ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০৩ জুলাই ২০২৫

সংলাপে বক্তারা

গণঅভ্যুত্থানের চেতনা ধারণকারীদের সঙ্গে নিয়ে এগোতে হবে

গণঅভ্যুত্থানের চেতনা ধারণকারীদের সঙ্গে নিয়ে এগোতে হবে

সংলাপে বক্তারা। ছবি: সমকাল

সমকাল প্রতিবেদক

প্রকাশ: ৩১ মে ২০২৫ | ২১:২৩

গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে দেশের গণতান্ত্রিক পরিবর্তনের জন্য নতুন রাজনৈতিক শক্তি দরকার। যারা জুলাই গণঅভ্যুত্থানের চেতনা ধারণ করে, তাদের নিয়ে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। তাহলেই আমরা পরিবর্তন বা সংস্কারের পথে এগিয়ে যেতে পারব। 

শনিবার রাজধানীর প্রেস ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ (পিআইবি) মিলনায়তনে ‘বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক উত্তরণ এবং প্রাতিষ্ঠানিক ক্ষয়: সামনের পথ কী’ শীর্ষক সংলাপে বক্তারা এসব কথা বলেন। ঢাকা ইনস্টিটিউট অব রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালিটিক্স (দায়রা) এই সংলাপের আয়োজন করে।

সভায় লন্ডনের এসওএস বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মোশতাক এইচ খান বলেন, অভ্যুত্থানের পক্ষশক্তির মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির চেষ্টা চলছে। এই শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। গণতন্ত্র ও আইনের শাসনের দিকে এগোতে চাইলে আরও বেশি অন্তর্ভুক্তিমূলক হতে হবে।

পিআইবির মহাপরিচালক ফারুক ওয়াসিফ বলেন, নির্বাচনের আগে একটা সংস্কার হতেই হবে। সেটা আরেকটা রক্তপাত এড়াতে কিংবা মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নের স্বার্থেই হোক। অন্তর্বর্তী সরকার প্রধান ড. ইউনূসের অনেক ভুল ত্রুটি থাকতে পারে। কিন্তু দেশকে পরাশক্তির হাত থেকে রক্ষায় তাকে সময় দিতে হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক ও স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের সদস্য ড. কাজী মারুফুল ইসলাম বলেন, ক্ষমতার বণ্টন বা নতুন বিন্যাসের ক্ষেত্রে স্থানীয় সরকার একটি শক্তিশালী মাধ্যম হতে পারে। এটিকে কেন্দ্রীয় সচিবালয় থেকে সরিয়ে বিকেন্দ্রীকরণ করা দরকার। নগর সরকার করা যেতে পারে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সামিনা লুৎফা নেত্রা বলেন, আমাদের কিছু ঐতিহাসিক অর্জন রয়েছে। সংস্কারের নামে আমরা যেন এই অর্জনগুলো থেকে দূরে সরে না যাই। বৈশ্বিক চাটার বিবেচনায় রেখে নারীর অধিকার, মানবাধিকার, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন ইত্যাদি জায়গাগুলো থেকে আমরা ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে যেতে পারব না। মানুষের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করেই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।   

নারী সংস্কার কমিশনের প্রধান ও নারীপক্ষের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য শিরীন পারভিন হক বলেন, আমরা বাংলাদেশকে মানবিক রাষ্ট্র হিসেবে চাই। আমরা যৌনকর্মীদের অধিকার ও স্বীকৃতি চেয়েছি। আমরা রোজ রোজ পুলিশের হাতে মার খেতে চাই না। এজন্য নারী সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনকে ঘিরে আমাদের অনেক গালিগালাজ শুনতে হয়েছে। আমরা বলছি, সমালোচনা হোক, দ্বিমত হোক, তবু এই বিষয়গুলো প্রকাশ্যে আসতে হবে।    

এবি পার্টির সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ বলেন, এনবিআর ও সচিবালয়ের সংস্কার কারও ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়নি। কারও বেতন-ভাতাও কমিয়ে দেওয়া হয়নি। তাহলে কীভাবে এসব জায়গায় ঐক্য পরিষদের ব্যানারে আন্দোলন হয়? দুর্নীতিগ্রস্ত প্রশাসনিক ব্যবস্থার পরিবর্তনকে রুখে দিতেই সংস্কারে বাধা সৃষ্টি করা হচ্ছে।

এনসিপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম আহ্বায়ক এহতেশাম হক বলেন, জুলাই গণআন্দোলনের দেড় দুই হাজার শহীদ রাস্তায় বের হয়েছিল কী, নির্বাচন ডিসেম্বর না জুনে- এই বিতর্ক শোনার জন্য। তারা ভেবেছিল- অধিকার চাইতে গিয়ে রাষ্ট্র আমাদের গুলি করে মারছে। এর অবসান দরকার। 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. আসিফ এম শাহানের সঞ্চালনায় সংলাপে আরও বক্তব্য রাখেন ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির অর্থনীতি ও সমাজবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক তানভীর সোবহান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. রুবাইয়া মোর্শেদ, ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (বিআইজিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইমরান মতিন, ডেইলি স্টারের সাংবাদিক জিনা তাসরীন, দুর্নীতি দমন সংস্কার কমিশনের ছাত্র প্রতিনিধি মুনিম মোবাশ্বির, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির সমন্বয়ক সাদাব মুবতাসিম প্রান্তিক প্রমুখ। দায়রার পক্ষে সমাপনী বক্তব্য রাখেন পলিসি অ্যানালিস্ট মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান।

আরও পড়ুন

×