ঢাকা রবিবার, ০৬ জুলাই ২০২৫

হাইকোর্ট বললেন

ইসকন নিষিদ্ধ করতে হস্তক্ষেপের প্রয়োজন নেই

ইসকন নিষিদ্ধ করতে হস্তক্ষেপের প্রয়োজন নেই

ফাইল ছবি

 সমকাল প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৯ নভেম্বর ২০২৪ | ০০:৩৭

সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে গ্রেপ্তারের পর আদালতে হাজির করাকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রামে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যার ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন হাইকোর্ট। এ প্রসঙ্গে হাইকোর্ট বলেছেন, রাষ্ট্র সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে– এটা শুনে আমরা আশ্বস্ত হলাম। এটাই ওনাদের দায়িত্ব। আশা রাখি, সবাই এটা শুনে আশ্বস্ত হবেন। দেশের জানমালের কোনো ক্ষতি না হোক– আমরা সেটাই চাই। যেহেতু সরকার সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে দেখছে বলা হলো, তাই এ মুহূর্তে ইসকন নিষিদ্ধের ইস্যুতে আদালত আর হস্তক্ষেপের প্রয়োজন দেখছেন না। আমরা মনে করি, আমাদের দেশের মানুষ সৌহার্দ্যপূর্ণ। এ দেশে সব ধর্মের মানুষ বন্ধুত্বপূর্ণভাবে থাকতে ভালোবাসে। সে ভালোবাসা কখনোই ভাঙবে না। পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর সঙ্গেও আমাদের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আছে।

হিন্দু সম্প্রদায়ের সংগঠন আন্তর্জাতিক শ্রীকৃষ্ণ ভাবনামৃত সংঘ (ইসকন) নিষিদ্ধের ইস্যু নিয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ রাষ্ট্রপক্ষের বক্তব্য শুনে এসব মন্তব্য করেন। এর আগে আইনজীবী হত্যার ঘটনায় সরকারের পদক্ষেপের অগ্রগতি আদালতে তুলে ধরেন রাষ্ট্রপক্ষের অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল অনিক আর হক ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আসাদ উদ্দিন। তারা আদালতকে জানান, ঘটনাটিকে সরকার সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে। এরই মধ্যে তিনটি মামলা হয়েছে। একটিতে ১৩ জন, একটিতে ১৪ জন ও অপরটিতে ৪৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৩৩ জনকে। সিসিটিভি ফুটেজ দেখে শনাক্ত করা হয়েছে হত্যায় জড়িত ছয়জনকে।
এর আগে বুধবার আলিফ হত্যার ঘটনায় ইসকন নিষিদ্ধ চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করেন আইনজীবী মনির উদ্দিন। আবেদনে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে হত্যাকাণ্ডের তদন্ত করে দোষীদের আইনের আওতায় আনারও আবেদন করা হয়।

এদিকে হাইকোর্টে এই শুনানির মধ্যেই ইসকন নিষিদ্ধের দাবি জানিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি। গতকাল সুপ্রিম কোর্ট বার মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে সমিতির ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহফুজুর রহমান মিলন বলেন, আলিফ হত্যার ঘটনায় সারাদেশের আইনজীবীসহ ১৮ কোটি মানুষের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়েছে। ফ্যাসিস্ট মতাদর্শে বিশ্বাসীরা দেশি-বিদেশি দোসরদের নিয়ে দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। তারই ধারাবাহিকতায় সন্ত্রাসী সংগঠন ইসকনের সদস্যরা সাইফুল ইসলাম আলিফকে নৃশংসভাবে হত্যা করেছে। 

আইনজীবী হত্যাকাণ্ডে অন্যায়ভাবে দায়ী করার চেষ্টা চলছে
একই দিন চিন্ময় কৃষ্ণ দাস গ্রেপ্তার, সহিংসতা ও আইনজীবী হত্যার ঘটনা নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছে ইসকন বাংলাদেশ। সংগঠনটির স্বামীবাগ আশ্রমে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে আইনজীবী সাইফুল হত্যাকাণ্ডে ইসকনকে অন্যায়ভাবে দায়ী করার অপচেষ্টা চলছে বলে দাবি করেছেন সংগঠনটির নেতারা। তারা বলছেন, ইসকন বাংলাদেশ কখনোই কোনো সাম্প্রদায়িক বা সংঘাতমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত নয় এবং ভবিষ্যতেও এর ব্যতিক্রম হবে না।

