প্রত্যয় স্কিম বাতিলে শিক্ষকদের কর্মবিরতি অব্যাহত
‘নীতিনির্ধারকদের প্রভাবিত করছেন আমলারা’

কর্মবিরতি কর্মসূচিতে শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। ছবি: সমকাল
বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১০ জুলাই ২০২৪ | ০৩:৩৭
সর্বজনীন পেনশনের ‘প্রত্যয়’ স্কিম বাতিলের দাবিতে মঙ্গলবার নবম দিনের মতো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কর্মবিরতি পালন করেছেন। তবে এখন পর্যন্ত আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সরকারের কেউ যোগাযোগ করেননি। শিক্ষকদের অভিযোগ, ৩৯ বিশ্ববিদ্যালয় একযোগে আন্দোলন করলেও আমলারা নীতিনির্ধারকদের প্রভাবিত করছেন। এ কারণে সর্বোচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মকর্তাদের স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট দাবি পূরণ হচ্ছে না।
মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবনের মূল ফটকে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষকরা। অন্যদিকে প্রশাসনিক ভবনের সামনে সমাবেশ করেছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের মহাসচিব ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক নিজামুল হক বলেন, ‘আমলাতন্ত্রের ভয়াবহতার বিরুদ্ধে স্বয়ং বঙ্গবন্ধুও কথা বলেছিলেন। আমলাতন্ত্র দেশটাকে ধ্বংস করছে। শিক্ষকদের ওপর অভিযোগ তোলা হচ্ছে, আমরা নাকি শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে দাবি আদায় করছি। মূলত আমাদেরকেই রাষ্ট্র জিম্মি করে রেখেছে।’
সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. জিনাত হুদা বলেন, ‘আমরা কোনো অপপ্রচার বা বিভ্রান্তিকে ভয় পাই না। কারও কাছ থেকে কোনো পাত্তা পাওয়ারও দরকার নেই। আমাদের প্রাপ্য ফিরিয়ে দিলেই হবে।’ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের সভাপতি অধ্যাপক ড. আখতারুল ইসলাম বলেন, সুপার গ্রেড ও স্বতন্ত্র বেতন স্কেল নিয়ে আলোচনার দরকার হলেও প্রত্যয় স্কিম বাতিলের বিষয়ে কারও সঙ্গে আলোচনার দরকার নেই।
রাবি প্রতিনিধি জানান, দশম দিনের মতো সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালন করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষকরা। গতকাল সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ সিনেট ভবনের সামনে ঘণ্টাব্যাপী অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন তারা।
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক হাবিবুর রহমান বলেন, ‘আমরা যে পেনশন ব্যবস্থার মধ্যে ছিলাম, তাতে সন্তুষ্ট ছিলাম। আমাদের মূল দাবি ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সুপার গ্রডে অন্তর্ভুক্ত এবং স্বতন্ত্র বেতন কাঠামো প্রবর্তন। এ দাবি আমরা ১৫-২০ বছর ধরে জানিয়ে আসছি। কিন্তু নতুন করে এ প্রত্যয় স্কিম চাপিয়ে দেওয়ার পর সরকার সংশ্লিষ্ট মহলগুলো ক্লাস পরীক্ষা বর্জন করে রাস্তায় আসতে আমাদের বাধ্য করেছে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।’
তিনি বলেন, ‘ছাত্রদের কাছে অনুরোধ থাকবে, তোমাদের জন্য আমরা আন্দোলন করছি। বিশ্ববিদ্যালয় রক্ষার জন্য আন্দোলন করছি। দুই-চার বছরে হয়তো আমরা বৈষম্যের ফল বুঝব না। কিন্তু এক সময় দেখা যাবে, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কলেজের চেয়ে নিচে নেমে গেছে। সেশনজটের আশঙ্কা হয়তো থাকবে। কিন্তু ভবিষ্যতের ক্ষতি থেকে আমরা বেরিয়ে আসতে পারব।’
ইবি প্রতিনিধি জানান, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন গতকাল অবস্থান কর্মসূচিতে বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, ‘শিক্ষকদের তিন দফা বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত আমরা পিছু হটব না। এই এজেন্ডা আমাদের ব্যক্তিগত নয় বরং শিক্ষক সম্প্রদায় ও বাঙালি জাতির। জাতিকে ধ্বংসের ষড়যন্ত্র হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুষদ ভবনের নিচতলায় অবস্থান কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।
খুলনা ব্যুরো জানায়, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক সমিতি কর্মবিরতি অব্যাহত রেখেছে। গতকাল দুপুর ১২টা থেকে ১টা পর্যন্ত শিক্ষকরা অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. এস এম ফিরোজের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ রকিবুল হাসান সিদ্দিকীর সঞ্চালনায় শিক্ষকরা বক্তব্য দেন। কর্মবিরতি পালন করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও।
- বিষয় :
- সর্বজনীন
- সর্বজনীন পেনশন
- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়