ঢাকা বুধবার, ০২ জুলাই ২০২৫

বিচার-সংস্কার-নির্বাচনসহ ছয় দাবি এনসিপির

বিচার-সংস্কার-নির্বাচনসহ ছয় দাবি এনসিপির

সংবাদ সম্মেলনে নাহিদ ইসলাম

 সমকাল ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৫ মে ২০২৫ | ০১:৩২ | আপডেট: ২৫ মে ২০২৫ | ১০:২০

অন্তর্বর্তী সরকারকে সমর্থন জানিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। গতকাল শনিবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকের পর দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, প্রধান উপদেষ্টাকে বলেছি– তিনি যেন দায়িত্বে থাকেন এবং গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে কাজ করেন।
রাত পৌনে ১০টার দিকে শুরু হওয়া বৈঠকে ছয় দাবি জানায় শেখ হাসিনার পতন ঘটানো অভ্যুত্থানের ছাত্র নেতৃত্বের দল এনসিপি।

দাবিগুলো হলো– গণঅভ্যুত্থানে শহীদ পরিবারের পুনর্বাসন ও আহতদের চিকিৎসা, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে জুলাই ঘোষণাপত্র, আওয়ামী লীগ আমলের জাতীয়-স্থানীয়সহ সব নির্বাচন অবৈধ ঘোষণা, বিচার-সংস্কার-নির্বাচনের সমন্বিত সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ঘোষণা, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করে সংসদের আগে স্থানীয় নির্বাচন এবং বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের আয়োজন।

এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব সমকালকে বলেন, প্রধান উপদেষ্টাকে দাবিগুলো লিখিত দেওয়া হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টার জবাব কী ছিল– প্রশ্নে তিনি বলেন, ড. ইউনূস বলেছেন, ‘ছাত্র-জনতার আহ্বানে দায়িত্ব গ্রহণের সময় অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা পূরণে সহযোগিতার যে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল, দু-একটি রাজনৈতিক দল তা দিচ্ছে না।’

বৈঠকের পর নাহিদ ইসলাম বলেন, আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধের সময় উপদেষ্টা পরিষদের সিদ্ধান্ত ছিল ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে জুলাই ঘোষণাপত্র দেওয়া হবে। বিষয়টি নিয়েও আলোচনা হয়েছে। এর আগে বৈঠকে বিএনপি দুই ছাত্র উপদেষ্টাসহ তিনজনের পদত্যাগ দাবি করে। এ ব্যাপারে নাহিদ বলেন, গণঅভ্যুত্থানের প্রতিনিধি হিসেবে উপদেষ্টা হলেও তারা (আসিফ আহমেদ সজীব ভুঁইয়া ও মাহফুজ আলম) এনসিপির প্রতিনিধিত্ব করেন না। বিষয়টি আজ আমরা স্পষ্ট করেছি।

এনসিপির প্রতিনিধি দলে ছিলেন দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ ও জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্য সচিব তাসনিম জারা।

বিচার, সংস্কার ও নির্বাচনের রোডম্যাপ
এর আগে দুপুরে রাজধানীর বাংলামটরে এনসিপির অস্থায়ী কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে একই সঙ্গে জুলাই গণহত্যার বিচার, সংস্কার ও নির্বাচনের রোডম্যাপ দাবি করে এনসিপি। নাহিদ ইসলাম বলেন, এতে জনমনে ও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে স্বস্তি এবং আস্থা তৈরি হবে।

তিনি বলেন, ছাত্র উপদেষ্টারা রাজনীতি বা নির্বাচন করতে চাইলে সরকার থেকে বের হয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। কিন্তু এনসিপির সঙ্গে তাদের যুক্ত করে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অপপ্রচার চালানো হচ্ছে।

ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন আয়োজনে রোডম্যাপ ঘোষণার দাবিতে সরকারকে চাপে রেখেছে বিএনপি। এ নিয়ে অস্থিরতায় গত বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে পদত্যাগের আলোচনা করেন প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস।

গত বৃহস্পতিবার সরকারপ্রধানের সঙ্গে দেখা করেছিলেন নাহিদ ইসলাম। সংবাদ সম্মেলনে সেদিনের আলোচনা সম্পর্কে তিনি বলেন, যেভাবে নির্বাচনের জন্য চাপ দেওয়া হচ্ছে, তাতে নিয়ন্ত্রিত নির্বাচনের আশঙ্কা করছেন ড. ইউনূস। এর দায় তিনি নিতে চান না।

নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আদালত, এনবিআর ও যমুনার সামনে যে ধরনের পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছিল, এতে ড. ইউনূস মনে করছেন, যদি তাঁকে জিম্মি করা হয় অথবা চাপ প্রয়োগ করে কোনো দাবি আদায় করা হয়, তাতে সম্মত নন তিনি। এ ছাড়া বিচার ও সংস্কারের মতো মৌলিক পরিবর্তন করতে না পারলে তাঁর দায়িত্বে থাকা অর্থহীন হবে।’
সেনাবাহিনী প্রসঙ্গে এনসিপি আহ্বায়ক বলেন, তাদের প্রতি শ্রদ্ধা আছে। কিন্তু রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত দেওয়া তাদের কাজ নয়; তারা নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে। সেনানিবাসে আশ্রয় নেওয়া ৬২৬ জনের তালিকা আরও আগে প্রকাশ পেলে জনমনে বিভ্রান্তি তৈরি হতো না। সেনাবাহিনীর ভাবমূর্তিও ক্ষুণ্ন হওয়ার সুযোগ থাকত না।

নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষতা হারিয়েছে অভিযোগ করে নাহিদ বলেন, বর্তমান কমিশনের পক্ষে সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন সম্ভব নয়, যদি না তারা আস্থার জায়গায় ফিরে আসে। তা না হলে তাদের দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়া উচিত।

এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন জানান, অন্তর্বর্তী সরকারকে পাঁচ বছর ক্ষমতায় রাখতে যে প্রচার চালানো হচ্ছে, এর সঙ্গে তাদের দলের কোনো সম্পর্ক নেই। সরকার কাজের ভিত্তিতে সময় পাবে, মেয়াদ দিয়ে নয়।

তিনি বলেন, রিলিফ করিডোর বা মানবিক করিডোর– যে সিদ্ধান্তই নেওয়া হোক, তা যেন জনমনে ধোঁয়াশা সৃষ্টি না করে এবং রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পরিষ্কারভাবে আলোচনার ভিত্তিতে হয়।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন, আরিফুল ইসলাম আদীব, দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ প্রমুখ।

আরও পড়ুন

×