লিখিত বক্তব্যে ইসকন বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক চারু চন্দ্র দাস ব্রহ্মচারী বলেন, ‘সম্প্রতি বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ইসকন বাংলাদেশকে নিয়ে মিথ্যা, বানোয়াট ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অপপ্রচার ছড়ানোর এক ধারাবাহিক প্রচেষ্টা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। গত ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তনের পর থেকে কিছু মহল আমাদের সংগঠনকে বিতর্কিত করতে বিভ্রান্তিমূলক বক্তব্য এবং ভিত্তিহীন অভিযোগ তুলে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির অপচেষ্টা করছে। আইনজীবী সাইফুল ইসলামের মর্মান্তিক মৃত্যুর পর এ অপচেষ্টা চরমে পৌঁছেছে। চট্টগ্রাম কোর্ট ভবনের সামনে সংঘটিত অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাকে কেন্দ্র করে ইসকন বাংলাদেশকে অন্যায়ভাবে দায়ী করার অপচেষ্টা চলছে।’ 

চারু চন্দ্র দাস আরও বলেন, ‘আমরা স্পষ্টভাবে জানাতে চাই, এ ধরনের ন্যক্কারজনক ঘটনা এবং চলমান আন্দোলনের সঙ্গে ইসকন বাংলাদেশের কোনো ধরনের সম্পৃক্ততা নেই। এই মিথ্যাচার এখন এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, সড়ক দুর্ঘটনার মতো বিষয়গুলোও ইসকনের চক্রান্ত বলে চালিয়ে দেওয়া হচ্ছে। কয়েক মাস আগেই প্রবর্তক শ্রীকৃষ্ণ মন্দিরের অধ্যক্ষ লীলারাজ গৌর দাস, সদস্য স্বতন্ত্র গৌরাঙ্গ দাস ও চট্টগ্রামের পুণ্ডরিক ধামের অধ্যক্ষ চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে ইসকনের সাংগঠনিক পদপদবিসহ যাবতীয় সাংগঠনিক কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। তাদের দ্বারা সংঘটিত কার্যক্রম ইসকনের কার্যক্রম নয়। এ ছাড়া গত ৩ অক্টোবর অফিসিয়াল বিবৃতির মাধ্যমে জানানো হয়, চিন্ময় কৃষ্ণ দাস (চন্দন কুমার ধর) ইসকন বাংলাদেশের মুখপাত্র নন। তাই তাঁর বক্তব্য সম্পূর্ণ তাঁর ব্যক্তিগত।

ইসকন নেতারা সরকারের কাছে চারটি আহ্বান জানান। এগুলো হলো– ইসকন বাংলাদেশের বিরুদ্ধে মিথ্যা ও বিভ্রান্তিমূলক প্রচারণার তদন্তপূর্বক প্রকৃত সত্য উদ্ঘাটন করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা। যারা উদ্দেশ্যমূলকভাবে ইসকনের সুনাম ক্ষুণ্ন করছে, তাদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ। ধর্মীয় সহনশীলতা বজায় রাখা ও শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার্থে যে কোনো ধরনের উস্কানিমূলক কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকা। সমাজে শান্তি, সম্প্রীতি এবং স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সবাই একযোগে কাজ করা।
সাইফুল ইসলাম হত্যাকাণ্ডে গভীর শোক প্রকাশ করে ইসকন। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন ইসকন বাংলাদেশের কোষাধ্যক্ষ জ্যোতিশ্বর গৌর দাস ব্রহ্মচারী, কেন্দ্রীয় সদস্য বিমলা প্রসাদ দাস, চিন্ময় গদাধর দাস ব্রহ্মচারী, ঋষিকেশ গৌরাঙ্গ দাস প্রমুখ।

 

আরও পড়ুন

×