ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

প্রধানমন্ত্রী হস্তান্তর করবেন আজ

উপহারের ঘর পাচ্ছে আরও সাড়ে ১৮ হাজার পরিবার

ভূমিহীন ও গৃহহীনমুক্ত হচ্ছে ৭০ উপজেলা

উপহারের ঘর পাচ্ছে আরও সাড়ে ১৮ হাজার পরিবার

ফাইল ছবি

 অমরেশ রায় 

প্রকাশ: ১১ জুন ২০২৪ | ০০:৫২

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহারের ঘর পাচ্ছে আরও ১৮ হাজার ৫৬৬টি পরিবার। মুজিব জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আশ্রয়ণ প্রকল্প-২-এর পঞ্চম পর্যায়ের দ্বিতীয় ধাপে এসব ঘর পাচ্ছে তারা। এর মধ্য দিয়ে দেশের আরও ২৬টি জেলার সব উপজেলাসহ মোট ৭০ উপজেলা ভূমিহীন ও গৃহহীনমুক্ত হতে যাচ্ছে। 

আজ মঙ্গলবার বেলা ১১টায় প্রধানমন্ত্রী তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে দেশের তিনটি উপজেলায় ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে গৃহহীন ও ভূমিহীন মানুষের হাতে দুই শতক জমিসহ ১৮ হাজার ৫৬৬টি ঘরের দলিলপত্র হস্তান্তর করবেন। এ উপলক্ষে লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ, কক্সবাজারের ঈদগাঁও এবং ভোলার চরফ্যাসন উপজেলার আশ্রয়ণ প্রকল্পে বর্ণাঢ্য আয়োজন রয়েছে। ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে উপকারভোগীদের সঙ্গে কথা বলবেন প্রধানমন্ত্রী। 

আশ্রয়ণ-২ প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, ভূমিহীন-গৃহহীন পরিবার পুনর্বাসনের লক্ষ্যে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ১৯৯৭ সালে আশ্রয়ণ নামে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে একটি প্রকল্প নেওয়া হয়। আওয়ামী লীগ সরকার আবারও ক্ষমতায় আসার পর ২০২০ সালের মে মাসে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীন আশ্রয়ণ-২ প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। ‘মুজিববর্ষে বাংলাদেশের একজন মানুষও গৃহ ও ভূমিহীন থাকবে না’– প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এ ঘোষণা বাস্তবায়নের লক্ষ্য নিয়েই শুরু হয়েছিল প্রকল্পটির যাত্রা। এ জন্য সারাদেশের ভূমিহীন ও গৃহহীন ৮ লাখ ৮৫ হাজার ৬২২টি পরিবারের তালিকা করে তাদের জমিসহ ঘর উপহার দিচ্ছেন তিনি। 

মুজিববর্ষ উপলক্ষে এই পাঁচ পর্যায়ে মোট হস্তান্তরিত একক গৃহের সংখ্যা দাঁড়াচ্ছে দুই লাখ ৬৬ হাজার ১২টি। যার মধ্যে চতুর্থ পর্যায়ে চরাঞ্চলে বরাদ্দকৃত বিশেষ ডিজাইনের গৃহের সংখ্যা ১ হাজার ৩৭৩টি এবং পার্বত্যাঞ্চলের বিশেষ ডিজাইনের মাচাং ঘর ৬৩৪টি।  

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় সূত্র জানায়, ১৯৯৭ সাল থেকে আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় ৫ লাখ ৮২ হাজার ৫৩টি ভূমিহীন-গৃহহীন পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়েছে। আশ্রয়ণ ও অন্যান্য মন্ত্রণালয়/সংস্থাসহ গৃহ নির্মাণ করে ১৯৯৭ সাল থেকে এখন পর্যন্ত পুনর্বাসন করা হয়েছে ৮ লাখ ৬৭ হাজার ৯০৪টি পরিবারকে। পাঁচজন করে এক পরিবার হিসেবে পুনর্বাসিত জনসংখ্যা দাঁড়াচ্ছে ৪৩ লাখ ৩৯ হাজার ৫২০। আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে মোট পুনর্বাসিত জনসংখ্যা ২৯ লাখ ১০ হাজার ২৬৫। কেবল মুজিববর্ষের বিশেষ কর্মসূচির মাধ্যমে পুনর্বাসিত হয়েছেন ১৩ লাখ ৩০ হাজার ৬০ জন ছিন্নমূল মানুষ।  

