টোল ফ্রি হটলাইনে মানুষের অনাগ্রহ
জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থা

প্রতীকী ছবি
আবু সালেহ রনি
প্রকাশ: ২৭ এপ্রিল ২০২৪ | ২২:৪৩ | আপডেট: ২৮ এপ্রিল ২০২৪ | ১৪:৩৫
জামালপুরের বকশীগঞ্জ উপজেলার ত্রিশোর্ধ্ব আলেয়া খাতুন স্বামীর নির্যাতন সইতে না পেরে শ্বশুরবাড়ি ছাড়েন গত অক্টোবরে। পাঁচ বছরের মেয়েকে নিয়ে আশ্রয় নেন বিধবা মায়ের সংসারে। পরে স্বামীর কাছে তাঁর ও সন্তানের ভরণপোষণ আদায়ের চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। খরচের কথা ভেবে মামলা করার উদ্যোগ নেননি। এরই মধ্যে একদিন তিনি প্রতিবেশীর বাসায় বাংলাদেশ টেলিভিশনে (বিটিভি) জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থার বিজ্ঞাপন দেখেন এবং সেখান থেকে সংস্থার কল সেন্টারের নম্বর নিয়ে ফোন দেন। এতেই স্বস্তি ফেরে আলেয়া খাতুনের সংসারে।
সমকালকে তিনি জানান, কল সেন্টারে ফোন দেওয়ার পর তারা জামালপুরে আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থার (লিগ্যাল এইড) কর্মকর্তার কাছে কলটি ট্রান্সফার করে। লিগ্যাল এইড কর্মকর্তা মনোযোগ দিয়ে তাঁর কথা শোনেন এবং তাঁর স্বামীর মোবাইল ফোন নম্বর নেন। পরে তাঁর স্বামী ও তাঁকে জামালপুর লিগ্যাল এইড অফিসে যেতে বলা হয়। সেখানে যাওয়ার পর সমঝোতার ভিত্তিতে তিনি সন্তানসহ স্বামীর সংসারে ফিরে যান। তাঁর সংসারে আনন্দ ফিরে আসে।
শুধু আলেয়া খাতুন নন, সারাদেশে পারিবারিক বিরোধ থেকে শুরু করে বিভিন্ন আইনি বিষয়ে লিগ্যাল এইডের কল সেন্টারের মাধ্যমে সমাধান পাচ্ছেন বহু মানুষ। এমন পরিস্থিতিতে আজ রোববার দেশব্যাপী পালিত হচ্ছে জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবস। দিবসটি উপলক্ষে পৃথক বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দিবসের এবারের প্রতিপাদ্য– ‘স্মার্ট লিগ্যাল এইড, স্মার্ট দেশ, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ’। আজ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তন ও ৬৪ জেলায় লিগ্যাল এইড কার্যালয়ের উদ্যোগে শোভাযাত্রা ও আলোচনা সভা হবে।
২০০০ সালের ২৮ এপ্রিল জাতীয় সংসদে আইনগত সহায়তা প্রদান আইন পাস হওয়ার পর ২০০১ সালে জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থা প্রতিষ্ঠা করে সরকার। কিন্তু জনবল ও বিধির অভাবে প্রায় আট বছর অকার্যকর ছিল সংস্থাটি। ২০০৯ সালে সংস্থাটিকে ঢেলে সাজানো হয়। ‘টোল ফ্রি হটলাইন’ নম্বর ১৬৪৩০ চালু হয় ২০১৬ সালের ২৮ এপ্রিল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই কার্যক্রম উদ্বোধনের পর ১ লাখ ৬৪ হাজার ৮৯৭ জন ওই নম্বরে কল করে আইনি সহায়তা নিয়েছেন, যার মধ্যে শিশু ২ হাজার ১৪৯। কিন্তু নানা কারণে এই সেবা কার্যক্রম নিয়ে জনগণের মধ্যে অনাগ্রহ দেখা দিয়েছে।
