের প্রতিনিধিত্ব করা দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, সরকারের অধীনে নির্বাচন যদি বিএনপি মেনে নেয়, তাহলে সবার কাছে কীভাবে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করা যায়, তা নিয়ে নিশ্চয়ই আলোচনা হবে। সেই আলোচনা ফলপ্রসূ হবে। 

বিপরীত মেরুতে রয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেছেন, গ্রহণযোগ্য, অংশীদারিত্বমূলক নির্বাচনের প্রেক্ষাপট তৈরি হলে নিরপেক্ষ সরকারের আলোচনায় যেতে বিএনপি রাজি। তবে আওয়ামী লীগের অধীনে তা সম্ভব নয়। 

সমকাল সংলাপে আলোচক হিসেবে অংশ নেন শিক্ষাবিদ অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক, জাপার সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু এবং সিপিবির সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম।  

রাজনৈতিক সমঝোতা না হলে আবারও জরুরি অবস্থা আসতে পারে বলে সতর্ক করেছেন অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক। তিনি বলেছেন, নির্বাচন নির্ধারিত সময়ে হবে কি হবে না তা নির্ভর করে যুক্তরাষ্ট্রের ওপর। এখনও ‘মাইনাস টু ফর্মুলা’ বাস্তবায়নে কাজ চলছে। এই সংকট এড়াতে রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রী সব রাজনৈতিক দলের নেতাদের সংলাপে ডাকতে পারেন। যদি সত্যি সত্যি উদার দৃষ্টিতে সংলাপ করা হয়, তাহলে বিএনপিও আলোচনায় আসবে। এ ছাড়া অন্য কোনো দিকে যেতে চাইলে সাংবিধানিক জটিলতা সৃষ্টি হবে এবং জরুরি অবস্থা ঘোষণাসহ আরও কিছু পদক্ষেপের বিধান রয়েছে। 

নির্বাচনে বিদেশিদের নাক গলানোর জন্য রাজনৈতিক দলগুলোকে দায়ী করেছেন অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক। তিনি বলেছেন, ১৯৯২ সালে শেখ হাসিনা ঢাকায় নিযুক্ত সব কূটনীতিক এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাকে চিঠি দিয়েছিলেন। 

অভিযোগ করেছিলেন নির্বাচনে সূক্ষ কারচুপি হয়েছে।

 বিএনপি সরকারকে বৈধ গণ্য না করতে অনুরোধ করেছিলেন তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা। এবার বিদেশি চাপে অন্তত শেখ হাসিনা মাথানত করছেন না। তবে যুক্তরাষ্ট্রের মতো বৃহৎ শক্তিকে মোকাবিলায় দরকার জাতীয় ঐক্য। 

বিকল্প ব্যবস্থা খুঁজতে সংলাপ ও ঐকমত্য জরুরি বলে মনে করে জাপা। দলটির প্রতিনিধিত্ব করা ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেছেন, সংলাপের দরকার রয়েছে। সংলাপের বিকল্প সংঘাত। যেখানেই যাই, মানুষ প্রশ্ন করে ‘সামনে কী হবে?’ বাংলাদেশে দুটি মতের চরম বিরোধী অবস্থান রয়েছে। আর এ পরিস্থিতিতেও সংবিধানের মধ্যেই সমাধানের পথ রয়েছে। এখানে দেওয়া-নেওয়ার প্রশ্ন রয়েছে। আলোচনায় কখনোই একশ ভাগ ঐকমত্য হয় না। তবে পারস্পরিক ছাড় দেওয়া সম্ভব। ১৯৯০ সালের চেয়ে কঠোর আন্দোলন হয়েছিল ১৯৮৮ সালে। নব্বইয়ে ঐকমত্য হয়েছিল। তাই জাতীয় পার্টিকে ক্ষমতা ছাড়তে হয়েছিল। 

