মতবিনিময় সভায় বক্তারা
১৮ বছরে তামাক থেকে রাজস্ব আয় বেড়েছে ১১ গুণ

ছবি: সংগৃহীত
সমকাল প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৩ নভেম্বর ২০২৪ | ২০:২০
২০০৫ সালে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন পাস ও ২০১৩ সালে আইনটি সংশোধনের মাধ্যমে আরও শক্তিশালী করার পর গত ১৮ বছরে তামাক থেকে রাজস্ব আয় প্রায় সাড়ে ১১ গুণ বেড়েছে। একইসঙ্গে ২০০৯ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে দেশে তামাক ব্যবহার প্রায় কমেছে ১৮ শতাংশ কমেছে। ফলে জনস্বাস্থ্য রক্ষায় তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালী করলে কর বৃদ্ধির পাশাপাশি তামাকের ব্যবহার কমে যায় সেটা প্রমাণিত।
রোববার গুলশানে বাংলাদেশ নেটওয়ার্ক ফর টোব্যাকো ট্যাক্স পলিসির (বিএনটিটিপি) কনফারেন্স রুমে এক মতবিনিময় সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনৈতিক গবেষণা ব্যুরো (বিইআর) ও বাংলাদেশ নেটওয়ার্ক ফর টোব্যাকো ট্যাক্স পলিসি (বিএনটিটিপি) যৌথভাবে ‘তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালী হলে রাজস্ব বাড়ে, ব্যবহার কমে’ শীর্ষক এ মতবিনিময় সভা আয়োজন করে।
মতবিনিময় সভায় বক্তারা বলেন, তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালী হলে সরকারের রাজস্ব কমে যাবে বলে তামাক কোম্পানি প্রচারণা চালাচ্ছে। যা আদৌ যুক্তিসংগত নয়। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) রাজস্ব আহরণের তথ্যই বলে দেয় তারা কতটা মিথ্যাচার করছে। দেশে ২০০৫ সালে যখন তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন পাস হয়, সে বছর তামাক হতে রাজস্ব ছিল ২ হাজার ৮৮৮ কোটি টাকা। পরবর্তী অর্থবছর ২০০৫-০৬ এ রাজস্ব আদায় হয় ৩ হাজার ৩৫১ কোটি টাকা।
তবে ২০১৩ সালে যখন আইনটি সংশোধন হয়, সে বছর তামাক থেকে সরকারের রাজস্ব আয় ছিল ১০ হাজার ১৭০ কোটি টাকা। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১২ হাজার ৫৫৬ কোটি টাকা। ২০২২-২৩ অর্থবছরে তামাক খাত থেকে রাজস্ব আদায় হয়েছে মোট ৩২ হাজার ৮২৩ কোটি টাকা।
তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন হলে দেশে কর্মসংস্থান ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে তামাক কোম্পানিগুলো মিথ্যাচার চালাচ্ছে উল্লেখ করে বক্তারা আরও বলেন, অথচ এনবিআরের তথ্য অনুসারে দেশে বিড়ি কোম্পানিতে শ্রমিক নিয়োজিত আছে মাত্র ৪৬ হাজার। আর দেশের প্রায় ৯০ শতাংশ বাজার দখলে রেখেছে দুই বহুজাতিক সিগারেট কোম্পানি বিএটিবি ও জেটিআই। তামাক কোম্পানির প্রতিবেদন অনুসারে তাদের কর্মচারীর সংখ্যা মাত্র ১ হাজার ৭৬৯ জন (বিএটিবির ১ হাজার ৬৬৯ জন এবং জেটিআইয়ের প্রায় ১০০ জন)। অতএব সিগারেট কোম্পানিগুলো ৭০ লাখ লোক কাজ হারাবে বলে অপপ্রচার চালাচ্ছে।
তামাক কোম্পানি এইসব মিথ্যাচারের মাধ্যমে প্রকৃত সত্যকে আড়াল করছে বলেও জানান বক্তারা। তারা বলেন, শিশু-কিশোরদের ধূমপানের নেশায় আকৃষ্ট করতে তারা বিভিন্ন রেস্টুরেন্টে ধূমপানের স্থান তৈরি করে দিচ্ছে, বিক্রয় স্থলে আগ্রাসী বিজ্ঞাপন দিচ্ছে, দেশে ভেপিং ও ই-সিগারেটের ব্যবহার বাড়াতে যুবকদের নিয়ে গোপনে ভেপিং মেলার আয়োজন করছে। যা আমাদের তরুণ প্রজন্মকে ধূমপানে আসক্ত করার মাধ্যমে স্বাস্থ্য ধ্বংসের পাঁয়তারা।
তামাক ব্যবহারের কারণে দেশে হৃদ্রোগ, স্ট্রোক, ক্যান্সার, ডায়াবেটিসের মতো ভয়ংকর অসংক্রামক রোগ বেড়েই চলেছে। এ সকল রোগের চিকিৎসা খরচ যোগাতে গিয়ে, প্রতিবছর দেশের প্রায় ৪ লাখ মানুষ দরিদ্র হয়ে যাচ্ছে। এই তথ্যগুলো সিগারেট কোম্পানি আড়াল করতে চায়। এ পরিস্থিতিকে সিগারেট কোম্পানির এই ভ্রান্ত প্রচারণা থেকে নীতি নির্ধারকদের সতর্ক থাকা এবং দেশের তরুণদের স্বাস্থ্য রক্ষায় কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করার আহ্বান জানান বক্তারা।
- বিষয় :
- তামাক নিয়ন্ত্রণ
- তামাক আইন
- রাজস্ব