ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০৩ জুলাই ২০২৫

সেতুর টোলে চলছে এখনও নৈরাজ্য

বর্ধিত হার কার্যকর হচ্ছে না, ১০ সেতুতে টোল আদায় বন্ধ

সেতুর টোলে চলছে এখনও নৈরাজ্য

ফাইল ছবি

রাজীব আহাম্মদ

প্রকাশ: ০৮ জানুয়ারি ২০২৫ | ০২:০১ | আপডেট: ০৮ জানুয়ারি ২০২৫ | ০৭:৪৮

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর দেশের অন্তত ১৫টি সেতুতে টোল আদায় বন্ধ হয়ে যায়। এখনও ১০টি সেতুতে তা আদায় করা যাচ্ছে না। স্থানীয়দের বাধা, বিগত সরকারের আমলে কাজ পাওয়া আওয়ামী লীগ নেতাদের মালিকানাধীন ইজারাদার প্রতিষ্ঠানের লোকজন পালিয়ে যাওয়া এবং কোথাও বিএনপি নেতা পরিচয়ে দখলবাজির কারণে টোল আদায় হচ্ছে না।

এখনও টোল আদায় বন্ধ থাকা সেতুগুলো হলো– ময়মনসিংহের শম্ভুগঞ্জ সেতু, খুরশিদ মহল সেতু, বানার সেতু ও রফিক উদ্দিন ভূঁইয়া সেতু, চাঁদপুর সেতু, চট্টগ্রামের তৈলারদ্বীপ সেতু, ঢাকার ধল্লা সেতু, মুন্সীগঞ্জের তুলসীখালী ও মরিচা সেতু এবং কুষ্টিয়ার সৈয়দ মাছ-উদ রুমী সেতু।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের মহানন্দা সেতুতে অন্যান্য যানবাহন থেকে টোল আদায় হলেও ব্যাটারিচালিত যান থেকে টাকা নেওয়া যাচ্ছে না। ৫ আগস্ট স্থানীয় বাসিন্দারা এ সেতুতে টোল আদায় বন্ধ করে দেয়। পরে প্রশাসনের মধ্যস্থতায় ব্যাটারিচালিত যানবাহনে টোল বন্ধ করা হয়। মানিকগঞ্জের বাথুলি এক্সেল লোড কন্ট্রোল স্টেশনও বন্ধ রয়েছে। 

বানার, রফিক উদ্দিন ভূঁইয়া, সৈয়দ মাছ-উদ রুমী সেতুতে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর (সওজ) নিজেই টোল আদায় করত। বাকি সাতটিতে ইজারাদারের মাধ্যমে টোল আদায় হতো। শম্ভুগঞ্জ সেতুর টোলের ইজারাদার মেসার্স মোস্তফা কামাল নামক প্রতিষ্ঠান। তিন বছরের জন্য ৫৬ কোটি ৩৮ লাখ টাকায় গত ১ জুলাই ইজারা পেয়েছিল প্রতিষ্ঠানটি। টোলমুক্ত সেতুর দাবিতে স্থানীয়রা হামলা করায় মোস্তফা কামালের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ৫ আগস্টের পর আসছেন না। সরকার ইজারার টাকাও পাচ্ছে না। 

সওজের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (রক্ষণাবেক্ষণ) জিকরুল হাসান সমকালকে বলেন, পট পরিবর্তনের পর কয়েক জায়গায় ইজারাদার প্রতিষ্ঠান আসছে না। কিছু জায়গায় স্থানীয়রা বাধা দিচ্ছে। এতে ১০টি সেতুতে টোল আদায় বন্ধ রয়েছে। 

সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের (সওজ) রাজস্ব আয়ের প্রধান খাত সেতুর টোল। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে টোল আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ হাজার ২৮৭ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। বিপরীতে আয় হয় ১ হাজার ১৭৪ কোটি টাকা। এ টাকায় সেতু রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়। চলতি অর্থবছরের বাজেটে টোল আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ২ হাজার কোটি টাকা। যে সেতুগুলোতে টোল আদায় বন্ধ ছিল এবং এখনও রয়েছে, সেগুলো থেকে গত অর্থবছরে সরকারের আয় হয়েছিল ৫০ কোটি ৪৯ লাখ টাকা।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুরের শহীদ আস্তার রহমান সেতু ও রহনপুর-বোয়ালিয়া সড়কের মকরমপুর সৈয়দ সুলতান সেতুর প্লাজায় ভাঙচুরে টোল আদায় বন্ধ হয় গত ১৩ আগস্ট। পরে তা সেনাবাহিনীর সহায়তায় চালু হয়। 

 নড়াইলের শিকিরহাট ফেরিঘাটেও টোল আদায় প্রায় তিন মাস বন্ধ থাকার পর চালু হয়েছে। চালু হয়েছে মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইরের কালীগঙ্গা নদীর ভাষাশহীদ রফিক সেতুতে টোল আদায়।
টোল আয় বাড়াতে গত ২৬ জুন নীতিমালা হালনাগাদ করেছিল আওয়ামী লীগ সরকার। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান শুরু হওয়ায় নতুন টোল হার কার্যকর করা যায়নি। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ এবং সওজ দুই দফা সভা করে বর্ধিত টোল কার্যকর করে। সবশেষ সভা হয় গত ২৬ ডিসেম্বর। 

২০১৪ সালের নীতিমালা অনুযায়ী, জাতীয় মহাসড়কে যেসব সেতু রয়েছে, তার ভিত্তি টোল ছিল ৩০০ টাকা। অর্থাৎ এমন সড়কে ৭৫০ থেকে ১ হাজার মিটার দৈর্ঘ্যের কোনো সেতুতে মাঝারি ট্রাক পার হলে ৩০০ টাকা টোল দিতে হয়। হালনাগাদ নীতিমালায় তা ৪১০ টাকা। বড় বাসের টোল ২৭০ টাকা। হালনাগাদ নীতিমালা অনুযায়ী তা ৩৭০ টাকা। ২০০ থেকে ৫০০ মিটার দৈর্ঘ্যের সেতুর টোল ভিত্তি টোলের ৫০ শতাংশ। এ দৈর্ঘ্যের সেতুই বেশি। এতেও ভিত্তি টোল ১১০ টাকা বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রকৃতপক্ষে টোল বেড়েছে দ্বিগুণ। 

সূত্র সমকালকে জানিয়েছে, সরকারি আনুষ্ঠানিকতা রক্ষায় এসব সভা হচ্ছে। মন্ত্রণালয় এবং সওজ বর্ধিত টোল কার্যকরের বিষয় এগিয়ে রেখে তা অর্থ মন্ত্রণালয়কে অবহিত রাখছে। চলমান টোলই আদায় করা যাচ্ছে না। রাজনৈতিক এবং আইনশৃঙ্খলাজনিত বর্তমান পরিস্থিতিতে বর্ধিত টোল কার্যকর অসম্ভব। 

ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ে ব্রহ্মপুত্র নদে খুরশিদমহল সেতুতে টোল আদায়ের ইজারাদার প্রতিষ্ঠান মেসার্স খুরশিদমহল ব্রিকসের মালিক মো. আসাদুজ্জামান স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা।

তাঁর প্রতিষ্ঠান ২০২৬ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত টোল আদায়ের ইজারা পেয়েছে। কিন্তু গত ৫ আগস্ট পালিয়ে যায় ইজারাদার প্রতিষ্ঠানের লোকজন। ২৩ আগস্ট টোল প্লাজা দখল করেন স্থানীয় বিএনপি নেতারা। পরে সেনাবাহিনী তাদের হটিয়ে দিলেও টোল আদায় বন্ধ রয়েছে।

চট্টগ্রামের তৈলারদ্বীপ সেতু থেকে গত বছর সরকারের আয় হয় ১০ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। ৫ আগস্টের পর স্থানীয়দের আন্দোলনে টোল আদায় বন্ধ হয়। ইজারাদার প্রতিষ্ঠানের লোকজন জেআর ট্রেডিং সেতুতে যেতে পারছে না। 

 

আরও পড়ুন

×