আওয়ামী লীগের চেয়েও অনমনীয় অবস্থানে রয়েছে ১৪ দলের শরিক জাসদ। দলটির প্রধান হাসানুল হক ইনু বলেছেন, একাত্তর এবং পঁচাত্তরের খুনিদের যারা সমর্থন দিচ্ছে তাদের সঙ্গে সংলাপ হলেও স্থিতিশীলতা আসবে না। অতীতে কোনো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হয়নি। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ফিরিয়ে আনার পথ বন্ধ। স্থায়ী সমাধান বর্তমান পদ্ধতিতে সম্ভব নয়। যুদ্ধাপরাধী ও ভূতের সরকারের পক্ষে ওকালতি বাদ দিয়ে, নির্বাচনী পদ্ধতি যা আছে, তা অদলবদল করে সবাই অংশ নিলে সুষ্ঠু ভোট হবে। 

তত্ত্বাবধায়ক ও তদারকি সরকারের মধ্যে তফাৎ দেখেন না মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম। তিনি বলেছেন, তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা যথেষ্ট নয় গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য। আওয়ামী লীগ যখন বিরোধী দলে থাকে, তখন বলে দলীয় সরকারের অধীনে অবাধ নির্বাচন হতে পারে না। বিরোধী দলে থাকা অবস্থায় বিএনপিও একই কথা বলে। 

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বিরোধীদের আলোচনার টেবিলে ডাকবে কিনা– মুক্ত আলোচনায় সঞ্চালকের এ প্রশ্নে কৃষিমন্ত্রী বলেছেন, সংবিধানে যেভাবে আছে, তা পরিবর্তন না হওয়া পর্যন্ত নির্বাচন সেভাবেই হবে। সন্ত্রাস, সহিংসতা গ্রহণযোগ্য হবে না। জনগণ তা মোকাবিলা করবে। বিএনপি কী করবে, তা তারা ঠিক করুক। 

নির্বাচন কমিশনের ঘরে বল ঠেলে ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, ১২৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে সেনাপ্রধান, পুলিশ মহাপরিদর্শকসহ নির্বাহী বিভাগের সবাই নির্বাচন কমিশনকে সহায়তা করবে। সব দেশেই এভাবে নির্বাচন হচ্ছে। সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন আয়োজনে বাজেটসহ সব ক্ষমতা নির্বাচন কমিশনের (ইসি) রয়েছে। ইসির সেই ক্ষমতা প্রয়োগের মতো সাহসিকতাপূর্ণ ব্যক্তিত্ব যদি না পাই, তাহলে কে দায়িত্ব নেবে?

বিদেশিদের তাগিদের বিষয়ে ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, সুষ্ঠু নির্বাচন করতে সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তৃতীয় বিশ্বের দেশে বিদেশি সরকারের প্রভাব কমবেশি থাকেই। এটা অস্বীকার করার উপায় নেই। 

পঞ্চদশ সংশোধনীকে অবৈধ আখ্যা দিয়ে বিএনপির সাবেক মন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে হয়েছিল। ঐকমত্যের ভিত্তিতে অথবা গণভোট দিয়ে তা বাদ দেওয়া যেতে পারে। কেউ একতরফা বাদ দিতে পারে না। 

আগের দুটি নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ ও জালিয়াতিপূর্ণ আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, আগামীতে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের কথা বলছে আওয়ামী লীগ। এটা কেউ বিশ্বাস করে না। নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া এবার তারা নির্বাচনের দিকে যেতে পারবে না। জাতি মানবে না, গণতান্ত্রিক বিশ্ব মানবে না। বলা হচ্ছে, নির্বাচিত সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে। আওয়ামী লীগ কি নির্বাচিত সরকার– এই প্রশ্ন রেখে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেছেন, ২০০৬ সালে শেখ হাসিনা সংসদে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সংস্কারের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। বিএনপি আজ যা বলছে, এর সব কিছু তাঁর প্রস্তাবে রয়েছে। এ নিয়ে আলোচনা হলে আপত্তি নেই।

আরও পড়ুন

×