এজলাস কক্ষে প্রথমবার ক্যামেরা হাতে গণমাধ্যমকর্মীরা
প্রধান বিচারপতির সুসজ্জিত এজলাস উদ্বোধন

প্রধান বিচারপতির এজলাস কক্ষ। ছবি-সমকাল
সমকাল প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১০ জুন ২০২৪ | ২১:৫৩
দেশের সর্বোচ্চ আদালতের প্রধান বিচারপতির এজলাস কক্ষ নানা মাত্রায় সংস্কার ও আধুনিকায়নের পর উদ্বোধন করা হয়েছে। এ উপলক্ষে সোমবার বিকেলে নান্দনিক ও নতুন সাজে সুসজ্জিত এজলাস কক্ষে বসেছিল বিশেষ অধিবেশন।
এদিন প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে সুপ্রিমকোর্টের উভয় বিভাগের বিচারপতি, সাবেক প্রধান বিচারপতি, সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির নেতারা, জ্যেষ্ঠ আইনজীবী, গণমাধ্যমকর্মীসহ অন্যান্য আইন কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে ওঠে আপিল বিভাগের এক নম্বর কক্ষ। এজলাস কক্ষে গণমাধ্যমকর্মীদের শুধু ওই সময়ে ক্যামেরা নিয়ে প্রবেশাধিকারের ছিল বিরল ব্যতিক্রম ঘটনা। আইনজীবীদের অনেকেই মোবাইলে ছবি তোলেন বিশেষ এই দিনের স্মৃতি ধরে রাখেন।
এদিন প্রধান বিচারপতি তার ব্যক্তিগত উদ্যোগে শুধুমাত্র এজলাস কক্ষের ছবি ওঠানো, ভিডিও, লাইভ করার সুযোগ করে দিয়েছিলেন। বিভিন্ন গণমাধ্যম এক ঘণ্টার বিশেষ অধিবেশন লাইভ সম্প্রচার করে। তবে এদিনের পর সুপ্রিমকোর্টের এজলাস কক্ষের কোনো ছবি, ভিডিও ফুটেজ গণমাধ্যমে ভবিষ্যতে আর ব্যবহার করা যাবে না। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও কোনো ছবি আপলোড করা যাবে না বলে অনুষ্ঠানে জানান প্রধান বিচারপতি।
অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্যে প্রধান বিচারপতি বলেন, তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে ভার্চুয়াল কোর্টের মাধ্যমে বিচারকার্য পরিচালনা করতে আপিল বিভাগ এখন সম্পূর্ণ সক্ষম। আজ বাংলাদেশের শীর্ষ আদালত তথা প্রধান বিচারপতির এজলাস কক্ষ সুসজ্জিত হয়ে উঠেছে। এই আয়োজন নতুন দিনের সূচনা মাত্র। এর মধ্যদিয়ে দেশের অধস্তন আদালতের ভৌত অবকাঠামোর উন্নয়ন নতুন করে প্রাণ ফিরে পাবে।
তিনি বলেন, দেশের অধস্তন আদালতে স্বাচ্ছন্দে বিচারপ্রক্রিয়া পরিচালনার স্বার্থে সকল স্থাপনাগুলোর আধুনিকায়ন এবং উন্নয়নের জন্য প্রধানমন্ত্রীর সুবিবেচনা এবং সুদৃষ্টি কামনা করেন। অধিবেশনে বিশেষ বক্তৃতায় প্রধান বিচারপতি বাংলাদেশের আদালত ব্যবস্থার বিস্তারিত ইতিহাস তুলে ধরেন।
নতুন এই এজলাস কক্ষ প্রসঙ্গে প্রধান বিচারপতি বলেন, আধুনিক প্রযুক্তি ও সমকালীন কাঠামোর পাশাপাশি এই এজলাস কক্ষে আমাদের সমৃদ্ধ ঐতিহ্য এবং এই ভবনের আদি শিল্পকর্ম জীবন্ত হয়ে উঠেছে। এই ভবনের পূর্বদিকে অবস্থিত বাংলাদেশের মানচিত্র সংবলিত যে নান্দনিক নকশাকর্ম সুদীর্ঘকাল ধরে সুপ্রিমকোর্টের অনন্য স্মারক হিসেবে আমাদের স্মৃতিতে উজ্জ্বল হয়ে আছে, তার সঙ্গে সাদৃশ্য রেখেই এই কক্ষের চারপাশের দেয়ালের নকশা করা হয়েছে। একই সঙ্গে তথ্য প্রযুক্তির সঙ্গে সবচাইতে আধুনিক অনুষঙ্গগুলো এখানে নিয়ে আসা হয়েছে।
শুভেচ্ছা বক্তব্যে অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিনউদ্দিন বলেন, দুর্নীতি আমাদের অর্জন ও অগ্রগতিকে নস্যাৎ করছে। এই দুর্নীতি সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রের মতো বিচার বিভাগেও ডানা মেলার চেষ্টা করছে। কার্যকর মনিটরিং, বিচার বিভাগের আধুনিকায়নের মাধ্যমে বিচার বিভাগকে রক্ষা করতে হবে।
সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন তার বক্তব্যে উচ্চ আদালতে বিচারক নিয়োগের ক্ষেত্রে আইন ও নীতিমালা তৈরি নিয়ে প্রধান বিচারপতির দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
বিশেষ অধিবেশনে প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে সুপ্রিমকোর্টের আপিল ও হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতির অংশগ্রহণে আনুষ্ঠানিকভাবে বেঞ্চ বসে। অধিবেশনে শুভেচ্ছা বক্তব্যে দেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন ও সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন।
এ সময় এজলাস কক্ষে সাবেক পাঁচজন প্রধান বিচারপতি, অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি, আইনজীবী, অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ের কর্মকর্তা, গণমাধ্যমকর্মীসহ সুপ্রিমকোর্ট রেজিস্ট্রার জেনারেল অফিসের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, নান্দনিক ও বিভিন্ন সাজে সাজানো হয় দেশের সর্বোচ্চ আদালতের এই এজলাস। ছাদ থেকে ঝোলানো হয়েছে সৌন্দর্যমণ্ডিত ও আলোয় পূর্ণ ৮টি ঝাড়বাতি। চতুর্দিকে দেয়ালজুড়ে স্টিলের অপরূপ নকশার কারুকাজ। বিশেষ প্রয়োজনে ভার্চুয়াল আদালতের কার্যক্রম চালাতে এজলাসের বিভিন্ন দেওয়ালে স্থাপন করা হয়েছে চারটি বড় টিভি মনিটর। এছাড়া স্থাপন করা হয়েছে ৮টি সিসি (ক্লোজ সার্কিট) ক্যামেরা। আইনজীবী ও বিচারপ্রত্যাশীদের বসার সুবিধার্থে এজলাসে রাখা হয়েছে কাঠের সুদৃশ্য আসনের ব্যবস্থা।
- বিষয় :
- প্রধান বিচারপতি
- এজলাস
- উদ্বোধন