শেখ হাসিনাকে ফেরাতে দিল্লিকে ঢাকার চিঠি
চিঠি গ্রহণ করেছে ভারত

হাসিনা
কূটনৈতিক প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪ | ০১:০৫
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে পালিয়ে যাওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেশে ফেরাতে ভারতকে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ। সেই চিঠি এরই মধ্যে গ্রহণ করেছে ভারত। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সহকারী মুখপাত্র চিঠি পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানিয়েছে, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বহিঃসমর্পণ চুক্তির আওতায় শেখ হাসিনাকে ফেরত চাওয়া হয়েছে।
গতকাল সোমবার দুপুরে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘বিচারের মুখোমুখি করতে সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে ফেরত চেয়েছে বাংলাদেশ। এটা ভারতকে জানানো হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে ভারতকে নোট ভারবাল (কূটনৈতিক পত্র) পাঠানো হয়েছে।’
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত। তাঁকে কীভাবে ফেরত চাওয়া হয়েছে– জানতে চাইলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, আনুষ্ঠানিকভাবে ভারত বাংলাদেশকে না জানালেও বা বাংলাদেশ জানতে না চাইলেও ডিসেম্বরের শুরুতে দুই দেশের পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠকে শেখ হাসিনাকে নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সেখানে ঢাকা পরিষ্কার জানিয়েছে, ভারতে বসে শেখ হাসিনা যেসব বক্তব্য বা বিবৃতি দিচ্ছেন, তা অন্তর্বর্তী সরকার পছন্দ করছে না। আর এ বিষয়টি আমলে নিয়েছে দিল্লি। সে সূত্র ধরেই বাকি কাজগুলো হবে।
২০১৩ সালের অক্টোবরে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ‘বহিঃসমর্পণ চুক্তি’ সই হয়। ২০১৩ সালে বহিঃসমর্পণ চুক্তিতে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীল কুমার সিন্ধে ও বাংলাদেশের পক্ষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর সই করেন। এ চুক্তির মূল উদ্দেশ্য ছিল পালিয়ে থাকা অপরাধীকে হস্তান্তরের মাধ্যমে বিচারের মুখোমুখি করা।
এর পর ভারতের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে বহিঃসমর্পণ চুক্তির ১০(৩) ধারা সংশোধন করা হয়, যা শেখ হাসিনার মন্ত্রিসভা ২০১৬ সালে অনুমোদন করে। সংশোধিত অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, কোনো বিচারিক আদালত গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করলে এবং দুই দেশের যে কেউ যদি ওই আসামিকে ফেরত চায়, তাহলে তাকে ফেরত দিতে হবে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওই কর্মকর্তা জানান, বহিঃসমর্পণ চুক্তির সংশোধিত ১০(৩) ধারা অনুযায়ী শেখ হাসিনাকে ভারতের কাছে ফেরত চাওয়া হয়েছে। তবে এখানে একটি কিন্তু আছে। মূল চুক্তি অনুযায়ী যে কোনো দেশ চাইলে এ চুক্তি কূটনৈতিকপত্রের মাধ্যমে বাতিলের বিষয়টি অপর দেশকে জানাতে পারবে। একবার এ পত্র দিয়ে দিলে তা বাতিল হতে ছয় মাস লাগবে।
এদিকে শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে আনা হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। গতকাল সকালে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদরদপ্তরে বিজিবি দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের সঙ্গে ভারতের বহিঃসমর্পণ চুক্তি আছে। ওই চুক্তি অনুযায়ী ফেরত আনা হবে।
একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য ২০১০ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন করেছিল আওয়ামী লীগ সরকার। এখন ছাত্র-জনতার আন্দোলনের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ সরকারের চালানো দমন-পীড়নকে ‘গণহত্যা’ বিবেচনা করে এ আদালতে বিচারের উদ্যোগ নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গণঅভ্যুত্থানের সময় হত্যাকাণ্ড, গত সাড়ে ১৫ বছরে গুম-ক্রসফায়ার, পিলখানাকাণ্ড, শাপলা চত্বরে হেফাজতের সমাবেশে হত্যাকাণ্ডসহ বেশ কয়েকটি বিষয়ে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ এসেছে। শেখ হাসিনা, তাঁর মন্ত্রিসভা, বিভিন্ন বাহিনীর প্রধানসহ অনেকের বিরুদ্ধে মামলাও হয়েছে। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গণহত্যার অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গত ১৮ অক্টোবর গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
- বিষয় :
- হাসিনার পতন