ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

সংসদে প্রশ্নোত্তরে শিল্পমন্ত্রী

সরকারি ২৮ শিল্পপ্রতিষ্ঠান চলছে লোকসানে

সরকারি ২৮ শিল্পপ্রতিষ্ঠান চলছে লোকসানে

ইনসার্টে শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন

সমকাল ডেস্ক

প্রকাশ: ০৭ মে ২০২৪ | ১৯:১১ | আপডেট: ০৭ মে ২০২৪ | ২০:৫৫

শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন জানিয়েছেন, দেশে সরকারি মালিকানাধীন ২৮টি শিল্পপ্রতিষ্ঠান লোকসানে চলছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে– বাংলাদেশ ইস্পাত ও প্রকৌশল করপোরেশনের (বিএসইসি) অধীন চারটি, বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের (বিএসএফআইসি) নিয়ন্ত্রণাধীন ১৫টি এবং বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের (বিসিআইসি) অধীন ৯টি প্রতিষ্ঠান।

মঙ্গলবার জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে ফরিদপুর-৩ আসনের এমপি আবদুল কাদের আজাদের (এ. কে. আজাদ) তারকাচিহ্নিত প্রশ্নের জবাবে শিল্পমন্ত্রী এই তথ্য জানান। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

লোকসানি শিল্পপ্রতিষ্ঠান খাতে সরকার কত টাকা ভর্তুকি দিচ্ছে এবং ভর্তুকি থেকে বের হওয়ার উপায় কী– আবদুল কাদের আজাদের এ প্রশ্নের জবাবে শিল্পমন্ত্রী আরও বলেন, লোকসানি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দুটি ভর্তুকির আওতায় পরিচালিত হচ্ছে। লোকসানি প্রতিষ্ঠানগুলোর লোকসান কমাতে বা ভর্তুকি থেকে বের হতে শিল্প মন্ত্রণালয় থেকে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

সংসদে দেওয়া শিল্পমন্ত্রীর তথ্য অনুযায়ী, বিএসইসির অধীন গাজীপুরের টঙ্গীতে অবস্থিত এটলাস বাংলাদেশ লিমিটেড, বাংলাদেশ ব্লেড ফ্যাক্টরি লিমিটেড ও ন্যাশনাল টিউবস লিমিটেড এবং ঢাকার তেজগাঁওয়ে ইস্টার্ন টিউবস লিমিটেড লোকসানে চলছে। বিএসএফআইসির নিয়ন্ত্রণাধীন ১৬টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৫টিই লোকসানি হিসাবে পরিচালিত হচ্ছে।

বিসিআইসির অধীন লোকসানি প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে– শাহজালাল ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেড (এসএফসিএল), আশুগঞ্জ ফার্টিলাইজার অ্যান্ড কেমিক্যাল কোম্পানি লিমিটেড (এএফসিসিএল), যমুনা ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেড (জেএফসিএল), চিটাগাং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেড (সিইউএফএল), ঘোড়াশাল পলাশ ফার্টিলাইজার পিএলসি (জিপিএফপিএলসি), ছাতক সিমেন্ট কোম্পানি লিমিটেড (সিসিসিএল), কর্ণফুলী পেপার মিলস লিমিটেড (কেপিএমএল), বাংলাদেশ ইনসুলেটর অ্যান্ড স্যানিটারিওয়্যার ফ্যাক্টরি লিমিটেড (বিআইএসএফএল) এবং উসমানিয়া গ্লাসশিট ফ্যাক্টরি লিমিটেড (ইউজিএসএফএল)।

শিল্পমন্ত্রী জানান, ভর্তুকি থেকে বের হওয়ার জন্য মন্ত্রণালয় থেকে উৎপাদন বাড়ানোর জন্য নতুন মেশিন সংস্থাপন, স্মার্ট প্রযুক্তি প্রয়োগে উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ, পণ্যের বহুমুখীকরণ, পণ্যের বিপণনে ই-শপ প্রস্তুতসহ বিভাগীয় শহরে শোরুম ও সার্ভিস সেন্টার স্থাপনের পরিকল্পনা, ডিলার সংখ্যা বৃদ্ধি, প্রশিক্ষণ, কর্মশালার মাধ্যমে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দক্ষতা বৃদ্ধি ও ই-কমার্স সাইট তৈরির কার্যক্রম গ্রহণ, বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক পত্রিকা, টিভি চ্যানেল, সোশ্যাল মিডিয়াসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থার ওয়েবসাইটের মাধ্যমে উৎপাদিত পণ্যের ব্যাপক প্রচার কার্যক্রমের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া বিএসএফআইসির নিয়ন্ত্রণাধীন লোকসানি প্রতিষ্ঠানগুলোর ভর্তুকি থেকে বের হওয়াসহ লোকসান কমানোর লক্ষ্যে পাঁচ বছর মেয়াদি রোডম্যাপ প্রণয়ন করা হয়েছে, যা বর্তমানে বাস্তবায়নাধীন।

