লেখক শিল্পী শিক্ষক সাংবাদিকদের বিবৃতি
নতুন কোনো সংঘাতের দিকে না যেতে সরকারের প্রতি আহ্বান

ফাইল ছবি
সমকাল প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৯ জুলাই ২০২৪ | ২১:৪৫ | আপডেট: ২৯ জুলাই ২০২৪ | ২২:৫৬
কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন ঘিরে নতুন কোনো সংঘাতের দিকে না যেতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন দেশের বিশিষ্ট নাগরিকরা। তাঁরা বলেছেন, ‘দেশের সাম্প্রতিক সময়ে সংগঠিত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে দমানোর জন্য পুলিশ ও সরকারি দলের রাজনৈতিক পরিচয়ধারী হেলমেট-বাহিনী দিয়ে নির্বিচারে হত্যা এবং ব্যাপক ধরপাকড়ে আমরা লেখক, শিল্পী, নির্মাতা, শিক্ষক, সাংবাদিক, অভিভাবক তথা সমাজের সব শ্রেণির নাগরিক গভীরভাবে সংক্ষুব্ধ। আমরা আহ্বান জানাই, আরও নৃশংসতা, দেশকে আরও সর্বনাশের হাত থেকে বাঁচান। নতুন সংঘাতের দিকে না যাওয়ার জন্য সরকারের ও সরকারের স্নেহভাজন সব দায়িত্বশীল মহলকে আহ্বান জানাচ্ছি।’
আজ সোমবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ দাবি জানান ‘বিক্ষুব্ধ নাগরিকরা’। বিবৃতিতে বলা হয়, আমাদের পর্যবেক্ষণ হলো, শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে অদরকারীভাবে উস্কে দিয়েছেন সরকারের কয়েকজন মন্ত্রী। এমনকি প্রধানমন্ত্রীর অত্যন্ত জরুরি প্রেস কনফারেন্সে কয়েকজন সাংবাদিকের শিশুতোষ উস্কানিও আমরা লক্ষ্য করেছি। সবচেয়ে হতাশার হলো, প্রধানমন্ত্রী নিজে সেটার সূত্র ধরে অসম্মানজনক মন্তব্য করে নতুন প্রজন্মের আত্ম-মর্যাদায় আঘাত করেছেন। এরপর থেকে সরকার একদিকে তথাকথিত সংলাপের ডাক দিতে থাকে আর অন্যদিকে আন্দোলনকারী সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যাপক হয়রানির পথ বেছে নেয়। ফলে আমাদের আর সন্দেহ থাকে না যে, সরকারের প্রধান লক্ষ্য সমস্যার সমাধান নয়, বরং উত্থিত তারুণ্যকে শত্রুপক্ষ হিসাবে শায়েস্তা করা।
বিশিষ্ট নাগরিকরা বলেন, এই মুহূর্তে কতজন সাধারণ শিক্ষার্থী ও জনতাকে খুন করা হয়েছে তার কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্য আমাদের হাতে নেই। কিন্তু দেশবাসী, আন্তর্জাতিক মিডিয়া, সেই সঙ্গে আমরা পরিষ্কার বুঝতে পারছি মৃত্যুর সঠিক সংখ্যাটা ভীতিকর রকমের বেশি। বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে মৃত্যুর নথি উধাও করে দিচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তা এখন আন্তর্জাতিক মাধ্যমেই প্রচারিত হয়েছে। আমাদের তৃণমূল পর্যায়ের খবরও তাই বলে।
সরকারের এই কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি চিরপুরাতন 'জামাত-বিএনপি' ট্রাম্পকার্ড তাঁরা ব্যবহার করতে শুরু করেছেন। হতাশার বিষয় হলো- প্রায় সবগুলো টিভি চ্যানেলেই সরকারি তোষামোদকারী বিশ্লেষকরা সেই একই বয়ান হাজির করছেন। যদি আমরা ধরে নেই যে, বিএনপি-জামায়াতের নাশকতাতেই দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোতে হামলা হয়েছে, তাহলে তিনটা স্পষ্ট প্রশ্ন আমাদের আসে—
১। কেন নিহতদের এই পরিমাণ সাধারণ শিক্ষার্থী যাদের বয়স ১৭-২২ এর মধ্যে এবং তাদের রাজনৈতিক পরিচয় সরকারের প্রোপাগান্ডা মতে ‘বিএনপি-জামায়াত’ নয় কেন?
২। সরকারের বিপুল সংখ্যক গোয়েন্দাবাহিনির কাছে কেন এই 'পরিকল্পিত নাশকতা'র কোনো খবর আগে থেকে ছিল না? কিংবা এতসব গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার নিরাপত্তা কৌশল সরকারের কী ছিল? আদৌ ছিল কি?
৩। জেলায় জেলায় মহল্লায় মহল্লায় ব্লক-রেইড করে সাধারণ শিক্ষার্থীদের অপহরণ আর গ্রেপ্তার করছে কেন পুলিশ-গোয়েন্দা সংস্থা?
