ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

সর্বজনীন পেনশন

এটি আমাদের বাঁচা মরার লড়াই, মানববন্ধনে ঢাবি শিক্ষকরা 

এটি আমাদের বাঁচা মরার লড়াই, মানববন্ধনে ঢাবি শিক্ষকরা 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে মানববন্ধন। ছবি: সমকাল

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৬ মে ২০২৪ | ১৮:৩৭ | আপডেট: ২৬ মে ২০২৪ | ১৮:৫৯

সর্বজনীন পেনশনের প্রত্যয় স্কিমে অন্তুর্ভুক্তিকরণ সংক্রান্ত অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহারের দাবিতে পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী দেশব্যাপী মানববন্ধন করেছেন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। আগামী জুলাই থেকে এটি চালু হওয়ার কথা রয়েছে। তবে এটি চালু হলে ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ করে কর্মবিরতিতে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষক নেতারা। 

আজ রোববার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) শিক্ষক সমিতির (ডুটা) ব্যানারে মানববন্ধনে অংশ নেন প্রায় দুইশত ঢাবি শিক্ষক। 
 
মানববন্ধন থেকে তারা বেশ কয়েকটি ধারাবাহিক কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন। কর্মসূচিগুলো হলো, সোমবারের মধ্যে প্রত্যাহার না হলে আগামী ২৮ মে থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত কর্মবিরতি; কোনো চেয়ারম্যান, প্রাধ্যক্ষ, ডিন অফিসে যাবেন না। এরপর ক্রমান্বয়ে শিক্ষামন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রী এবং রাষ্ট্রপতিকে স্মারকলিপি প্রদান। ৩ জুলাইয়ের মধ্যে প্রত্যাহার না হলে সকল অফিস আধাবেলা কর্মবিরতি পালন। আর পহেলা জুলাই থেকে ক্লাস-পরীক্ষাসহ সকল অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ। 
 
এ সময় শিক্ষকরা বলেন, দেশের বৃহৎ জনগোষ্ঠী যারা পেনশনের আওতায় ছিল না। তাদের জন্য সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালু হলে আমরা সবাই এটিকে স্বাগত জানিয়েছি। কিন্তু আমরা যারা আগে থেকেই পেনশনের অধীন ছিলাম। আমাদেরকে এটির অন্তর্ভুক্ত করার মাধ্যমে আমাদের অধিকার ক্ষুণ্ন হয়েছে, মর্যাদা অবনমন করা হয়েছে। সর্বোপরি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে অস্থিতিশীল পরিবেশের দিকে ধাবিত করা হচ্ছে। যার ফলে আমরা দুঃখ ভারাক্রান্ত হৃদয়ে দাঁড়াতে (মানববন্ধনে) বাধ্য হয়েছি। এটি আমাদের বাঁচা মরার লড়াই।   
 
মানববন্ধনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জিনাত হুদা বলেন, ‘আমরা কোনোভাবেই প্রত্যয় স্কিম গ্রহণ করব না। আমরা প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই, কেউ কেউ উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বিশ্ববিদ্যালয়কে অস্থিতিশীল করতে চায়, কারা সেই শক্তি তা খতিয়ে দেখতে হবে। সকল শিক্ষক আজ একত্রিত, সকল শিক্ষক নিজেদের বাঁচা মরার লড়াইয়ে আছেন।’ 
 
ধারাবাহিক কর্মসূচি ঘোষণা করে তিনি বলেন, তবুও এটি বাতিল না হলে পহেলা জুলাই থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সকল ক্লাস বন্ধ হবে, সকল পরীক্ষা স্থগিত হবে। কোনো ধরনের অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম চলবে না। আশাকরি আমাদের এই ধরনের কর্মসূচিতে আমাদের যেতে বাধ্য করবেন না।
 
জিনাত হুদা আরও বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর রক্তের ঋণ শোধরাতে আমরা বিদেশে থাকিনি, পৃথিবীর সমস্ত উচ্চ র‌্যাঙ্কিংধারী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রি নিয়ে আমরা ফিরে এসেছি। হ্যান্ডসাম স্যালারির দিকে আমরা ধাবিত হইনি। আমরা এই দেশকে মেধাবী আমরা খুব নমনীয় গণতান্ত্রিক উপায়ে চলতে চাই। মেধাবী বাংলাদেশ গড়তে চাই। সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।’ 
 
শিক্ষক সমিতির নেতা ও টেলিভিশন ফিল্ম অ্যান্ড ফটোগ্রাফি বিভাগের অধ্যাপক এ জে এম শফিউল আলম ভূঁইয়া বলেন, আমাদের প্রবীণ অর্থনীতিবিদরা এটিকে মূল্যায়ন করেছেন, এটি বৈষম্যমূলক। এর মাধ্যমে শিক্ষকরা আর্থিকভাবে বঞ্চিত হবেন। 
 
ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক ড. আব্দুর রহিম বলেন, আমরা এক ধরনের পেনশন স্কিমে আছি। আমাদের এতে অসন্তুষ্টি ছিল না। তাহলে আমাদের আবার নতুন স্কিমে নেওয়ার কারণ কী। 
 
বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রক্টর অধ্যাপক গোলাম রব্বানী বলেন, যারা এই প্রত্যয় স্কিম রচনা করেছে, আমরা তাদরে জানিয়ে দিতে চাই, আমরাও প্রত্যয়ী। আমরা এটি মেনে নেব না। 
 
সমাবেশের সমাপ্তি টেনে ঢাকা শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক নিজামুল হক ভূঁইয়া বলেন, এই দাবির পেছনে সারাদেশের ৩৫টি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা আজ কর্মসূচি পালন করছেন। এই প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহার করা না হলে আমাদের কর্মসূচি চলবে। 
 
মানববন্ধনে আরও বক্তব্য দেন ডুটার সহ-সভাপতি বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আব্দুস ছামাদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. মিজানুর রহমান, কার্যনির্বাহী সদস্য কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আব্দুল বাছির ও গণিত বিভাগের ড. চন্দ্রনাথ পোদ্দার, ফার্মেসি অনুষদের ভারপ্রাপ্ত ডিন অধ্যাপক ফিরোজ আহমেদ, দর্শন বিভাগের চেয়ারম্যান মোস্তফা কাওসার আবুল উলায়ী, শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক এম ওহিদুজ্জামান।

আরও পড়ুন

×