ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

মূল্য নির্ধারণ কমিটির বৈঠক

হার্টের রিংয়ের দাম বাড়ছে না ওষুধের কমানোর নির্দেশ

বেশি দাম নিলে ব্যবস্থা : স্বাস্থ্য সচিব

হার্টের রিংয়ের দাম বাড়ছে না ওষুধের কমানোর নির্দেশ

প্রতিকী ছবি

 সমকাল প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ | ০০:০১ | আপডেট: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ | ০৯:০৯

দুই মাস ধরে হার্টের রিংয়ের (করোনারি স্টেন্ট) দাম পুনর্নির্ধারণের দাবি জানিয়ে আসছিল ইউরোপীয় স্টেন্ট আমদানিকারকরা। তবে তাদের দাবি উপেক্ষা করে গত ১২ ডিসেম্বর নির্ধারণ করা দামেই রিং বিক্রির নির্দেশ দিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। একই সঙ্গে ওষুধের উচ্চ দাম কমানোর নির্দেশ দিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন।

গতকাল মঙ্গলবার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ওষুধের মূল্য নির্ধারণ কমিটির বৈঠকে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। স্বাস্থ্য সচিব জাহাঙ্গীর আলমের সভাপতিত্বে এই বৈঠকে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ ইউসুফ ও দাম নির্ধারণে গঠিত জাতীয় কমিটির প্রতিনিধি এবং হৃদরোগ বিশেষজ্ঞরা উপস্থিত ছিলেন। 

বৈঠক শেষে স্বাস্থ্য সচিব বলেন, হৃদরোগের চিকিৎসার জন্য হার্টের রিংয়ের ক্ষেত্রে সবশেষ নির্ধারিত দামই থাকবে। কেউ বেশি দাম নিলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বৈঠকে ওষুধের দাম নির্ধারণ নিয়ে আলোচনা হলেও তা শেষ করা যায়নি।

তিনি আরও বলেন, বৈঠকে ওষুধের দাম নিয়ে আমরা পুরোপুরি আলোচনা করতে পারিনি; সময়ের স্বল্পতা ছিল। তবে রিংয়ের দাম নিয়ে আলোচনা করেছি। বৈঠকে এই খাতের অংশীজন ছিলেন। আমরা বলেছি, স্টেন্টের দামের বিষয়ে সরকার যেমন জনস্বার্থ দেখছে, তেমনি ব্যবসায়ীদের স্বার্থও দেখবে। ব্যবসায়ীরা আইনগতভাবে ব্যবসা করবেন; আবার যারা রিং ব্যবহার করছেন, তাদের ওপর যাতে বাড়তি কোনো চাপ না পড়ে, অস্বাভাবিক দামে যাতে কিনতে না হয়, সেটিও দেখতে হবে।

এদিকে বৈঠকের আগে সচিবালয়ে নিজ কার্যালয়ের বাইরে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ওষুধ ও হার্টের রিংয়ের দাম কমাতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ওষুধের দাম হঠাৎ বেড়ে গেছে। এটি কমাতে হবে।
ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের উপপরিচালক নুরুল আলম বলেন, গত বছরের ১২ ডিসেম্বর হার্টের রিংয়ের যে দাম নির্ধারণ করা হয়েছিল, সে দামেই বিক্রি করতে হবে বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মূল্য নির্ধারণ কমিটির এক সদস্য বলেন, নতুন করে দাম কমছে না, বাড়ছেও না। এরপর দামের বিষয়ে আলোচনার প্রয়োজন হলে স্টেন্ট আমদানিকারকদের সঙ্গে বৈঠক করবে না ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর; মূল কোম্পানির প্রতিনিধির সঙ্গে বসবে। 

১২ ডিসেম্বর ২৭টি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের ৪৪ ধরনের হার্টের রিংয়ের দাম কমায় ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর। রিংপ্রতি ৩ শতাংশ থেকে ৪৬ শতাংশ পর্যন্ত দাম কমানো হয়। কিন্তু সেই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের দিন থেকেই (১৬ ডিসেম্বর) ইউরোপীয় রিং আমদানিকারকরা দাম পুনর্নির্ধারণের দাবি জানিয়ে হাসপাতালগুলোকে তাদের রিং ব্যবহার না করার জন্য চিঠি দেয়। এর পর থেকে হার্টের রিং পরাতে ভোগান্তিতে পড়েন হৃদরোগে আক্রান্তরা। রিংয়ের দাম পুনর্নির্ধারণ বৈষম্যমূলক উল্লেখ করে নতুন করে নাম নির্ধারণের জন্য হাইকোর্টে রিট করে ইউরোপীয় স্টেন্ট আমদানিকারকরা। তবে দাম পুনর্নির্ধারণের বিষয়ে ঔষধ প্রশাসনের আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে ১০ জানুয়ারি রিট প্রত্যাহার করে নেয় তারা। 

ইউরোপীয় রিং আমদানিকারকরা তখন থেকে বলছে, এই দাম নির্ধারণের ক্ষেত্রে শুধু আমেরিকার তিনটি প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের ২০১৭ সালে মার্কআপ ফর্মুলা অনুসরণ করা হয়েছে। আমদানিকারক বাকি ২৪ প্রতিষ্ঠানের রিংয়ের মূল্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে মার্কআপ ফর্মুলা মানা হয়নি। তাই দাম নতুন করে সমন্বয় না করা পর্যন্ত রিং সরবরাহ ও বিক্রি বন্ধ রেখেছে তারা।
ইউরোপীয় স্টেন্ট আমদানিকারক ও মেডিকেল ডিভাইস ইম্পোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ওয়াসিম আহমদ বলেন, আমরা ঔষধ প্রশাসনের মিটিংয়ে থাকার জন্য ফোন করেছিলাম; কিন্তু তারা আমাদের রাখেনি। তাদের আশ্বাসে আমরা হাইকোর্ট থেকে রিট প্রত্যাহার করেছি, আর এখন তারা দাম বাড়াল না। এখন আমরা কী করব, জানি না। আমেরিকান স্টেন্ট আমদানিকারক তিন কোম্পানিকে সুবিধা দিতেই তারা এটি করল। 
হাসপাতালে ইউরোপীয় স্টেন্ট এখন থেকে ব্যবহার করতে পারবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি।

 

আরও পড়ুন

×