ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদ দিচ্ছে জামুকাই

ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদ দিচ্ছে জামুকাই

কোলাজ

 সমকাল প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১১ জুলাই ২০২৪ | ০৪:৪৪ | আপডেট: ১১ জুলাই ২০২৪ | ০৭:০১

জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের (জামুকা) মাধ্যমে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদ গ্রহণের অভিযোগ উঠেছে। মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে এ অভিযোগ উত্থাপন করেন কমিটির সদস্য ও স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য আবদুল লতিফ সিদ্দিকী।

সূত্র জানায়, সংসদীয় কমিটির ১২ জুনের বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। এর পর গতকাল বুধবার কমিটির বৈঠকের কার্যবিবরণীতে এটি তুলে ধরা হয়। ওই বৈঠকে লতিফ সিদ্দিকী অভিযোগ উত্থাপন করে বলেন, জামুকা ২০১৭ সালে যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে নতুন করে মুক্তিযোদ্ধার তালিকা প্রণয়নের পদক্ষেপ নেয়। ফলে ২০১৬ সালে যারা মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন না, এখন দেখা যাচ্ছে, তারাও বীর মুক্তিযোদ্ধা হয়ে গেছেন। এদের কেউ কেউ জামুকার সঙ্গে সম্পর্ক করে ভুয়া সনদ তৈরি করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এতে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণ হচ্ছে না বলে জানান তিনি। এ সময় মন্ত্রণালয়কে এ বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দেন লতিফ সিদ্দিকী।

বৈঠকে কমিটির আরেক সদস্য ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শাজাহান খান স্বাধীনতার এত বছর পরে নতুন করে মুক্তিযোদ্ধার তালিকা তৈরি সহজ নয় বলে মন্তব্য করেন। মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কমিটির দায়িত্বপ্রাপ্তদের অন্যতম শাজাহান খান বলেন, যাচাই-বাছাই করতে গিয়ে এমন অবস্থার সম্মুখীন হতে হয়েছে, ‘আমরা তাদের চিনি না।’ জমিজমার বিরোধের জের ধরে এক ভাইয়ের বিরুদ্ধে অন্য ভাইয়ের মিথ্যা সাক্ষ্যের দৃষ্টান্ত তুলে ধরে তিনি বলেন, চাচা-ভাতিজির সাক্ষাৎ গ্রহণের সময় ভাতিজির (মুক্তিযোদ্ধা ভাইয়ের ছেলে) বিরুদ্ধে চাচা মিথ্যা সাক্ষ্য দিয়েছিলেন। পরে চাচা হজ করতে যাওয়ার আগে এসে বলেন, তিনি মিথ্যা সাক্ষ্য দিয়েছেন। তাঁর ভাই মুক্তিযুদ্ধ করেছিলেন, ভাতিজি সত্য বলেছিল। জামুকাকে আরও স্বচ্ছ ও নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করার পরামর্শ দেন শাজাহান খান।

গতকালের বৈঠকে কমিটির সভাপতি রফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে অংশ নেন সদস্য ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, শাজাহান খান এবং মাহফুজা সুলতানা।

১৪ বীর মুক্তিযোদ্ধার ভিডিও ডকুমেন্টারি

রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন, সাবেক রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদসহ ১৪ বীর মুক্তিযোদ্ধার সাক্ষাৎকারভিত্তিক ডকুমেন্টারি তৈরি করছে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। ‘বীরের কণ্ঠে বীর গাথা’ প্রকল্পের আওতায় মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস সংগ্রহ করে নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। 

গতকাল কমিটির বৈঠকে জানানো হয়, গত ১ এপ্রিল ১৬টি ডকুমেন্টারি তৈরিতে ‘বিস্তৃত ডকুমেন্টারিতে অন্তর্ভুক্তির জন্য গঠিত কমিটি’র সভা হয়। সভায় ১৪ বীর মুক্তিযোদ্ধাকে নিয়ে ডকুমেন্টারি তৈরির সিদ্ধান্ত হয়। এ তালিকায় আরও আছেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য তোফায়েল আহমেদ, মুক্তিযুদ্ধবিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, বঙ্গবীর আবদুল কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম, মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মেজর (অব.) রফিকুল ইসলাম বীরউত্তম, ক্যাপ্টেন সাহাবুদ্দিন আহমেদ (বৈমানিক) বীরউত্তম, অপারেশন জ্যাকপটের অন্যতম পরিকল্পনাকারী ও দলনেতা আবদুল ওয়াহেদ চৌধুরী, প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদবিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বীরবিক্রম, সাব-সেক্টরের অধিনায়ক ও পরে দশম ইস্ট বেঙ্গলের অধিনায়ক জাফর ইমাম বীরবিক্রম, ২ নম্বর সেক্টরের ক্র্যাক প্লাটুনের কমান্ডার ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম, সাব-সেক্টর কমান্ডার মাহবুব উদ্দিন আহমদ বীরবিক্রম, মুক্তিযুদ্ধকালীন রওশন আরা ব্যাটারির সহঅধিনায়ক কাজী সাজ্জাদ আলী জহির বীরপ্রতীক এবং সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার।

মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, ইতোমধ্যে ক্যাপ্টেন সাহাবুদ্দিন আহমেদ ও মাহবুব উদ্দিন আহমদের সাক্ষাৎকারের ভিডিওচিত্র ধারণ করা হয়েছে। মোজাম্মেল হক ও কাজী সাজ্জাদ আলী জহিরের আংশিক ভিডিও ধারণ করা হয়েছে। আর মোঃ সাহাবুদ্দিন ও মোঃ আবদুল হামিদের সাক্ষাৎকার গ্রহণের জন্য যোগাযোগ করা হয়েছে।

গত ১২ জুন সংসদীয় কমিটির আগের বৈঠকে বীরের কণ্ঠে বীর গাথা প্রকল্পে ডকুমেন্টারি তৈরি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। ওই বৈঠকে কমিটির সদস্য আবদুল লতিফ সিদ্দিকী বীরের কণ্ঠে বীর গাথা প্রকল্পে ব্যক্তির ‘বর্তমান অবস্থান বিবেচনা না করে একাত্তরে তাদের ভূমিকা ও যুদ্ধে নেতৃত্বের’ পর্যায় আমলে নিয়ে কাজ করার প্রস্তাব দেন। বৈঠকে কমিটির সভাপতি মেজর (অব.) রফিকুল ইসলামও লতিফ সিদ্দিকীর সঙ্গে একমত পোষণ করেন। বৈঠকে তিনি বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের গুরুত্ব-মূল্যায়ন ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে ওই ব্যক্তির ভূমিকা ও অবদানের ভিত্তিতে বিবেচিত হবে, আজকের অবস্থান দিয়ে নয়। এটা করতে গিয়ে প্রকৃত মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস যেন বিকৃত না হয়, সেটিও লক্ষ্য রাখতে হবে।

পরে কমিটির বৈঠকে ব্যক্তির বর্তমান অবস্থানের পরিবর্তে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে তাঁর অবদান ও নেতৃত্ব বিবেচনায় রেখে সিলেকশন করার সুপারিশ করা হয়। অবশ্য ১২ জুনের বৈঠকে এ সুপারিশ হলেও ১ এপ্রিল মুক্তিযুদ্ধবিষয়কমন্ত্রীর সভাপতিত্বে বৈঠকে যে ১৪ জনের ডকুমেন্টারি হবে, তাদের সিলেকশন করা হয়।

গতকাল বৈঠকের পর সংসদ সচিবালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বৈঠকে ‘বীরের কণ্ঠে বীর গাথা’ নামে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মৌখিক সাক্ষাৎকার গ্রহণের জন্য বীর মুক্তিযোদ্ধা নির্বাচনের ক্ষেত্রে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে ওই মুক্তিযোদ্ধার অবদান এবং নেতৃত্ব বিবেচনায় রেখে নির্বাচন করার পরামর্শ দেওয়া হয়। বৈঠকে মুক্তিযুদ্ধের অন্তরালে যেসব ত্যাগ-তিতিক্ষা, কষ্ট, শৌর্য-বীর্যের ইতিহাস রয়েছে, সেসব সঠিকভাবে তুলে ধরা এবং সংরক্ষণ করার পরামর্শ দেওয়া হয়।

যাদের ডকুমেন্টারি হবে, তারা রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন রয়েছেন জানিয়ে গত ১২ জুন কমিটির বৈঠকে মুক্তিযুদ্ধবিষয়কমন্ত্রী বলেন, মৌখিক সাক্ষাৎকার ভিডিও আকারে সংরক্ষণ করা হবে। বর্তমানে অনেক বীর মুক্তিযোদ্ধা সরকারের উচ্চপদে আছেন। সে ক্ষেত্রে একটু সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে।

আরও পড়ুন

×