মন্ত্রী জানান, বিসিআইসির অধীন প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে টিএসপিসিএল ও ডিএপিএফসিএল ভর্তুকির আওতায় পরিচালিত। ২০২২-২৩ অর্থবছরে টিএসপিসিএল এবং ডিএপিএফসিএল মোট ১ হাজার ৭৭৭ কোটি ৩৩ লাখ টাকা ভর্তুকি পেয়েছে। ভর্তুকি থেকে বের হওয়ার জন্য সার কারখানাগুলোর প্রধান কাঁচামাল প্রাকৃতিক গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করে উৎপাদন এবং সারের বিক্রয়মূল্য বাড়ানো হয়েছে।
আবদুল কাদের আজাদের তারকাচিহ্নিত অপর প্রশ্নের জবাবে শিল্পমন্ত্রী জানান, ১৯৮৭ সালে ১৫ দশমিক ৬ একর জমিতে বাস্তবায়িত ফরিদপুরের বিসিক শিল্পনগরীতে ১০৭টি শিল্পপ্লট রয়েছে। এসব প্লট ৪২টি শিল্পপ্রতিষ্ঠানের অনুকূলে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। সেখানে অব্যবহৃত শিল্পপ্লট নেই।

অচিরেই সবাইকে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎসুবিধা দেওয়ার আশা প্রতিমন্ত্রীর

সংসদের বৈঠকে স্বতন্ত্র সদস্য আবদুল কাদের আজাদের এক প্রশ্নের জবাবে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। তবে অত্যধিক গরম ও দেশের কোথাও কোথাও তাপদাহ থাকার কারণে বিদ্যুতের চাহিদা ব্যাপক বেড়েছে। ফলে কোথাও কোথাও নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না। 

তিনি বলেন, চাহিদা থাকায় বিদ্যুতের উৎপাদন বাড়ানোর ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে। আশা করছি, অচিরেই সবাইকে নিরবচ্ছিন্ন ও মানসম্মত বিদ্যুৎ সুবিধা পৌঁছে দিতে সক্ষম হবো।

ফরিদপুর জেলা ও সদর উপজেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ-সংক্রান্ত একই সদস্যের এক প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী জানান, এই জেলায় পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড এবং ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ওজোপাডিকো) বিদ্যুৎ সরবরাহ করছে। বর্তমানে ফরিদপুর জেলায় বিদ্যুতের মোট চাহিদা ২৬৯ মেগাওয়াট। 

তিনি বলেন, ফরিদপুর সদর উপজেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহে ওজোপাডিকো স্থাপিত বিতরণ ট্রান্সফরমারের সংখ্যা ৬৫৯ এবং মোট ক্ষমতা ১১৪ দশমিক ৬৫ এমডিএ। সেখানে বিদ্যুতের চাহিদা ৫৪ মেগাওয়াট এবং স্থাপিত বিতরণ ট্রান্সফরমারের মাধ্যমে চাহিদা অনুযায়ী সুষ্ঠুভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহের সক্ষমতা রয়েছে। তবে গ্রীষ্ম মৌসুমে ফরিদপুর সদরের জনগণকে বৈদ্যুতিক লোডশেডিংসহ বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কবল থেকে রক্ষার জন্য ওজোপাডিকোর বাস্তবায়নাধীন ‘ওয়েস্ট জোন এলাকায় বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থার সম্প্রসারণ ও পরিবর্ধন’ প্রকল্পের আওতায় আরও ২৭টি বিতরণ ট্রান্সফরমার স্থাপনের কাজ চলছে।

আরও পড়ুন

×