ঢাকা শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

সংসদে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী

বিদ্যুৎ বোর্ডের কাছে পাওনা ৩৩ হাজার ১০৮ কোটি

বিদ্যুৎ বোর্ডের কাছে পাওনা ৩৩ হাজার ১০৮ কোটি

ছবি-সংগৃহীত

সমকাল প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৭ মে ২০২৪ | ২০:৫৭

বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বাবিউবো) কাছে সরকারি, বেসরকারি, যৌথ উদ্যোগ, আমদানিসহ উৎপাদন কোম্পানি ও পিজিসিবির পাওনা সর্বমোট ৩৩ হাজার ১০৮ কোটি ৯৯ লাখ টাকা। বিদ্যুৎ বিক্রয়ের বিপরীতে এই বকেয়া বিল পাওনা রয়েছে বলে সংসদকে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু। 

মঙ্গলবার সংসদের বৈঠকে সরকার দলীয় সংসদ সদস্য মামুনুর রশীদ কিরনের প্রশ্নের জবাবে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী এ তথ্য জানান। এর আগে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের বৈঠক শুরু হয়।

বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী বলেন, পিডিবির কাছে ফেব্রুয়ারি ২০২৪ থেকে বিদ্যুৎ বিক্রয় বাবদ বিলের বিপরীতে ২৯ এপ্রিল ২০২৪ পর্যন্ত সরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সঞ্চালন কোম্পানিসমূহের ১০ হাজার ৩৯১ কোটি ৪৩ লাখ টাকা পাওনা রয়েছে। একই সময়ে বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদন কোম্পানিসমূহের ১৫ হাজার ২ কোটি ৪৩ লাখ টাকা বকেয়া পাওনা রয়েছে। 

তিনি জানান, একই সময়ে যৌথ উদ্যোগে স্থাপিত বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রগুলোর পাওনা ২ হাজার ৪১৭ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। আদানিসহ ভারত হতে বিদ্যুৎ আমদানির জন্য বিভিন্ন কোম্পানির পাওনা ৫ হাজার ২৯৭ কোটি ৪৭ লাখ টাকা।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, সম্প্রতি সরকার কর্তৃক বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদন কোম্পানিসমূহের ব্যাংকের নিকট দায় ১৭ হাজার ৫৫৩ কোটি টাকা ভর্তুকির বিপরীতে বন্ড ইস্যুর মাধ্যমে পরিশোধ করা হয়েছে।

স্বতন্ত্র সদস্য আব্দুল্লাহ নাহিদ নিগারের প্রশ্নের জবাবে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে দেশে বিদ্যুতের চাহিদার চেয়েও স্থাপিত উৎপাদন ক্ষমতা বেশি। সরকার ২০০৯ সালে দায়িত্ব গ্রহণের পর বিদ্যুৎ খাতের উন্নয়নে তাৎক্ষণিক, স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করে নিবিড় তদারকির মাধ্যমে বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। জানুয়ারি ২০০৯ হতে বর্তমান সময় পর্যন্ত ২৬ হাজার ২৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছে। ফলে বিদ্যুতের স্থাপিত ক্ষমতা ক্যাপটিভসহ ৩০ হাজার ২৭৭ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। এ বছর ৩০ এপ্রিল ২০২৪ তারিখে সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয়েছে ১৬ হাজার ৪৭৭ মেগাওয়াট।

বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী বলেন, চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতায় ঘাটতি না থাকলেও কোভিড-১৯ মহামারি পরবর্তীতে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ ও বৈশ্বিক জ্বালানি সংকটের কারণে পরিপূর্ণ সক্ষমতায় বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব হচ্ছে না। এর ফলে কিছু কিছু স্থানে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহে সাময়িক অসুবিধা হচ্ছে। এছাড়া অত্যধিক গরম ও দেশের কোথাও কোথাও দাবদাহ থাকার কারণে বিদ্যুতের চাহিদা ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে। চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় উৎপাদন বৃদ্ধির উপরও জোর দেওয়া হচ্ছে। অচিরেই সবাইকে নিরবচ্ছিন্ন ও মানসম্মত বিদ্যুৎ সুবিধা পৌঁছে দিতে সক্ষম হবে বলে আশা প্রকাশ করেন মন্ত্রী।