লিগ্যাল এইডের পরিসংখ্যান বলছে, কল সেন্টার চালুর পর ২০২৩ সালে সবচেয়ে কম মানুষ সেবা নিয়েছেন। ওই বছর আইনি সেবা গ্রহণ করেন ১০ হাজার ৩২০ জন। অথচ তার আগের বছর কল সেন্টারের মাধ্যমে ১৯ হাজার ৪৫৮ জন সেবা নেন। সবেচেয়ে বেশি সেবা নেন ২০১৯ সালে, ৩৫ হাজার ২৭৬ জন। হঠাৎ করে কল সেন্টারে সেবা গ্রহণের হার কমার কারণ খুঁজতে গিয়ে জানা যায়, আগে ২৪ ঘণ্টাই কল সেন্টার চালু থাকত। কিন্তু ২০২৩ সাল থেকে শুধু সরকারি কার্যদিবসে অফিস সময়ে অর্থাৎ সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত কল সেন্টারে আইনি সেবা দেওয়া হচ্ছে। ঢাকার বেইলি রোডে লিগ্যাল এইড কার্যালয় থেকে কল সেন্টারের কার্যক্রম পরিচালিত হয়। ২০১৬ সালে কল সেন্টার চালু করার পর এটি পরিচালনায় ছয়জন হেল্পলাইন অফিসার ও একটি মেইনটেন্যান্স ইঞ্জিনিয়ারের পদ তৈরি করা হয়। কিন্তু ওইসব পদে কোনো নিয়োগ এখনও হয়নি। শুরুর দিকে এটি চলে লিগ্যাল এইড কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিজস্ব ব্যবস্থপনায়। তবে বর্তমানে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৫ শিক্ষার্থীকে দিয়ে এর কার্যক্রম চালছে। তারা লিগ্যাল এইডে ইন্টার্নশিপ করছেন।
এ বিষয়ে লিগ্যাল এইড পরিচালক (সিনিয়র জেলা জজ) মোহাম্মদ আল মামুন সমকালকে বলেন, ‘বিনামূল্যে আইনি সেবা দেওয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম টোল ফ্রি হটলাইন নম্বর। ফোনে যাদের পূর্ণাঙ্গ সেবা দেওয়া সম্ভব হয় না, তাদের সংশ্লিষ্ট জেলা লিগ্যাল এইড কার্যালয়ের মাধ্যমে সেবা দেওয়া হয়। এই কার্যক্রম পরিচালনায় নিজস্ব জনবলের কিছু সমস্যা রয়েছে। সমস্যা সমাধানে ইতোমধ্যে ৭টি পদ সৃষ্টি করা হয়েছে। শিগগির নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে।’ তিনি জানান, নিয়োগ সম্পন্ন হলে রোটেশন পদ্ধতিতে ২৪ ঘণ্টাই কল সেন্টারের কার্যক্রম চালু রাখা হবে।
লিগ্যাল এইডের তথ্য অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি হেল্পলাইনের ১৬৪৩০ নম্বরে বিনা খরচে ফোন করে প্রাথমিক আইনি পরামর্শ ও সেবা গ্রহণ করতে পারেন। ছুটির দিন ছাড়া প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত এ সেবা দেওয়া হয়। কল সেন্টার ছাড়াও দেশের ৬৪ জেলা লিগ্যাল এইড কার্যালয়ে বিনামূল্যে আইনি সেবা দেওয়া হয়। জেলা লিগ্যাল এইড কার্যালয় থেকে ২০০৯ সাল থেকে গত ৩১ মার্চ পর্যন্ত আইনগত সহায়তা নেওয়া নারী, পুরুষ ও শিশুর সংখ্যা ১০ লাখ ২২ হাজার ৯৫৮ জন। জেলার পাশাপাশি ২০১৫ সালের ৮ সেপ্টেম্বর থেকে সুপ্রিম কোর্টেও সরকারি খরচে আইনি সহায়তা দেওয়া হয়। গত ৩১ মার্চ পর্যন্ত উচ্চ আদালতে ৩ হাজার ১০৫টি মামলা সরকারি খরচে পরিচালিত হয়। লিগ্যাল এইডের নীতিমালা অনুযায়ী, ‘অসচ্ছল বা আর্থিকভাবে অসচ্ছল ব্যক্তি’ এই সহায়তা নিতে পারেন।
- বিষয় :
- আইনগত ব্যবস্থা