দেশে নতুন মাদক ব্ল্যাক কোকেন

ব্ল্যাক কোকেন। ফাইল ছবি
বকুল আহমেদ
প্রকাশ: ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ | ০৯:২৬ | আপডেট: ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ | ০৯:৪১
কারবারিরা বিভিন্ন সময় নতুন নতুন মাদক নিয়ে আসছে দেশে। মাদক বহনে অভিনব কৌশলও অবলম্বন করছে তারা। এবার প্রথমবারের মতো মিলল ব্ল্যাক কোকেন নামের নতুন মাদক। এটি ভাবিয়ে তুলেছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরসহ (ডিএনসি) সংশ্লিষ্টদের। ডিএনসির ফরিদপুর জেলা কার্যালয়ের অভিযানে পেন্সিলের শীষের মতো কালো টুকরো ওই বস্তু রাসায়নিক পরীক্ষাগারে পরীক্ষার পর জানা গেল সেটি ব্ল্যাক কোকেন। এর আগপর্যন্ত এটি অচেনা বস্তু হিসেবেই জানতেন তদন্ত-সংশ্লিষ্টরা।
অবশ্য এটি কোন দেশ থেকে কীভাবে আনা হয়েছে, সে বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য উদ্ঘাটন হয়নি। দেশে কী পরিমাণ ছড়িয়েছে এবং চক্রে কারা আছে, সেটিও অজানা। কারণ যার বাড়ি থেকে এই নতুন মাদক জব্দ করা হয়েছে, তিনি পলাতক। তাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছে ডিএনসি।
গত সেপ্টেম্বরে আরেক মাদক ‘হেরোইন’ পাওয়া যায় নতুন আঙ্গিকে। চ্যাপটা চারকোণা আকৃতির জমাটবাঁধা বস্তুটি সন্দিগ্ধভাবে উদ্ধার করে রাসায়নিক পরীক্ষাগারে পরীক্ষার পর ডিএনসির কর্মকর্তারা জানতে পেরেছিলেন, সেটি হেরোইন। মাদকের এই রূপের সঙ্গে পরিচিত ছিলেন না তারা। ২০১৮ সালে নিউ সাইকো অ্যাকটিভ সাবসটেনসেস বা এনপিএস বা খাথ জব্দের পর বেরিয়ে আসে সেটি চা পাতার মতো দেখতে হলেও আসলে মাদক। ২০১৯ সালে দেশে নতুন মাদক হিসেবে সামনে আসে ক্রিস্টাল মেথ বা আইস ও এলএসডি।
কোকেন সাধারণত সাদা রঙের দানাদার বা পাউডার আকারে হয়। তবে এবার ব্ল্যাক কোকেন উদ্ধার হওয়ায় ভাবিয়ে তুলেছে ডিএনসিকে। ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয়ের অতিরিক্ত পরিচালক মজিবুর রহমান পাটওয়ারী সমকালকে বলেন, ব্ল্যাক কোকেন কখনও বাংলাদেশে পাওয়া যায়নি। তাই এ সম্পর্কে আমাদের বিস্তারিত কোনো ধারণা ছিল না। বাংলাদেশে নতুন মাদক হিসেবে শনাক্ত হয়েছে। এ বিষয়ে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। পাশাপাশি দেশের সব ইউনিটকে এ বিষয়ে অবহিত করা হবে।
জানা যায়, ডিএনসির ফরিদপুর কার্যালয়ের কর্মকর্তারা গত ১১ ডিসেম্বর ফরিদপুরের বোয়ালমারী থানার ভুলবাড়িয়া গ্রামে আবু বক্কার ওরফে রুবেলের বাড়িতে অভিযান চালান। তাদের উপস্থিতি টের পেয়ে পালিয়ে যায় ওই যুবক। তার শয়নকক্ষে তল্লাশি চালিয়ে ১৫ গ্রাম আইস, গুঁড়া ইয়াবা ১২ গ্রাম ও এক গ্রাম কোকেন জব্দ করা হয়। এসব মাদকের পাশাপাশি স্বচ্ছ একটি পলি প্যাকেট পায় আভিযানিক দলটি। অতি সুরক্ষিতভাবে সেটি সংরক্ষণ করা দেখে তাদের সন্দেহ হয়। সেটির ভেতরে পেন্সিলের শীষের মতো কালো ৪৪টি টুকরো পাওয়া যায়। প্রতিটি পৌনে এক ইঞ্চি লম্বা ও চিকন, যার ওজন সাত গ্রাম। পরে সেগুলো জব্দ করা হয়। নিশ্চিত হওয়ার জন্য পাঠানো হয় ঢাকার গেণ্ডারিয়ায় ডিএনসির কেন্দ্রীয় রাসায়নিক পরীক্ষাগারে। পরীক্ষার পর জানা যায়, সেটি ব্ল্যাক কোকেন।
ডিএনসির কেন্দ্রীয় রাসায়নিক পরীক্ষাগারের প্রধান রাসায়নিক পরীক্ষক ড. দুলাল কৃষ্ণ সাহা বলেন, ফরিদপুর থেকে পরীক্ষাগারে অজ্ঞাত বস্তু হিসেবে যে আলামত পাঠানো হয়েছিল, সেটি ব্ল্যাক কোকেন। মাস দুয়েক আগে মেক্সিকোতে দুই টন ব্ল্যাক কোকেন ধরা পড়ে। তবে এত তাড়াতাড়ি নতুন আঙ্গিকের এই কোকেন বাংলাদেশে আসবে, তা ভাবাও যায়নি।
তিনি আরও বলেন, কোকেন উত্তেজক মাদক। অতিমাত্রায় উত্তেজক হওয়ায় হার্টে গিয়ে আঘাত করে। ফলে এই মাদক সেবনে মৃত্যুঝুঁকি বাড়ে।
ডিএনসির ফরিদপুর কার্যালয় সূত্র জানিয়েছে, গত মে মাসে রাজধানীর মতিঝিলে একটি কুরিয়ার সার্ভিস থেকে ৫০ হাজার পিস ইয়াবা জব্দ করে ফরিদপুর কার্যালয়ের কর্মকর্তারা। ওই ঘটনায় করা মামলার তদন্তে মাদক কারবারি হিসেবে রুবেলের নাম আসে। ওই চালানে জড়িতদের সঙ্গে তার সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়। এর পরই তার বাসায় অভিযান চালানো হয়। রুবেল এলাকায় এক সময় ইলেকট্রনিক্সের ব্যবসা করত। সম্প্রতি নির্দিষ্ট কোনো ব্যবসা নেই। মাদক ব্যবসা করে। বছরখানেক আগে ইয়াবাসহ ধরা পড়েছিল পুলিশের হাতে।
ডিএনসির ফরিদপুর জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক শামীম হোসেন বলেন, রুবেলকে গ্রেপ্তার করতে অভিযান অব্যাহত আছে। কোথা থেকে এসব মাদক আনা হয়েছিল এবং এসবের ক্রেতা কে বা কারা, তা তাকে গ্রেপ্তারের পর জানা যাবে।
গত ২৪ ও ২৫ জানুয়ারি সাড়ে ৮ কেজি কোকেনসহ দুই বিদেশিকে গ্রেপ্তার করে ডিএনসি। দেশে বিভিন্ন সময় উদ্ধার হওয়া কোকেনের মধ্যে এটি সবচেয়ে বড় চালান। এর পর কোকেন সিন্ডিকেটের দেশি-বিদেশি আরও পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
- বিষয় :
- নতুন মাদক