ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

ঐক্যমোর্চার আলোচনা অনুষ্ঠানে বিশিষ্টজন

৫৩ বছরেও রাষ্ট্র সব মানুষের হতে পারেনি

মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় থিতু হতে হবে দেশকে

৫৩ বছরেও রাষ্ট্র সব মানুষের হতে পারেনি

শনিবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর মানবাধিকার: আমাদের করণীয়’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠানে বিশিষ্টজনেরা- সমকাল

সমকাল প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪ | ২১:১৮

মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানিয়েছেন দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা। তারা বলেছেন, গত ৫৩ বছরেও বাংলাদেশ সব মানুষের রাষ্ট্র হতে পারেনি। অথচ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বৈষম্যহীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মূলে রয়েছে অসাম্প্রদায়িকতা এবং সব নাগরিকের সমঅধিকার ও সমমর্যাদা প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় থিতু হতে হবে বাংলাদেশকে।

শনিবার রাজধানীর তোপখানা রোডের সিরডাপ মিলনায়তনে ‘ধর্মীয় ও জাতিগত জনগোষ্ঠীর মানবাধিকার: আমাদের করণীয়’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন বিশিষ্টজন। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ নেতৃত্বাধীন ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু ঐক্যমোর্চা এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যাতিরিক্ত অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন বলেন, আমাদের স্বপ্ন ছিল বাংলাদেশ একটি মানবিক রাষ্ট্র হবে। কিন্তু আজ পর্যন্ত তা অধরাই রয়ে গেছে। রাষ্ট্রধর্ম বাংলাদেশের সবচেয়ে সর্বনাশ করেছে। সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতা ও রাষ্ট্রধর্ম সাংঘর্ষিক।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. হাফিজুর রহমান কার্জন বলেন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের পর সবচেয়ে বেশি বৈষম্যের শিকার মুক্তিযুদ্ধ। আজও ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী কেন কমছে? সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও ঐক্য থাকলে কেন মন্দির, মসজিদ, গির্জা ও প্যাগোডা পাহারা দিতে হবে?

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. জোবাইদা নাসরীন বলেন, স্বাধীনতার ৫৩ বছরে সাম্প্রদায়িকতার চর্চা হয়েছে নানাভাবে। চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের লক্ষ্য ছিল বৈষম্যের বিরুদ্ধে ন্যায্যতা ও বলার স্বাধীনতা। তাই রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার দোহাই দিয়ে সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে হামলা জায়েজ করা যাবে না। সংখ্যালঘু জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এসবের প্রতিবাদ করতে হবে।

দৈনিক সমকালের উপদেষ্টা সম্পাদক আবু সাঈদ খান বলেন, দুঃখজনক হলেও সত্য বাংলাদেশের মাটি থেকে সাম্প্রদায়িকতা উচ্ছেদ করা যায়নি। যখনই কোনো সরকার পরিবর্তন হয়েছে, তখনই সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর ওপর নির্বিচারে নির্যাতন-নিপীড়ন নেমে আসে। যেদিন বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িকতার কবর হবে, সেদিনই সংখ্যালঘু ও সংখ্যাগুরু শব্দগুলো থাকবে না। আজ অসাম্প্রদায়িক আন্দোলনকে সর্বজনীন আন্দোলনে নিয়ে যেতে হবে। অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব হবে অভিযুক্তদের বিচারের আওতায় এনে শাস্তি দেওয়ার ব্যবস্থা করা।

মানবাধিকার কর্মী শামসুল হুদা বলেন, সংখ্যালঘুদের হামলার পেছনে বৈষয়িক স্বার্থ জড়িত রয়েছে। সংখ্যালঘুরা সুরক্ষিত না হলে সে রাষ্ট্র সভ্য রাষ্ট্র হতে পারে না।

ফাদার অ্যালবার্ট টি রোজারিও বলেন, সংখ্যালঘুরা ট্রাম্প কার্ড হিসেবে সব সরকারের আমলেই ব্যবহৃত হয়েছে, এখনও হচ্ছে।

থিওফিল নকরেক বলেন, সংবিধানে জাতিগোষ্ঠীর যথাযথ স্বীকৃতি নেই। আদিবাসীরা আদিবাসী হিসেবে স্বীকৃতি চায়। ভূমি অধিকার নিশ্চিত করার আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার বিধি কার্যকর করতে হবে।

সভাপতির বক্তব্যে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের অন্যতম সভাপতি নির্মল রোজারিও বলেন, সংখ্যালঘু ও সংখ্যাগুরু মানুষকে ঐক্যবদ্ধভাবে রাস্তায় নামতে হবে। সব সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে হবে।

বক্তারা আরও বলেন, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্তসহ যেসব সংখ্যালঘু নেতার নামে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে, তা অনতিবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে। সংখ্যালঘু নেতা চিন্ময় কৃষ্ণদাস ব্রহ্মচারীসহ যারা গ্রেপ্তার হয়েছেন, তাদের অবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে। আলোচনা অনুষ্ঠান থেকে পাওয়া সুপারিশগুলো নিয়ে একটি অবস্থানপত্র তৈরি করে অন্তর্বর্তী সরকারের সব কমিশনকে দেওয়া হবে বলে সংখ্যালঘু ঐক্যমোর্চার পক্ষ থেকে জানানো হয়।

হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য রঞ্জন কর্মকারের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রারম্ভিক লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন ঐক্য পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ও সংখ্যালঘু ঐক্যমোর্চার যুগ্ম সমন্বয়ক মনীন্দ্র কুমার নাথ। আরও বক্তব্য রাখেন ঐক্য পরিষদের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, সাংবাদিক সাইফুর রহমান তপন ও বাসুদেব ধর, ঐক্য পরিষদের নেতা জয়ন্ত কুমার দেব প্রমুখ।

আরও পড়ুন

×