ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

নেই করোনা পরীক্ষার কিট নষ্ট পিসিআর যন্ত্র

নেই করোনা পরীক্ষার কিট নষ্ট পিসিআর যন্ত্র

.

 স্বপন চৌধুরী, রংপুর ও রাসেল চৌধুরী, হবিগঞ্জ

প্রকাশ: ১৭ জুন ২০২৫ | ২৩:৪৭

দেশে নতুন করে করোনার সংক্রমণ বাড়তে থাকায় রংপুরের মানুষের মধ্যেও আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। তবে বিভাগের কোথাও এখনও নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষার কোনো উদ্যোগ নেয়নি স্বাস্থ্য বিভাগ। সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে করোনা পরীক্ষার কিট না থাকায় উপসর্গ নিয়ে এসে ফিরে যেতে হচ্ছে অনেককে। আবার গত তিন বছর ধরে বিভাগের একমাত্র ভরসা দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে থাকা তিনটি আরটি-পিসিআর ল্যাবের যন্ত্র বিকল হয়ে আছে। এ জন্যও বন্ধ রয়েছে নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষা। কবে নাগাদ এসব যন্ত্র সচল হবে, কিট পাওয়া যাবে তা নিশ্চিত করে জানাতে পারেননি স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা।
একই অবস্থা হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালেও। সেখানে করোনা পরীক্ষার কিট যৎসামান্য থাকলেও অচিরেই তার মেয়াদ শেষ হবে। ফলে পুরোনো এসব কিট দিয়ে পরীক্ষার ঝুঁকি নিচ্ছেন না চিকিৎসকরা। আবার আরটি-পিসিআর যন্ত্র না থাকায় উপসর্গ নিয়ে এলেও ফিরে যেতে হচ্ছে রোগীদের। ২০২০ সালের ২০ মে করোনা ভাইরাস শনাক্ত করতে হাসপাতালে পিসিআর ল্যাব স্থাপনের অনুমোদন হলেও এখন পর্যন্ত তা বাস্তবায়ন হয়নি। যন্ত্র না আসায় পিসিআর ল্যাব স্থাপন কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। 

রংপুর বিভাগীয় স্বাস্থ্য কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, করোনা পরীক্ষার জন্য দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে একটি এবং রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দুটিসহ ৩টি পিসিআর মেশিন রয়েছে। এর সবই এখন অকেজো। ফলে বিভাগের আট জেলায় করোনার নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষা বন্ধ আছে। ২০২২ সালের ৮ অক্টোবর থেকে রংপুর বিভাগে করোনা সংক্রমণের হার শূন্যের কোঠায় নামে। এর পর গত প্রায় তিনবছর এ অঞ্চলে করোনা শনাক্তের হার শূন্যের কোঠাতেই ছিল। ফলে হাসপাতালগুলোতে করোনা পরীক্ষার যে কিট ছিল, তা দীর্ঘদিন ব্যবহৃত না হওয়ায় এখন মেয়াদোত্তীর্ণ। নমুনা পরীক্ষা করাতে এখন নতুন কিট সংগ্রহ করতে হবে। কিন্তু রংপুর স্বাস্থ্য বিভাগের কাছে করোনা পরীক্ষার জন্য কোনো কিট নেই। 
স্বাস্থ্য বিভাগের একাধিক কর্মকর্তা জানান, রংপুরসহ বিভাগের আট জেলায় আবার করোনার সংক্রমণ দেখা দিয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কারণ নানা উপসর্গ নিয়ে রোগীরা আসছেন। তবে কেউ আক্রান্ত হয়েছেন কিনা, তা নিশ্চিত হওয়ার উপায় নেই। নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষা শুরু হয়নি এখনও। এমনকি পরীক্ষার কিটও সরবরাহ করেনি স্বাস্থ্য বিভাগ। ফলে করোনা সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তারা।

রংপুর নগরীর বাসিন্দাদের অভিযোগ, তারা করোনা পরীক্ষার জন্য সিটি করপোরেশনের স্বাস্থ্য বিভাগে বারবার গিয়ে ফিরে আসছেন। তাদের বলা হচ্ছে, কিট না থাকায় নমুনা নেওয়া যাচ্ছে না। সিটি করপোরেশনের মেডিকেল অফিসার ডা. পলাশ কুমার রায় বলেন, ‘কিট না থাকায় নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষা করতে পারছি না আমরা। তবে আমাদের পুরো টিমকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। কিট এলেই নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষা শুরু হবে। কবে নাগাদ কিট আসবে, তা এখনও জানায়নি স্বাস্থ্য বিভাগ।’
রংপুরে সিভিল সার্জন ডা. শাহীন সুলতানা বলেন, কিটসহ অন্যান্য উপকরণ এলেই নমুনা সংগ্রহ ও করোনা পরীক্ষার কাজ শুরু হবে। বিভাগীয় স্বাস্থ্য কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক রোকেয়া খাতুন বলেন, করোনা নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। পিসিআর মেশিনগুলো সচল করার চেষ্টা চলছে। আশা করছি, দ্রুতই সম্ভব হবে। সব জেলার সিভিল সার্জনকে নিয়ে সভা করে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেওয়াসহ করোনা প্রতিরোধে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

অন্যদিকে হবিগঞ্জ জেলা সদর হাসপাতালেও অনেক রোগী করোনা উপসর্গ নিয়ে আসছেন। কিন্তু কিট ও পরীক্ষার সরঞ্জাম পর্যাপ্ত না থাকায় তারা পরীক্ষা করাতে পারছেন না। সদর হাসপাতালে আইসিইউ না থাকায় জটিল রোগীদের সিলেট ও ঢাকায় পাঠাতে হচ্ছে। 
হাসপাতালের চিকিৎসকরা বলছেন, রোগী এলেও পরীক্ষার তো ব্যবস্থা নেই। তবে তাদের স্বাস্থ্য-বিষয়ক বিভিন্ন পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। প্রয়োজনে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পরীক্ষা করা হবে বলে জানায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। 
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আমিনুল হক সরকার বলেন, চাহিদা থাকলেও হাসপাতালে বরাদ্দ থাকা কিটের সংখ্যা মাত্র ২৫০; যার মেয়াদ শেষ হবে আগামী সেপ্টেম্বর মাসে। অক্সিজেন ছাড়া অন্যান্য সরঞ্জামের ঘাটতি রয়েছে। ইতোমধ্যে কিটসহ সরঞ্জামের চাহিদাপত্র সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। 

আরও পড়ুন

×