৩০০ মিলিয়ন ডলার পাচার তদন্তের মুখে হাসিনা-জয়
যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিসের মাধ্যমে জানতে পেরেছে দুদক

হাসিনা
সমকাল প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪ | ০১:০৪ | আপডেট: ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪ | ০১:৪৭
শেখ হাসিনা ও তাঁর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রে ৩০০ মিলিয়ন (৩০ কোটি) ডলার পাচারের অভিযোগ উঠেছে। যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিসের মাধ্যমে এ তথ্য জানতে পেরেছে বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গতকাল রোববার এ অভিযোগ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন। দুদক সূত্র খবরটি নিশ্চিত করেছে।
অভিযোগটি দুদকের বিশেষ তদন্ত শাখাকে অনুসন্ধানের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। যথাসময়ে অভিযোগের অনুসন্ধান শেষ করে কমিশনে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এর আগে ১৭ ডিসেম্বর শেখ হাসিনা, বোন রেহানা, সজীব ওয়াজেদ জয় ও রেহানার মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ মেগা ৯ প্রকল্পের ৮০ হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ অভিযোগের অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। কমিশন সূত্র জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই সম্প্রতি শেখ হাসিনা ও সজীব ওয়াজেদ জয়ের বিষয়ে একটি অভিযোগ প্রাথমিকভাবে তদন্ত করেছে। তদন্তে জয়ের গুরুতর আর্থিক অনিয়মের বিষয়টি উঠে আসে। তাঁর নামে থাকা হংকং এবং কেম্যান আইল্যান্ডের বিভিন্ন ব্যাংক হিসাব থেকে স্থানীয় একটি মানি এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে ওয়াশিংটন ডিসি, নিউইয়র্ক এবং লন্ডনের বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবে টাকা পাচারের তথ্য পাওয়া যায়। এফবিআই তাদের লন্ডন প্রতিনিধির মাধ্যমে .আর্থিক কেলেঙ্কারির বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছে। এ ক্ষেত্রে গুরুতর মানি লন্ডারিংয়ের অপরাধ সংঘটিত হয়েছে। ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিসের সিনিয়র ট্রায়াল অ্যাটর্নি লিন্ডা স্যামুয়েলস স্পেশাল এজেন্ট লা প্রিভোটের সঙ্গে যোগাযোগ করে দেশ থেকে ৩০০ মিলিয়ন ডলার যুক্তরাষ্ট্রে পাচারের তথ্য পাওয়া যায়। ওই অর্থ বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবে জমা করা হয়।
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র ছাড়াও আশ্রয়ণসহ আটটি প্রকল্প থেকে ওই টাকা আত্মসাৎ করা হয়। এ ছাড়া অন্যান্য প্রকল্পে ২১ হাজার কোটি টাকা তছরুপের ঘটনা ঘটেছে।
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে শেখ হাসিনা পরিবারের ৫ বিলিয়ন (৫০০ কোটি) ডলার লোপাটের অভিযোগ অনুসন্ধানে দুদকের নিষ্ক্রিয়তা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে ১৫ ডিসেম্বর রুল জারি করেন হাইকোর্ট। গত ৩ সেপ্টেম্বর এ অভিযোগ অনুসন্ধানের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট করেন জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ। পরে এ নিয়ে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়। দুদক প্রকাশিত খবর আমলে নিয়ে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয়।
অভিযোগে জানা গেছে, রাশিয়ার সহযোগিতায় নির্মিত হচ্ছে রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্রটি। এটি নির্মাণে খরচ ধরা হয় ১ হাজার ২৬৫ কোটি ডলার। প্রয়োজনের তুলনায় যা বহুগুণ বেশি। মালয়েশিয়ার একটি ব্যাংকের মাধ্যমে হাসিনাকে এই বাজেট থেকে ৫০০ কোটি ডলার আত্মসাতের সুযোগ করে দেয় প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা রোসাটম। ভাগনি টিউলিপ সিদ্দিকের মধ্যস্থতায় রাশিয়ার সঙ্গে এ চুক্তি করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আর এ মধ্যস্থতার বিনিময়ে পাচার করা অর্থের ৩০ শতাংশ পেয়েছেন টিউলিপ, শেখ রেহানা ও পরিবারের কয়েকজন সদস্য।
২০১৩ সালে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে শেখ হাসিনার সাক্ষাতের সময় সঙ্গী ছিলেন টিউলিপ সিদ্দিক। গ্লোবাল ডিফেন্স কর্পের দাবি, সে সময় ঢাকা-মস্কোর বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র চুক্তির মধ্যস্থতাও করেন তিনি। ২০০৯ সালে ‘প্রচ্ছায়া লিমিটেড’ নামে একটি ভুয়া কোম্পানি চালু করেন টিউলিপ সিদ্দিক, তাঁর মা শেখ রেহানা ও চাচা তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা তারিক আহমেদ সিদ্দিক। যুক্তরাষ্ট্রেও জুমানা ইনভেস্টমেন্ট নামে একটি কোম্পানি রয়েছে তাদের।
গ্লোবাল ডিফেন্স কর্পের অভিযোগ, এ কোম্পানির মাধ্যমে বিভিন্ন দেশের অফশোর অ্যাকাউন্টে অর্থ পাচার করতেন শেখ হাসিনা। তাদের এ কোম্পানিটি ডেসটিনি গ্রুপ নামে একটি চিট ফান্ডের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশে প্রায় ৯০০ মিলিয়ন ডলার পাচার করেছে।
দুদকের উপপরিচালক মো. সালাহউদ্দিনের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের অনুসন্ধান দল রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রে দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধান করছিল। এ দলটিকেই ৩০০ মিলিয়ন ডলার পাচারের অভিযোগের অনুসন্ধানের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। দলের অন্য সদস্যরা হলেন উপপরিচালক মো. সাইদুজ্জামান, সহকারী পরিচালক আফনান জান্নাত কেয়া, সহকারী পরিচালক এস এম রাশেদুল হাসান ও সহকারী পরিচালক এ কে এম মর্তুজা আলী সাগর।
- বিষয় :
- হাসিনার পতন