আহমদ হোসেনের প্রশ্নের জবাবে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ গভীর সমুদ্রে খনিজ সম্পদ আহরণে নিলাম আবেদনে গেছে। ইতোমধ্যে টেন্ডার হয়েছে। এক্সন মবিল, শেভরনসহ ১৭টি কোম্পানি আগ্রহ প্রকাশ করেছে। তারা টুডি জরিপের ফলাফল নিয়েছে। বুধবার তাদের সঙ্গে ফ্রি বিড মিটিং আছে। বিডিং প্রসেস আগামী সেপ্টেম্বরে শেষ হবে। আগামী মাসের মাঝামাঝি সময়ে কোম্পানি নিয়োগ দেওয়া যাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি বলেন, তাঁরা এসব জায়গায় থ্রিডি সার্ভে করবে, ড্রিল করবে। প্রায় ২০ থেকে ৩০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করার পরে ৭-৮ বছর পর সেখানে যদি গ্যাস, তেল থাকে উত্তোলন করা যাবে।

সংরক্ষিত মহিলা এমপি ফরিদা ইয়াসমীন তাঁর প্রশ্নে শিল্প প্রতিষ্ঠানে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস না পাওয়ার অভিযোগ করেছেন শিল্প মালিকরা বলে জানান। একই সঙ্গে তিনি বাসা-বাড়িতে অপ্রতুল গ্যাস পাচ্ছে বলে জানান। 

এমন প্রশ্নের জবাবে জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, দেশে দৈনিক উৎপাদিত গ্যাসের পরিমাণ হলো ১ হাজার ৭০০ ঘনফুট। আমদানি করা হয় ১ হাজার ১০০ ঘনফুট গ্যাস। প্রায় ৩ হাজার ঘনফুট গ্যাস লাইনে দেওয়া যাচ্ছে। প্রয়োজন ৩৪০০-৩৫০০ ঘনফুট। এখানে ঘাটতি ৫০০ ঘনফুট। 

তিনি বলেন, কোন শিল্পপ্রতিষ্ঠানে গ্যাস পাচ্ছে না সেটা লিখিতভাবে জানান। কোন কোম্পানি গ্যাস পায় না এমন লিখিত অভিযোগ সরকারের কাছে আসেনি। সরকার চেষ্টা করছে সেখানে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস রাখার জন্য। বাসা-বাড়িতে গ্যাসের সমস্যা আছে। চাপের সমস্যা আছে। সেকারণে বিকল্প এলপিজি ব্যবহারের কথা বলা হয়েছে। বাসাবাড়িতে গ্যাসের সংযোগ দিচ্ছি না বা দেব না। সরকারের উদ্দেশ্য হল পাইপলাইনের গ্যাস শিল্প ও বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহার করা হবে। এলপিজি বাসা-বাড়ি, গাড়িতে ব্যবহারের পরিকল্পনা ভবিষ্যতে সরকারের রয়েছে।  

বিরোধী দলীয় চীফ হুইপ মুজিবুল হক চুন্নুর প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, সারাদেশে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ থাকলেও বৃহত্তর ময়মনসিংহে সমস্যা হচ্ছে। কারণ সেখানে গ্যাসের স্বল্পতা। জামালপুরের দুটো বিদ্যুৎ প্ল্যান্ট বন্ধ আছে। একটি টাকার কারণে এলসি খোলা যাচ্ছে না। আরেকটি অন্য কারণে বন্ধ আছে বলে জানান তিনি।