বিবৃতিতে বলা হয়, আমরা সুস্পষ্টভাবে জানিয়ে দিতে চাই, এই ঘৃণ্য ট্যাগ-মারা পলিটিক্সের মাধ্যমে এই ধরনের হত্যাকাণ্ড আপনারা ধামাচাপা দিতে পারবেন না বা জাস্টিফাই করতে পারবেন না। বাংলাদেশের স্বাধীনতার চেতনা এখনও ফিকে হয়ে যায়নি। আমরা এই দুঃশাসন দেখতে চাই না। আমরা আহ্বান জানাই, আরও নৃশংসতা, দেশকে আরও সর্বনাশের হাত থেকে বাঁচান। নতুন সংঘাতের দিকে না যাওয়ার জন্য সরকারের ও সরকারের স্নেহভাজন সব দায়িত্বশীল মহলকে আহ্বান জানাচ্ছি। আমরা অনতিবিলম্বে আটককৃত ছাত্র-ছাত্রীদের মুক্তি এবং সার্বিক নিরাপত্তার দাবি করছি। সেই সঙ্গে অনতিবিলম্বে বিনা বিচারে ধরপাকড়সহ সব প্রকার নিপীড়নমূলক ব্যবস্থা নেওয়া থেকে বিরত রাখতে এবং এই আন্দোলনে সংঘটিত সব হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে বিচারের দাবি জানাচ্ছি। দেশের এই গভীর সংকটের সময়ে সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে সংশ্লিষ্ট সকলের শুভ বুদ্ধির প্রার্থনা করছি।
বিবৃতিতে স্বাক্ষর করা বিশিষ্ট নাগরিকেরা হলেন—
- অমিতাভ রেজা চৌধুরী, চলচ্চিত্র নির্মাতা
- অরূপ রাহী, কবি ও গায়ক
- আ-আল মামুন, অধ্যাপক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
- আছিয়া করিম, স্থপতি
- আজমেরী হক বাঁধন, অভিনেত্রী ও মডেল
- আরমীন মূসা, সঙ্গীত পরিচালক ও শিল্পী
- আবু সাঈদ খান, সাংবাদিক
- আব্দুল্লাহীল বাকী, সহযোগী অধ্যাপক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
- আব্দুল হালিম চঞ্চল, চিত্রশিল্পী
- আশফাক নিপুণ, চলচ্চিত্র নির্মাতা
- ঋতু সাত্তার, আর্টিস্ট ও ফিল্মমেকার
- কাজী মামুন হায়দার, সহযোগী অধ্যাপক, গণ যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
- কাজী শুসমিন আফসানা, সহযোগী অধ্যাপক, নাট্যকলা বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
- কামার আহমাদ সাইমন, স্থপতি ও চলচ্চিত্র নির্মাতা
- কৃষ্ণেন্দু চট্টোপাধ্যায়, চলচ্চিত্র নির্মাতা
- খন্দকার হাসিবুল কবির, স্থপতি ও সহকারী অধ্যাপক, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়
- গীতিয়ারা নাসরীন, অধ্যাপক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
- জাহিন ফারুক আমিন, চলচ্চিত্র নির্মাতা ও লেখক
- তানজিম ওয়াহাব, শিক্ষক ও কিউরেটর
- তানজিম উদ্দিন, অধ্যাপক, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
- তানিম নূর, চলচ্চিত্র নির্মাতা
- পিপলু আর খান, চলচ্চিত্র নির্মাতা
- বাকার বকুল, নাট্যকার
- বাকি বিল্লাহ, এক্টিভিস্ট
- মানস চৌধুরী, অধ্যাপক, নৃবিজ্ঞান বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
- মাহবুব মোর্শেদ, কথাসাহিত্যিক ও সাংবাদিক
- মাহা মির্জা, লেখক ও গবেষক
- মীর্জা তাসলিমা সুলতানা, অধ্যাপক, নৃবিজ্ঞান বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
- মুনেম ওয়াসিফ, শিল্পী
- মেজবাউর রহমান সুমন, চলচ্চিত্র নির্মাতা
- মোহাম্মদ আজম, অধ্যাপক, বাংলা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
- মোহাম্মদ আলী হায়দার, ক্রিয়েটিভ ডিরেক্টর বটতলা
- মো. আমিরুল ইসলাম, সহযোগী অধ্যাপক, ফোকলোর বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
- রবিউল আলম, সহযোগী অধ্যাপক, নৃবিজ্ঞান বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
- রায়হান রাইন, অধ্যাপক, দর্শন বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
- শাতিল সিরাজ, অধ্যাপক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
- সৌভিক রেজা, অধ্যাপক, বাংলা বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
- সুস্মিতা চক্রবর্তী, অধ্যাপক, ফোকলোর বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
- সাঈদ ফেরদৌস, অধ্যাপক, নৃবিজ্ঞান বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
- সালেহ সোবহান অনীম, চলচ্চিত্র নির্মাতা
- সামিনা লুৎফা, সহযোগী অধ্যাপক, সমাজবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
- সারা আফরীন, স্থপতি ও চলচ্চিত্র নির্মাতা
- সুহাইলি ফারজানা, স্থপতি
- হাবিব জাকারিয়া, অধ্যাপক, নাট্যকলা বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
- হুমায়রা বিলকিস, চলচ্চিত্র নির্মাতা