ওপর থেকে বীর মুক্তিযোদ্ধারা বলবে, ‘থ্যাংক ইউ, নেক্সট জেনারেশন’: জাফর ইকবাল

ছবি-সমকাল
বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ | ১৭:০৬
মাথায় লাল-সবুজ টুপি, হাতে পতাকা নিয়ে স্কুল পর্যায়ের শিশু-কিশোর শিক্ষার্থীদের নিয়ে মুক্তির উৎসব আয়োজন করেছে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর। শুক্রবার সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে দেশ গড়ার শপথ নিয়ে দৃঢ় অঙ্গীকারে নব প্রজন্ম একটি আলোকিত দেশ ও সমাজ গড়ার শপথ নিয়েছে।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে শুভেচ্ছা বক্তব্যে অধ্যাপক ড. জাফর ইকবাল উপস্থিত শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্য করে বলেন, তোমার হয়তো আর মুক্তিযুদ্ধ করতে পারবে না। কিন্তু বীর মুক্তিযোদ্ধারা যা চেয়েছিল, তারা যে স্বপ্ন দেখেছিল তোমরা যদি তা বাস্তবায়ন করো, তাহলে তা হবে তাদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন। তোমার যদি স্বপ্নের স্বাধীন সোনার বাংলা গড়ে তোল, তাহলে ওপর থেকে বীর মুক্তিযোদ্ধারা তোমাদের দিকে তাকিয়ে বলবে, ‘থ্যাংক ইউ, নেক্সট জেনারেশন!’
তিনি বলেন, ড. মুহাম্মদ শহিদুল্লাহ বলেছিলেন, ‘একজন মানুষের তিনটি মা থাকে—জন্মদাত্রী মা, মাতৃভাষা ও মাতৃভূমি। আমাদের সকলের উচিৎ এই তিন মায়ের প্রতি ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা প্রদর্শন করা। যারা আমাদের মাতৃভাষা ও মাতৃভূমিকে আমাদেরকে কাছে উপহার দিয়েছে তাদের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা জানাতে হবে।
ড. জাফর ইকবাল বলেন, তোমরা দেশকে ভালোবাসবে, দেশের জন্য কাজ করবে। মন দিয়ে লেখা পড়া করবে। আর আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ভালো করে জানবে। তাহলে দেখবে তোমার বুক একশ হাত ফুলে উঠবে।
মহান মুক্তিযুদ্ধের হেমায়েত বাহিনীর মহিলা কমান্ডার আশালতা বৈদ্য বলেন, ভাষা আন্দোলনের মাস ফেব্রুয়ারি মাসে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের প্রতি আকুতি, ১৯৪৭ সালের পর থেকে যার নেতৃত্বে বিভিন্ন চড়াই উৎরাই পেরিয়ে আমরা স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ পেয়েছি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি সম্পূর্ণ শ্রদ্ধা প্রদর্শন করে তোমরা তার স্বপ্ন পূরণে কাজ করে যাবে। তোমরা দেশ গড়বে, রক্ষা করবে।
বীর মুক্তিযোদ্ধা কর্নেল (অব.) জাফর ইমাম বলেন, আমাদের বর্তমান প্রজন্মের সঙ্গে মিলিত হয়ে আমি আনন্দিত। বর্তমান প্রজন্মকে বলব, আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করতে হবে। তবে এখানে আমাদের জাতীয় পর্যায়ে বিরাট ঘাটতি রয়েছে। দেশে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ভোলার প্রবণতা লক্ষ্য করছি।
রণাঙ্গনের এই মুক্তিযোদ্ধা আরও বলেন, আমাদের বঙ্গবন্ধুকে জানতে হবে। কেউ বঙ্গবন্ধুকে জাতির পিতা বলতে কুণ্ঠাবোধ করলে তার বাংলাদেশে থাকার অধিকার নেই।
মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের শিক্ষা কর্মসূচির অধীন শিক্ষার্থীরা গত বছর বিভিন্ন সময় মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর পরিদর্শন ও অন্যান্য কার্যক্রমে অংশ নিয়েছিল। তাদেরকে নিয়ে আয়োজিত এবারের উৎসবের মূল প্রতিপাদ্য ছিল ‘আমরা সামাজিক ন্যায়বিচার ও মানবিক মর্যাদা নিশ্চিত করব’।
সকাল ৯টায় ছায়ানটের শিল্পীদের পরিবেশনায় জাতীয় সংগীতের সঙ্গে জাতীয় পতাকা উত্তোলন, কবুতর ও বেলুন ওড়ানোর মধ্য দিয়ে উৎসবের সূচনা হয়। সমবেত নৃত্য পরিবেশন করেন স্পন্দনের শিল্পীরা। অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের শপথ পাঠ করান বীর মুক্তিযোদ্ধা কর্নেল (অব.) জাফর ইমাম, বীরবিক্রম ও বীর মুক্তিযোদ্ধা আশালতা বৈদ্য এবং স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি ও সদস্য-সচিব সারা যাকের। উৎসবে শুভেচ্ছা বক্তব্য প্রদান করেন অধ্যাপক ড. জাফর ইকবাল, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি ডা. সারওয়ার আলী এবং মফিদুল হক। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের কর্মসূচি ব্যবস্থাপক আবৃত্তিশিল্পী রফিকুল ইসলাম।
অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের নাচ–গানের পাশাপাশি বিশিষ্ট শিল্পীদের গানে গানে দারুণ জমে ওঠে উৎসব। রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন, মহান মুক্তিযুদ্ধকালের প্রেরণাজাগানো দেশাত্মবোধক গান, গণজাগরণের গান দিয়েই মূলত সাজানো হয়েছিল শিক্ষার্থীদের পরিবেশনাগুলো।