মতপ্রকাশের স্বাধীনতা
দক্ষিণ এশিয়ার আট দেশের মধ্যে বাংলাদেশ সপ্তম

ফাইল ছবি
সমকাল প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২২ মে ২০২৪ | ০০:৪১
মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ক্ষেত্রে দক্ষিণ এশিয়ার আটটি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান সপ্তম। বাংলাদেশ শুধু আফগানিস্তানের চেয়ে এগিয়ে আছে। বিশ্বে ১৬১টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১২৮তম। আন্তর্জাতিক সংস্থা আর্টিকেল নাইন্টিনের প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর গুলশানে হোটেল লেকশোর হাইটসে সংবাদ সম্মেলনে সারাবিশ্বে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ে প্রতিবেদনের তথ্য তুলে ধরা হয়। আর্টিকেল নাইন্টিনের বাংলাদেশ ও দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক শেখ মঞ্জুর-ই-আলম এটি প্রকাশ করেন। ১৬১টি দেশের ২৫টি সূচক ব্যবহার করে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা পরিমাপ করেছে সংস্থাটি। এসব দেশে একযোগে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের মতপ্রকাশ স্কোর বা জিআরএক্স স্কোর ১২। গত পাঁচ বছরে বাংলাদেশের স্কোর ১১ ও ১২-এর মধ্যে আটকে আছে। গত ১০ বছরে স্কোর কমেছে ৮ পয়েন্ট, আর দুই যুগে কমেছে ৩২ পয়েন্ট। ২০২২ সালে বৈশ্বিক অবস্থান ছিল ১৩০তম।
মতপ্রকাশের স্বাধীনতায় বিশ্বে শীর্ষে ডেনমার্ক। দেশটির স্কোর ৯৫। শীর্ষ ১০ দেশের মধ্যে এর পর আছে যথাক্রমে– সুইজারল্যান্ড (৯৩), সুইডেন (৯৩), বেলজিয়াম (৯২), এস্তোনিয়া (৯২), নরওয়ে (৯২), ফিনল্যান্ড (৯১), আয়ারল্যান্ড (৯১), জার্মানি (৮৯) ও আইসল্যান্ড (৮৮)। দক্ষিণ এশিয়ায় শীর্ষে নেপাল (স্কোর ৫৭)। এরপর আছে মালদ্বীপ (৫১), শ্রীলঙ্কা (৪৪), ভুটান (৩৭), পাকিস্তান (৩৩), ভারত (১৯)।
বিশ্বে সবচেয়ে খারাপ অবস্থানে উত্তর কোরিয়া (স্কোর ০)। এ ছাড়া ইরিথ্রিয়া, নিকারাগুয়া, বেলারুশ এবং তুর্কমেনিস্তানের স্কোর ১। চীন, আফগানিস্তান, সিরিয়া এবং মিয়ানমারের স্কোর ২। কিউবা, তাজিকিস্তান এবং সৌদি আরবের স্কোর ৩। ইরান, রাশিয়া, ইকুয়েটেরিয়াল গিনি ও কাতারের স্কোর ৪।
প্রতিবেদনে ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক স্বাধীনতাবিষয়ক পাঁচটি সূচকের বছরওয়ারি চিত্রে দেখা যায়, বাংলাদেশে পাঁচটি সূচকের দুটির স্কোর ইতিবাচক। এর একটি হচ্ছে ধর্ম পালনের স্বাধীনতা, আরেকটি হলো নারী-পুরুষের আলোচনার স্বাধীনতা। এই ক্যাটেগরিতে বিবেচিত বাকি তিন সূচকের স্কোর ২০১৪ সালের পর থেকে নেতিবাচক। সবচেয়ে খারাপ অবস্থা সভা-সমাবেশ করার স্বাধীনতার সূচকে। এর চেয়ে এগিয়ে রয়েছে একাডেমিক ও সাংস্কৃতিক মতপ্রকাশের স্বাধীনতার সূচকে।
গণমাধ্যমের স্বাধীনতাবিষয়ক তিনটি সূচকের বছরওয়ারি চিত্রে দেখা যায়, বাংলাদেশের তিনটি সূচকের স্কোরই ঋণাত্মক। সবচেয়ে বেশি খারাপ অবস্থা সাংবাদিকদের হয়রানিমুক্ত পরিবেশে কাজ করার স্বাধীনতার সূচকটিতে। ২০০৭ সালের পর থেকে দেশে সাংবাদিকদের হয়রানিমুক্ত পরিবেশের সূচকটি ঋণাত্মক স্কোর করতে শুরু করে এবং গণমাধ্যমের সেলফ সেন্সরশিপের স্কোরও নেতিবাচক হয়ে পড়ে। এই প্রবণতা দেড় দেশকের বেশি সময় ধরে অব্যাহত রয়েছে।
তবে নাগরিক অংশগ্রহণ ও নাগরিক সংগঠন ক্যাটেগরিতে ব্যবহৃত পাঁচটি সূচকে বাংলাদেশ ইতিবাচক স্কোর করেছে। নাগরিক সংগঠনের ওপর নিপীড়ন সূচকের স্কোর ঋণাত্মক। মানহানির মামলা দিয়ে হয়রানির সূচকে ঋণাত্মক স্কোর বা সবচেয়ে খারাপ অবস্থা বাংলাদেশের। ২০০৬ সালের পর থেকেই নেতিবাচক স্কোরের প্রবণতা দেখা যাচ্ছে বলে রিপোর্টে উঠে এসেছে।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান, দৈনিক প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক সোহরাব হাসান এবং বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
ইফতেখারুজ্জামান বলেন, বর্তমানে কিছু মানুষের অবারিত মতপ্রকাশের স্বাধীনতা রয়েছে। তারা যা খুশি তাই বলতে পারেন। কিন্তু বাকিদের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রয়েছে। রাজনৈতিক হত্যা অব্যাহত রয়েছে। গণমাধ্যম কর্মীরা হয়রানি হন। এ ছাড়া আইনি, নীতিগত ও প্রাতিষ্ঠানিকভাবে গণমাধ্যমকর্মীদের জন্য প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হয়েছে।
- বিষয় :
- মতপ্রকাশের স্বাধীনতা