ফরিদপুর-৩ আসনের স্বতন্ত্র এমপি এ. কে. আজাদের প্রশ্নের উত্তরে শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন বলেন, বাংলাদেশ ইস্পাত ও প্রকৌশল কর্পোরেশনের (বিএসইসি) অধীনে চালু ৯টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৪টি লোকসানি শিল্পপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। সেগুলো হলো এটলাস বাংলাদেশ লিমিটেড, বাংলাদেশ ব্লেড ফ্যাক্টরি লিমিটেড, ইস্টার্ন টিউবস লিমিটেড ও ন্যাশনাল টিউবস লিমিটেড। বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোশেনের (বিএসএফআইসি) নিয়ন্ত্রনাধীন ১৬টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৫টি লোকসানে পরিচালিত হচ্ছে। ২০১৮ সালের পর হতে সরকার এ খাতে কোনো ভর্তুকি দিচ্ছে না বলেও জানান।

২০২২-২৩ অর্থবছরের হিসাব বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের (বিসিআইসি) ৯টি লোকসানি প্রতিষ্ঠান রয়েছে বলে জানান শিল্পমন্ত্রী। তিনি বলেন, ইউরিয়া সার কারখানা সমূহের প্রধান কাঁচামাল প্রাকৃতিক গ্যাসের অপ্রতুলতায় উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়ায় কারখাানাগুলো লোকসানে আছে। বিসিআইসি কর্তৃক প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ২টি প্রতিষ্ঠান টিএসপিসিএল ও ডিএপিএফসিএল ভর্তুকির আওতায় পরিচালিত। আন্যান্য প্রতিষ্ঠানের জন্য ভর্তুকি পাওয়া যায় না। ২০২২-২৩ অর্থবছরে প্রতিষ্ঠান দুটোর জন্য ১ হাজার ৭৭৭ কোটি ৩৩ লাখ টাকা ভর্তুকি পেয়েছে।

২০২১-২২ অর্থবছরে পল্লী বিদ্যুতের লোকসান ৫২৩ কোটি ৭৯ লাখ  

ফেনী-২ আসনের সরকার দলীয় এমপি নিজাম উদ্দিন হাজারীর প্রশ্নের জবাবে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী জানান, ২০২১-২২ অর্থবছরে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের আওতাধীন ৮০টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির লোকসান ৫২৩ কোটি ৭৯ লাখ ১৩ হাজার ২৯ টাকা। ২০২১-২২ অর্থবছরে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির আয় ৩১ হাজার ২৪৮ কোটি ১১ লাখ ৯১ হাজার ৪১৭ কোটি টাকা। ব্যয় হয়েছে ৩১ হাজার ৭৭১ কোটি ৯১ লাখ ৪ হাজার ৪৪৭ টাকা। আর ২০২০-২১ অর্থবছরে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মুনাফা হয়েছিল ৫০ কেটি ১১ লাখ ৯৯ হাজার ৮৪৬ কোটি টাকা। এই সময়ে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির আয় হয়েছিল ২৮ হাজার ৭১৫ কোটি ৩০ লাখ ৬৮ হাজার ৮৩৬ টাকা। আর ব্যয় হয়েছিল ২৮ হাজার ৬৬৫ কোটি ১৮ লাখ ৬৮ হাজার ৯৮৯ টাকা।

২০২১-২২ অর্থবছরের লোকসানের মূল কারণ হিসাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, খুচরা মূল্যহার পাইকারি মূল্যহারের চেয়ে কম হওয়া। ভবিষ্যতে মূল্য সমন্বয় হলে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিসমূহ লোকসান থেকে মুক্ত হবে।

সরকার দলীয় এমপি আনোয়ার হোসেন খানের প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, দেশের বিভিন্ন স্থানে ৬৯ টি অনুসন্ধান এবং উন্নয়ন কূপ খননের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এর মদ্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে ৬ টি কূপ খননের পরিকল্পনা রয়েছে।

সরকার দলীয় এমপি হাবিবুর রহমানের প্রশ্নের জবাবে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী বলেন, দেশে কয়লাভিত্তিক ৪ হাজার ৮৫৮ মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুৎ কেন্দ্র বর্তমানে চালু আছে। প্রতিবেশী ভারত হতে ২ হাজার ৬৫৬ মেগাওয়াট ক্ষমতার কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ আমদানি করা হচ্ছে। ৩ হাজার ৭০১ মেগাওয়াট ক্ষমতার কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণাধীন রয়েছে।

আরও পড়ুন

×