ব্লাস্টের মতবিনিময় সভা
রানা প্লাজা ধসের মামলা দ্রুত নিষ্পত্তিসহ ক্ষতিপূরণ চান ভুক্তভোগীরা

ছবি: সংগৃহীত
সমকাল প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৪ এপ্রিল ২০২৪ | ০৪:১৫
রাজধানীর উপকণ্ঠ সাভারে ২০১৩ সালে রানা প্লাজা ভবন ধসে সহস্রাধিক মৃত্যুর ঘটনায় দায়ের করা মামলার দ্রুত বিচার দাবি করেছেন ভুক্তভোগী পরিবারসহ নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা। এর পাশাপাশি ওই ঘটনায় আহতদের পুনর্বাসন, চিকিৎসা ও ক্ষতিপূরণ নিশ্চিতের দাবি জানানো হয়েছে।
মঙ্গলবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘রানা প্লাজা ভবন ধস: ন্যায় বিচারের অপেক্ষায় ১১ বছর’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় বক্তারা এসব দাবি তুলে ধরেন।
বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড এন্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট) এ সভার আয়োজন করে। সংগঠনের আইন উপদেষ্টা এস এম রেজাউল করিমের সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য দেন প্রধান অতিথি শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান (সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ) এম এ আউয়াল, ব্যারিস্টার অনীক আর হক, ব্লাস্ট পরিচালক (আইন) মো. বরকত আলী, ঢাকার জজ কোর্টের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর বিমল সমাদ্দার, লেবার কোর্ট বারের সাধারণ সম্পাদক মহসিন মজুমদার, ট্রাস্ট ফর ইনজিউরড ওয়ার্কারস মেডিকেল কেয়ার ইনক্লুডিং ট্রাস্টের কো-অর্ডিনেটর মো. শাহরিয়ার রনি প্রমুখ। সভা সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজ-এর নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ।
সভায় রানা প্লাজা ভবন ধসে ভুক্তভোগী নিলুফা বেগম, শিলা বেগম, মিনু বেগম ও দয়াল সূত্রধরও বক্তব্য রাখেন। তারা মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করে আসামিদের শাস্তির দাবি করেন। এর পাশাপাশি আহত শ্রমিকদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসন নিশ্চিতের জোর দাবি জানান।
আলোচ্য বিষয়ে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ব্লাস্টের আইনজীবী সিফাত-ই-নূর খানম। তিনি রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় দায়ের করা ১১টি মামলার তথ্যাদি জানিয়ে দ্রুত বিচার নিষ্পত্তিতে করণীয় তুলে ধরেন। এজন্য আইনের প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনার এবং শ্রমিকদের স্বার্থে স্বাস্থ্যসুরক্ষা নীতিমালার বাস্তবায়ন ও তদারকি জোরদারের আহ্বান জানান।
প্রধান অতিথি এম এ আউয়াল (সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ) বলেন, ঢাকা জজ কোর্টের মামলায় ৫৯৪ জনের সাক্ষ্য গ্রহণের প্রতিবন্ধকতা নিরসন করার জন্য শুধুমাত্র গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষীদের সাক্ষ্যগ্রহণ করেও মামলা নিষ্পত্তি করা সম্ভব। সর্বোপরি আদালতের সদিচ্ছা থাকলে মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করা যাবে। তিনি শ্রম আদালতে চলমান ১১টি মামলার দ্রুত নিষ্পত্তির বিষয়ে আশ্বস্ত করেন।
ব্যারিস্টার অনীক আর হক জানান, হাইকোর্ট বিভাগে বিচারাধীন ৪টি রিট মামলা রয়েছে, যার কোনোটিরই শুনানি গত বছরের আগে শুরু হয়নি।
তিনি আরও জানান, রিটগুলো শুনানির জন্য উচ্চ আদালতের নজরে নেওয়া হবে। এ বছর নির্দেশনা পাওয়া যেতে পারে।
বিমল সমাদ্দার বলেন, ফৌজদারি মামলাসমূহের ৫৯৪ জন সাক্ষী, যারা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বসবাস করছেন। তাদেরকে আদালতে হাজির করাটা অনেক বড় প্রতিবন্ধকতা। তাদের আদালতে যাতায়াতের ভাতা সরবরাহ করা রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী হিসেবে ব্যবস্থা করা কষ্টসাধ্য। তিনি সাক্ষীদের আদালতে উপস্থিতি নিশ্চিতের জন্য শ্রমিক নেতাদের সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন।
ব্লাস্ট পরিচালক (আইন) মো. বরকত আলী বলেন, ২০১৩ সালের ঘটনাটি হত্যকাণ্ড না দুর্ঘটনা, তা নিয়ে অনেকের মধ্যে দ্বিধাদ্বন্দ্ব থাকলেও ঘটনা পর্যবেক্ষণে একে হত্যাকাণ্ড বললে ভুল বলা হয় না। আইনের সঠিক প্রয়োগের অভাব এবং প্রয়োজনীয় আইন না থাকার কারণে এই ধরনের ঘটনা প্রতিনিয়তই হয়ে আসছে। ১১ বছর পরও নিহত শ্রমিকের পরিবার এবং আহত শ্রমিক এখনও আইনানুগ ক্ষতিপূরণ পায়নি। এক্ষেত্রে তাদের ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত এবং ন্যয়বিচার পাওয়ার লক্ষে সংশ্লিষ্ট অংশীজনের দায়িত্বসমূহ নিয়ে সকলের সচেতন এবং সক্রিয় ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান তিনি।
সভাপতির বক্তব্যে এস এম রেজাউল করিম বলেন, সকল শ্রমিক সংগঠন, সুশীল সমাজ সংগঠনকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। সবার সহযোগিতায় রানা প্লাজার মামলাসমূহ এক যুগ পূর্তির আগেই নিষ্পত্তি হবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
- বিষয় :
- রানা প্লাজা