ঢাকা রবিবার, ০৬ জুলাই ২০২৫

জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র

সংবিধান প্রতিস্থাপন ও আওয়ামী লীগকে অপ্রাসঙ্গিক করা হবে

গণআকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন থাকবে ঘোষণায়, কবর হবে মুজিববাদের

সংবিধান প্রতিস্থাপন ও আওয়ামী লীগকে অপ্রাসঙ্গিক করা হবে

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র পাঠ করা হবে ৩১ ডিসেম্বর। দিনটি সামনে রেখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ও আশপাশের দেয়ালে আঁকা হচ্ছে অভ্যুত্থানের গ্রাফিতি। রোববার বিকেলে তোলা -মাহবুব হোসেন নবীন

 বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক 

প্রকাশ: ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪ | ০১:৪১

জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্রের মাধ্যমে বাহাত্তরের সংবিধান বাতিলের দাবি জোরালো করবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। গণঅভ্যুত্থান ঘিরে যে গণআকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়েছে, সেটির প্রাতিষ্ঠানিক, দালিলিক স্বীকৃতির বিষয় থাকবে এ ঘোষণাপত্রে। একই সঙ্গে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগকে এ দেশে অপ্রাসঙ্গিক করা হবে।

৩১ ডিসেম্বর রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ‘প্রোক্লেমেশন অব জুলাই রেভ্যুলেশন’ ঘোষণা করা হবে। এ সময় নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদসহ ১৫৮ জন সমন্বয়ক শপথ গ্রহণ করবেন। অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া শিক্ষার্থীরা বলছেন, ঘোষণাপত্রের খসড়া বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কাছে পাঠানো হয়েছে। সবার সঙ্গে আলোচনা করে এটি চূড়ান্ত করা হবে। শহীদ মিনারে ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী সব দলের নেতাকর্মী থাকবেন বলে আশা করছেন তারা। পাশাপাশি সব শহীদের পরিবার এবং আহতরাও থাকবেন। সবাইকে সঙ্গে নিয়ে ঘোষণাপত্র পাঠ করা হবে। 

প্রোক্লেমেশনের খসড়ায় বলা হয়েছে, বাহাত্তরের সংবিধান স্বাধীনতা যুদ্ধের লাখো শহীদের স্বপ্ন সমুন্নত রাখতে ব্যর্থ। এটি গণতন্ত্রের ভাঙন এবং জাতীয় প্রতিষ্ঠানের অবক্ষয়ের পথ প্রশস্ত করেছে। সামরিক শাসন এবং রাজনৈতিক স্বার্থে সংবিধান সংশোধন রাষ্ট্র ও প্রতিষ্ঠানগুলোকে দুর্বল করে তুলেছিল। সামরিক, বেসামরিক প্রশাসন, বিচার বিভাগ, পুলিশসহ গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোয় রাজনীতিকীকরণ হয়েছে। দেড় দশক ধরে নৃশংস শক্তি দিয়ে ভিন্নমতাবলম্বীদের গুম করা হয়েছে, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। পিলখানা ট্র্যাজেডি, শাপলা চত্বর হত্যাকাণ্ডের মতো নৃশংসতা এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। ভারতবিরোধী কর্মীদের নির্মমভাবে দমন করা হয়েছে। 

এদিকে গতকাল রোববার রাজধানীর বাংলামটরে জরুরি সংবাদ সম্মেলনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেছেন, জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্রের মাধ্যমে মুজিববাদ ও মুজিববাদী সংবিধানের কবর রচিত হবে। আওয়ামী লীগ দল হিসেবে অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়বে বাংলাদেশে। তিনি বলেন, গণঅভ্যুত্থান ঘিরে আমাদের যে গণআকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়েছে, ’৭২-এর সংবিধানের বিপরীতে গিয়ে মানুষ যে রাস্তায় নেমে এসেছে, সেটির প্রাতিষ্ঠানিক, দালিলিক স্বীকৃতি ঘোষণা করার জন্য ৩১ ডিসেম্বর প্রোক্লেমেশন ঘোষণা করব। আমাদের পরবর্তী বাংলাদেশের স্বপ্ন-আকাঙ্ক্ষা-অভিপ্রায় এবং ইশতেহার লিপিবদ্ধ থাকবে এই প্রোক্লেমেশনে। এটা কোনো দলের বা শ্রেণির নয়। মুজিববাদী চেতনার বিরুদ্ধে মানুষ দাঁড়িয়েছে, আওয়ামী লীগের ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে মানুষ দাঁড়িয়েছে– আমরা চাই এর স্বীকৃতি দেওয়া হোক।

জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেন, বিগত যেসব ব্যবস্থা মানুষ গ্রহণ করেনি এবং নতুন যেসব ব্যবস্থা চালু হবে, তার মধ্যে পার্থক্য হিসেবে এই ঘোষণাপত্র বাংলাদেশের একটি দলিল হয়ে থাকবে। যারা দেশ পরিচালনায় আসবেন, এ ঘোষণাপত্র তাদের জন্য একটি নির্দেশক হিসেবে থাকবে। এখানে বাংলাদেশের সব মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটবে। 
জানতে চাইলে ঘোষণাপত্র নিয়ে সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা দিয়েছেন জাতীয় নাগরিক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক মনিরা শারমিন। তিনি সমকালকে বলেন, মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণাপত্র পরবর্তী সময়ে বাহাত্তরের সংবিধানে প্রতিফলিত হয়নি। এই সংবিধানের ওপর ভিত্তি করে বাকশাল হয়েছে এবং হাসিনার মতো ফ্যাসিবাদী তৈরি হয়েছে। চব্বিশের অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে সংবিধানটি বাতিল হয়ে গেছে। তাই আমরা বলছি নতুন সংবিধান লাগবে। নতুন সংবিধানের জন্য প্রোক্লেমেশন দরকার। তিনি বলেন, ‘১৯৪৭ সাল, ১৯৭১ এবং ১৯৯০ সালের সেটেলমেন্টগুলোতে অনেক মানুষের আত্মত্যাগ আছে, যেগুলো প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ করা হয়নি। এবার চব্বিশে এসে আমরা সবগুলো প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ করতে চাচ্ছি।’ 

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখ্য সংগঠক আব্দুল হান্নান মাসউদ, মিডিয়া সেল সম্পাদক জাহিদ আহসান প্রমুখ। 

 

আরও পড়ুন

×