বহুবিধ শ্রেণিবিভাগে ঝুঁকিতে যৌনকর্মীরা

যৌনকর্মীদের অধিকার আন্দোলন সমর্থনে গণমাধ্যমের ভূমিকা শীর্ষক মতবিনিময় সভা
সমকাল প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৬ জানুয়ারি ২০২৪ | ১৮:৩৯
কান্দুপট্টিসহ কয়েকটি যৌনপল্লী উচ্ছেদ ও নানা কারণে ভাসমান যৌনকর্মীর সংখ্যা বৃদ্ধি, ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার, বাড়ি ও হোটেল নির্ভর যৌনকর্মীর সংখ্যা বৃদ্ধির কারণে বহু শ্রেণিবিভাগে নির্ভর হচ্ছে যৌনকর্মীরা। তাদের সংখ্যা যেমন বাড়ছে, তেমন তারা সচেতনতা সৃষ্টির বলয়ের বাইরে চলে যাচ্ছে। ফলে স্বাস্থ্য ঝুঁকিসহ মৌলিক অধিকার আদায়ের ঝুঁকিতে পড়ছে যৌনকর্মীরা। পেশাগত কারণেই ৩৫ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে তারা কর্মহীন হয়ে পড়ে, কিন্তু সমাজ সেবা অধিদপ্তরের বয়স্কভাতা দেওয়া হয় ৬২ বছর বয়সে। ফলে তারা এর আওতায় আসতে পারে না। তাদের জন্য বিশেষভাবে ভাতা প্রদানের দাবির কথা জানান এ সম্পর্কিত এক মতবিনিময় সভায় বক্তারা।
তারা বলেন, নিজেদের ইচ্ছেমতো ইন্টারনেট ব্যবহার করে যারা যৌনকর্মী হচ্ছে তারা জানতে পারছে না যথাযথভাবে কীভাবে নিজেদের নিরাপদে রাখতে হয়। তাদের বাসস্থান, সন্তানদের শিক্ষা, চিকিৎসায় নেই তেমন সুযোগ। মঙ্গলবার রাজধানীর ধানমন্ডিতে নারীপক্ষের নাসরিন হক সভাকক্ষে ‘যৌনকর্মীদের অধিকার আন্দোলন সমর্থনে গণমাধ্যমের ভূমিকা’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।
নারীপক্ষের সদস্য মাহবুবা মাহমুদ লীনার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, ভোরের কাগজের সম্পাদক ও জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শ্যামল দত্ত, নারীপক্ষের প্রতিষ্ঠাতা সভানেত্রী শিরীন হক, সভানেত্রী গীতা দাস, বাংলাদেশ মানবাধিকার সাংবাদিক ফোরামের খায়রুজ্জমান কামাল, চ্যানেল আইয়ের বিশেষ সংবাদদাতা এনামুল কবীর রূপম, বাংলাদেশ ওমেন্স হেলথ কোয়ালিশনের নির্বাহী পরিচালক শরীফ মুস্তাফা হেলাল, যৌনকর্মী ও উল্কা নারী সংঘের হেনা আক্তার, কল্যাণময়ী নারী সংঘের রিনা আক্তার, ট্রান্সজেন্ডার ও সম্পূর্নার জয়া সিগদার প্রমুখ।
শ্যামল দত্ত বলেন, যৌনকর্মীদের নিয়ে কাজ থেকে আমরা একটু দূরে সরে গেছি। আমাদের পরিকল্পিতভাবে কাজ করে তাদের মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
যৌনকর্মীদের অধিকারের বিষয় তাদের কাছে পৌঁছে দিতে হবে।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, নানা শ্রেণিবিভাগ হওয়ায় ১০ জনের মধ্যে ২ জনের এইডস ধরা পড়ছে। কারণ তারা স্বাস্থ্য ঝুঁকির বিষয়ে সচেতন নয়। আবার তারা চিকিৎসা করাতে পারছে না, মারা গেলে যৌনকর্মীদের কবর দিতে সমস্যা হয়, এক সময় তাদের ভাসিয়ে দেওয়া হতো। নারায়ণগঞ্জের টানবাজার, কান্দুপট্টি যৌনপল্লী উচ্ছেদের পর সারা শহরেই ভাসমান যৌনকর্মীদের দেখা যায়। তাদের পুনর্বাসন ও অধিকার আদায়ে কাজ করা জরুরি। পুলিশ ও মাস্তান দ্বারা যৌনকর্মীরা আরও বেশি সহিংসতার শিকার হয়। যৌনকর্মীর ছেলেমেয়েদের মূলধারায় ফিরিয়ে আনার তাগিদ দেন তারা।
যৌনকর্মীদের প্রতি সামাজিক নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন, অবকাঠামোগত উন্নয়নের ফলে কিছু এলাকার যৌনপল্লীতে খদ্দের কমে যাচ্ছে (দৌলতদিয়া)। সেখানে বসবাসরতরা তাদের জীবন চালানোর জন্য ভাসমান হয়ে যাচ্ছে, এতে ভাসমানের সংখ্যা ও ঝুঁকি বাড়ছে। এই পেশার স্বাস্থ্য ঝুঁকির কারণে ৩৫ থেকে ৪০ বছরের পরেই তারা কর্মক্ষমতা হারায়। কিন্তু দেশের নীতি অনুযায়ী বয়স্ক ভাতার বয়স নির্ধারণ করা আছে ৬২ বছর। ফলে যৌনকর্মীরা এই সুযোগ থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে। তাদের নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় আনা, বয়োজ্যেষ্ঠ যৌনকর্মীদের বিকল্প আয় না থাকায় তারা জীবন চালানোর জন্য ঝুঁকিপূর্ণ কাজ বেছে নিচ্ছে। তাদের প্রয়োজন অনুয়ায়ী পুর্নবাসন, যৌনকর্মীদের শিশুদের জন্ম নিবন্ধন শুধুমাত্র মায়ের নামে করার সুযোগের সুপারিশ করা হয়।
- বিষয় :
- যৌনকর্মী