ঢাকা বুধবার, ০২ জুলাই ২০২৫

নগরের জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও জলাশয় পুনরুদ্ধারে ‘বায়োসিটি’ প্রতিযোগিতা

নগরের জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও জলাশয় পুনরুদ্ধারে ‘বায়োসিটি’ প্রতিযোগিতা

.

সমকাল ডেস্ক

প্রকাশ: ২৩ মার্চ ২০২৫ | ১৭:১৯

সুইডেন দূতাবাসের সহযোগিতায় ওয়াটারএইড বাংলাদেশ সফলভাবে শেষ করেছে ‘বায়োসিটি’ প্রতিযোগিতা। নগরের জলাশয়ের জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও পরিবেশ পুনরুদ্ধারে তরুণদের সম্পৃক্ত করার জন্য এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়।

শনিবার বিশ্ব পানি দিবসে প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়। পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে বিচারক প্যানেল, চূড়ান্ত প্রতিযোগিরা এবং বিশিষ্ট অতিথিরা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে ওয়াটারএইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর হাসিন জাহানের উপস্থিতিতে নগর জলাশয় পুনরুদ্ধার ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের ক্ষেত্রে তাদের অসাধারণ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে বিজয়ী দল, সম্মানজনক উল্লেখযোগ্য দল এবং জনপ্রিয় পছন্দ পুরস্কার বিজয়ীদের হাতে তুলে দেন বিচারকেরা।

প্রতিযোগিতার মূল উদ্দেশ্য ছিল ঢাকার জলাভূমিগুলোর দ্রুত অবক্ষয়ের বিরুদ্ধে সচেতনতা সৃষ্টি করা এবং তরুণদের উদ্ভাবনী ও টেকসই সমাধান নিয়ে কাজ করতে উদ্বুদ্ধ করা। এই উদ্যোগ ব্যাপক সাড়া ফেলে। বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ১৮ থেকে ৩০ বছর বয়সী দেড় হাজারের বেশি ব্যক্তি এতে নিবন্ধন করেন এবং তিন থেকে পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট ১৪০টিরও বেশি দল তাদের উদ্ভাবনী ও টেকসই পরিকল্পনা জমা দেন।

প্রথমিক মূল্যায়নের পর ১১টি দল ঢাকায় গ্র্যান্ড ফিনালেতে অংশ নেয় গত ১৯ মার্চ। এই দলগুলো বিচারকদের সামনে তাদের প্রকল্প উপস্থাপনের সুযোগ পায়। বিচারকমণ্ডলীর নেতৃত্ব দেন বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সহ-সভাপতি স্থপতি ইকবাল হাবিব। অন্যান্য বিচারকদের মধ্যে ছিলেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা কমডোর এ বি এম শামসুল আলম; বাংলাদেশে সুইডেন দূতাবাসের জলবায়ু ও পরিবেশের প্রোগ্রাম অফিসার মোস্তাফিজুর রহমান; এশিয়া প্যাসিফিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান ড. মেহরীন মাজেদ; এবং স্বাধীন পরামর্শক (পরিবেশ, জলবায়ু পরিবর্তন ও গবেষণা ব্যবস্থা) ড. হাসিব ইরফানুল্লাহ।

পুঙ্খানুপুঙ্খ মূল্যায়ন প্রক্রিয়ার পর বিচারকরা নগরের জলাভূমি ও জীববৈচিত্র্য পুনুরুদ্ধারে সবচেয়ে সম্ভাবনাময় ও কার্যকরী ধারণার ভিত্তিতে একটি বিজয়ী দল এবং তিনটি সম্মানজনক উল্লেখযোগ্য দল নির্বাচন করেন। কয়েকটি ধাপে বাছাই ও বিশ্লেষণ শেষে চূড়ান্তভাবে বিজয়ী হয় ‘টিম ওয়াটারইয়ার্ড’। বিজয়ীদলের সদস্যরা হলেন মো. শহীদুজ্জামান, তাহমিদ রানা খান, আদিবা জামান, হিমেল মৌলিক এবং নাহিদুজ্জামান স্বাধীন। এছাড়াও, তিনটি দলকে বিশেষ সম্মাননা দেওয়া হয়। পুরষ্কার হিসেবে পদক ও সার্টিফিকেটের পাশাপাশি বিজয়ী দলকে এক লাখ ও বিশেষ সম্মাননাপ্রাপ্ত দলগুলোর প্রত্যেককে ২৫ হাজার টাকা প্রদান করা হয়। মডেল পরিকল্পনাটি সরাসরি বাস্তবায়ন করা হবে, যা তরুণ উদ্ভাবকরা তাদের স্বপ্ন বাস্তবে রূপ দিতে এবং আইপিএইচ পুকুর পুনরুজ্জীবনে সরাসরি অবদান রাখতে সহায়তা করবে।

পাশাপাশি, আরেকটি আকর্ষণীয় অংশ ছিল ‘জনপ্রিয় পছন্দ পুরস্কার’, যেখানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সাধারণ জনগণ তাদের প্রিয় ধারণার পক্ষে ভোট দেন। নেটিজেন্দের প্রতিক্রিয়ার বিচারে বিজয়ী দলগুলো ছিল ‘ওয়াটার-ইয়ার্ড’, ‘ইকো-প্ল্যানারস’ এবং ‘টিম-ইকুইনক্স’।

বিজয়ী দল ‘ওয়াটার-ইয়ার্ড’ একটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা তুলে ধরে— পুকুরের সঙ্গে স্থানীয় সম্প্রদায়ের মালিকানা ও সংযোগের অভাব। তাদের পরিকল্পনায় পাঁচটি কৌশলগত হস্তক্ষেপের মাধ্যমে জনগণের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন এবং পুকুরকেন্দ্রিক জীবিকার এবং বিনোদনের সুযোগ তৈরি করে স্থানীয় সম্প্রদায়ের জন্য অর্থনৈতিক সুবিধা আনয়নের ব্যবস্থা রয়েছে। তাদের এই পরিকল্পনাটি ঢাকার একটি পুকুরে বাস্তবায়ন করা হবে।

ওয়াটারএইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর হাসিন জাহান বাংলাদেশের নগরগুলোর ক্রমশ ক্ষয়িষ্ণু জীববৈচিত্র্য ও জলাধার রক্ষায় তরুণ প্রজন্মের বিপুল সাড়াকে ধন্যবাদ জানান। এসময় তিনি বলেন, ‘দেশের এই অনালোচিত অথচ অত্যন্ত জরুরি সমস্যা মোকাবিলায় তরুণদের সম্পৃক্ত করাটা এখন সময়ের দাবী। প্রতিযোগিরা পরিবেশগত ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে তাদের প্রতিভা প্রকাশ করেছেন, তা আমরা স্বাগত জানাই’।

বাপার সহ-সভাপতি স্থপতি ইকবাল হাবিব বলেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন ধরে ধারণা করে আসছিলাম, আমাদের তরুণরা কোনও বিষয় গভীরভাবে বোঝার চেষ্টা করে না। কিন্তু এবার নগর জলাভূমি পুনরুজ্জীবনের জন্য তারা যে উদ্ভাবনী ধারণা নিয়ে এসেছে, তা আমাদের ভুল প্রমাণ করেছে। এগুলো সবই মৌলিক এবং বাস্তবায়নযোগ্য’।

আরও পড়ুন

×