এদিকে, আশ্রয়ণ প্রকল্প-২-এর আওতায় আজ ভূমিহীন-গৃহহীনমুক্ত ঘোষণা করা হবে ঢাকা, গোপালগঞ্জ, শরীয়তপুর, ফরিদপুর, নেত্রকোনা, কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী, কুমিল্লা, ফেনী, গাইবান্ধা, লালমনিরহাট, নীলফামারী, সিরাজগঞ্জ, বগুড়া, সাতক্ষীরা, যশোর, খুলনা, নড়াইল, বাগেরহাট, বরগুনা, বরিশাল, হবিগঞ্জ ও সুনামগঞ্জ জেলার সব উপজেলাসহ সারাদেশের মোট ৭০টি উপজেলাকে। এর মধ্য দিয়ে ভূমিহীন-গৃহহীনমুক্ত মোট জেলা ও উপজেলার সংখ্যা দাঁড়াবে ৫৮ জেলা ও ৪৬৪টি উপজেলা। 

বিশ্বের সর্ববৃহৎ এই আশ্রয়ণ প্রকল্পটি ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নে শেখ হাসিনা মডেল’ হিসেবে পরিচিত। জমি ও ঘর নেই এমন দরিদ্র পরিবারগুলোকে সেমিপাকা একক গৃহের পাশাপাশি দুই শতাংশ জমির মালিকানার দলিলপত্র এবং জমি আছে, কিন্তু জরাজীর্ণ বাড়ি– এমন অনেক পরিবারকে সরকারি খরচে ঘর তৈরি করে দেওয়া হচ্ছে। প্রকল্প এলাকায় নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সুবিধা এবং খাবার পানির জন্য গভীর ও অগভীর নলকূপ ছাড়াও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, খেলার মাঠ, কমিউনিটি সেন্টার, অভ্যন্তরীণ ও সংযোগ সড়ক নির্মাণ এবং পুকুর খনন ও বৃক্ষরোপণ করে উন্নত জীবনযাপনের সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। কয়েকটি প্রকল্পে মসজিদ-মন্দির ও কবরস্থান নির্মাণ ছাড়াও সুবিধাভোগীদের কৃষিকাজ, মৎস্যচাষ, গবাদি পশু পালন, ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প, সেলাইসহ আত্মকর্মসংস্থানের নানা প্রশিক্ষণ এবং সমবায় সমিতির মাধ্যমে ক্ষুদ্রঋণ দিয়ে স্বাবলম্বী করে তোলা হচ্ছে। যোগ্যতার ভিত্তিতে বিভিন্ন কলকারখানা কিংবা শিল্পপ্রতিষ্ঠানে চাকরি, কাউকে যানবাহন কিনে দিয়ে অথবা কাউকে ছোট দোকান দিয়ে তাদের জীবিকা নির্বাহের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। আশ্রয় পাওয়া দরিদ্র পরিবারগুলো নিজস্ব জমিতে কৃষিকাজ, শাকসবজির ফলন, হাঁস-মুরগি ও গরু-ছাগল পালন এবং দোকানপাট করে নিজেদের জীবনে আর্থিক সচ্ছলতা আনছে। ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া শেখানোর মাধ্যমে উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ জীবনের নিশ্চয়তাও পাচ্ছেন।  

আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ও অতিরিক্ত সচিব আবু ছালেহ মোহাম্মদ ফেরদৌস খান সমকালকে বলেন, সম্পূর্ণ সরকারি খরচে বিপুলসংখ্যক ভূমিহীন ও গৃহহীন মানুষকে জমির মালিকানাসহ বাড়ি নির্মাণ করে একটি স্থায়ী ঠিকানা দেওয়ার মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচনের এমন নজির বিশ্বের আর কোথাও নেই। আর সেই অসম্ভবকে সম্ভব করে বিশ্বে আরেকটি মানবতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।   

আরও পড়ুন

×