ঢাকা রবিবার, ০৬ জুলাই ২০২৫

মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সংরক্ষণে সেক্টরভিত্তিক ডকুমেন্টরি

চলতি বছরেই তৈরির কাজ সম্পন্ন করতে চায় মন্ত্রণালয়

মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সংরক্ষণে সেক্টরভিত্তিক ডকুমেন্টরি

ফাইল ছবি

আবু সালেহ রনি

প্রকাশ: ০১ এপ্রিল ২০২৪ | ২৩:৪০

মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত ইতিহাস ডিজিটাল মাধ্যমে সংরক্ষণের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনার জন্য বাংলাদেশের রণাঙ্গনে সৃষ্ট ১০টি যুদ্ধ বিভাগ বা সেক্টরের পৃথক ডকুমেন্টরি তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। পাশাপাশি প্রথিতযশা বা দেশবরেণ্য চার বীর মুক্তিযোদ্ধা ও দু’জন বীরাঙ্গনাকে নিয়েও পৃথক ডকুমেন্টরি তৈরি করা হবে। প্রতিটি ডকুমেন্টরির সময়সীমা ৪৫ মিনিট।

স্বাধীনতার ৫৪ বছরে এসে প্রথমবারের মতো বীর মুক্তিযোদ্ধা, বীরাঙ্গনা ও সেক্টরভিত্তিক ডকুমেন্টরি তৈরির এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। চলতি বছরেই এ ডকুমেন্টরি তৈরির কাজ সম্পন্ন করতে চায় মন্ত্রণালয়।

জানা গেছে, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের এক সভায় সম্প্রতি ১৬টি ডকুমেন্টরি তৈরির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ওই সভায় ১৬ জন বিশিষ্ট বীর মুক্তিযোদ্ধা, বীরাঙ্গনার নাম চূড়ান্ত করা হয়েছে। শিগগিরই তাদের সঙ্গে বক্তব্য ধারণের পাশাপাশি ডকুমেন্টরি তৈরির কাজ শুরু করবে মন্ত্রণালয়। সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ডকুমেন্টরিতে বক্তব্য ধারণের জন্য চারজন বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা হলেন– রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন, সাবেক রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক ও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য তোফায়েল আহমেদ। এ ছাড়া সেক্টরভিত্তিক ডকুমেন্টরির জন্য মুক্তিযুদ্ধে খেতাব পাওয়া ৯ জন বীর মুক্তিযোদ্ধার নাম চূড়ান্ত করা হয়েছে। তারা হলেন– জাফর ইমাম বীরবিক্রম, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম, মেজর (অব.) মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম বীরউত্তম, তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বীরবিক্রম, ক্যাপ্টেন (অব.) সাহাবুদ্দিন আহমেদ বীরবিক্রম, মাহবুব উদ্দিন আহমদ বীরবিক্রম, বঙ্গবীর আবদুল কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম, আবদুল ওয়াহেদ চৌধুরী বীরউত্তম ও বীরবিক্রম এবং কাজী সাজ্জাদ আলী জহির বীরপ্রতীক। এ ছাড়া রয়েছেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার। দু’জন বীরাঙ্গনার নাম চূড়ান্ত করার পর্যায়ে রয়েছে।

জানতে চাইলে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক সমকালকে বলেন, ডকুমেন্ট না থাকায় মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে অনেক মিথ্যাচারের জবাব দেওয়া যায় না। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে যেসব ইতিহাস লেখা হয়েছে, সেগুলোও অন্ধের হাতি দেখার মতো। পরিপূর্ণ চিত্র উঠে আসেনি। এ জন্য সেক্টরভিত্তিক ডকুমেন্টরি তৈরির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। শিগগিরই কাজ শুরু হবে।

মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের জুলাই থেকে প্রথম পর্যায়ে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ৮০ হাজার বীর মুক্তিযোদ্ধার সাক্ষাৎকারভিত্তিক তথ্যচিত্র ধারণ ও সংরক্ষণের কার্যক্রম শুরু হয়। এ জন্য গ্রহণ করা হয়েছে ‘বীরের কণ্ঠে বীরগাথা’ শীর্ষক প্রকল্প। ওই প্রকল্পের আওতায় ১৬টি ডকুমেন্টরি তৈরি করা হবে। প্রকল্পের মোট প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৯ কোটি ১৬ লাখ ৩৬ হাজার টাকা। এর আওতায় ইতোমধ্যে বরিশাল ও খুলনা বিভাগের ১৬টি জেলার পাশাপাশি ঢাকা বিভাগের গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর, রাজবাড়ী, শরীয়তপুর, মাদারীপুর ও মুন্সীগঞ্জের ২০ হাজার ৮৩৯ জন বীর মুক্তিযোদ্ধার বীরত্বগাথা ধারণ করা হয়েছে।

১১ জন সেক্টর কমান্ডারের মধ্যে জীবিত আছেন মাত্র দু’জন। তারা হলেন ১ নম্বর সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার মেজর (অব.) মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম বীরউত্তম এবং ৩ নম্বর সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার ও প্রথম সেনাপ্রধান কে এম সফিউল্লাহ বীরউত্তম। মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সাবেক সেনাপ্রধান কে এম সফিউল্লাহসহ জ্যেষ্ঠ মুক্তিযোদ্ধাদের অনেকেই গুরুতর অসুস্থ। সেক্টর কমান্ডাররাও জীবিত নেই। এ জন্য সেক্টরের বিকল্প বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ডকুমেন্টরিতে বক্তব্য ধারণের জন্য মনোনীত করা হয়েছে।
সাক্ষাৎকারে বীর মুক্তিযোদ্ধারা ১৯৭১-এ যুদ্ধে যাওয়ার গল্প, সেক্টরের যুদ্ধকালীন ইতিহাস, যুদ্ধক্ষেত্রের স্মরণীয় ঘটনা, হানাদার-দালাল-রাজাকারদের বর্বরতা, সম্মুখযুদ্ধের বর্ণনা, গণহত্যা, নারী নির্যাতন, অগ্নিসংযোগসহ মুক্তিযুদ্ধের বহুমাত্রিক ইতিহাস তুলে ধরবেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ভাষণে প্রভাবিত হয়ে কীভাবে যুদ্ধে নাম লিখিয়েছিলেন, সে প্রসঙ্গও থাকবে ডকুমেন্টরিতে। বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড ট্রেনিং ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড (এমটিআই) প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপসচিব ও সংশ্লিষ্ট প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ আফরাজুর রহমান বলেন, আমরা চলতি বছরের মধ্যেই প্রকল্পের কাজ শেষ করতে চাচ্ছি। সেভাবে প্রস্তুতি রয়েছে। ইতোমধ্যে প্রায় ২১ হাজার বীর মুক্তিযোদ্ধার স্বকণ্ঠে যুদ্ধবর্ণনা ধারণ করা হয়েছে।

আরও পড়ুন

×