ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

রিউমর স্ক্যানারের প্রতিবেদন

সংসদ নির্বাচন ঘিরে অপতথ্য বাড়ছে

বেশি অপপ্রচার বিএনপিকে নিয়ে

সংসদ নির্বাচন ঘিরে অপতথ্য বাড়ছে

ছবি: রিউমর স্ক্যানার

সমকাল প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৮ জুন ২০২৫ | ০০:৩৯

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে অপতথ্যের প্রসার বাড়ছে। চলতি বছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জানুয়ারি-মে) দল হিসেবে বিএনপি সবচেয়ে বেশি অপতথ্যের শিকার হয়েছে। রাজনৈতিক দল ও সরকারের উচ্চপদস্থ কর্তাব্যক্তিদের নামে ভুয়া ও সম্পাদিত বক্তব্যের মাধ্যমে সিংহভাগ অপতথ্য প্রচার করা হয়েছে। মঙ্গলবার ফ্যাক্টচেকিং প্রতিষ্ঠান রিউমর স্ক্যানারের প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।

অপতথ্য ফেসবুকেই বেশি

চলতি বছরের প্রথম পাঁচ মাসে নির্বাচনকেন্দ্রিক ৩৯টি অপতথ্য শনাক্ত করেছে রিউমর স্ক্যানার। নির্বাচন-সংক্রান্ত অপতথ্য শনাক্তের ক্ষেত্রে তথ্য যাচাই করা হয়েছে ৩৭টি এবং ভিডিও যাচাই করা হয়েছে দুটি। এসব অপতথ্যের ৭৪ শতাংশই ছড়িয়েছে শেষ দুই মাসে (এপ্রিল-মে)। 

বিশ্লেষণে দেখা গেছে, তথ্যকে বিকৃত করা হয়েছে এমন ঘটনা ১৯টি। ভুয়া ঘটনাসংবলিত অপতথ্য ১৮টি। অপতথ্য ছড়ানোর মাধ্যম হিসেবে সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হয়েছে ফেসবুক। শনাক্ত হওয়া ৩৯টি অপতথ্যের ৩৮টিরই হদিস মিলেছে এই প্ল্যাটফর্মে। এ ছাড়া টিকটক ও ইনস্টাগ্রামে দুটি করে ও থ্রেডসে একটি অপতথ্য ছড়িয়েছে। দেশের গণমাধ্যমও নির্বাচন-সংক্রান্ত ভুল তথ্য প্রচারের ক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছে। গত পাঁচ মাসে গণমাধ্যমগুলোতে এমন দুটি ভুল তথ্য প্রচারের প্রমাণ মিলেছে। 

ভুয়া মন্তব্যের শিকার রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরা 

ভুয়া ও বিকৃত মন্তব্যের সবচেয়ে বড় শিকার হতে হয়েছে বিএনপিকে। দলটির নেতাকর্মীকে জড়িয়ে গেল পাঁচ মাসে আটটি ভুয়া মন্তব্য ও সাতটি বিকৃত মন্তব্য প্রচার করা হয়েছে। এ ছাড়া অন্তর্বর্তী সরকারকে জড়িয়ে পাঁচটি, জামায়াতে ইসলামীকে জড়িয়ে সাতটি এবং জাতীয় নাগরিক পার্টিকে (এনসিপি) জড়িয়ে তিনটি ভুয়া ও বিকৃত মন্তব্য প্রচারের প্রমাণ মিলেছে। নির্বাচনের সময়সূচি ঘোষণা ও জনগণকে প্রতিশ্রুতি দেওয়া-সংক্রান্ত ছয়টি করে অপতথ্য প্রচার করা হয়েছে। 

অপতথ্য বেশি বিএনপিকে নিয়ে 

গত পাঁচ মাসে বিএনপিকে নিয়ে সবচেয়ে বেশি (১৯) অপতথ্য প্রচার করা হয়েছে। এর মধ্যে দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে নিয়ে সবচেয়ে বেশি সাতটি অপতথ্য ও মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে নিয়ে পাঁচটি এবং মির্জা আব্বাসকে নিয়ে দুটি অপতথ্য প্রচার করা হয়েছে।

জামায়াতে ইসলামীকে নিয়ে সাতটি অপতথ্য প্রচার করা হয়েছে। নতুন রাজনৈতিক দল এনসিপিও তিনটি অপতথ্যের শিকার হয়েছে। পাঁচ মাসে আওয়ামী লীগকে জড়িয়ে দুটি এবং গণঅধিকার পরিষদকে জড়িয়ে একটি অপতথ্য প্রচারের প্রমাণ মিলেছে। 

নির্বাচন-সংক্রান্ত অপতথ্যের শিকার হতে হয়েছে অন্তর্বর্তী সরকারকেও। সরকারকে জড়িয়ে পাঁচটি নেতিবাচক অপতথ্য শনাক্ত হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে জড়িয়ে চারটি এবং উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুলকে জড়িয়ে একটি অপতথ্য রয়েছে। 

অপতথ্যে গিনিপিগ গণমাধ্যম ফটোকার্ড

রিউমর স্ক্যানার বলছে, সাম্প্রতিক বছরগুলোয় গণমাধ্যমের ফটোকার্ডকে কাজে লাগিয়ে ভুয়া ও অপতথ্যের প্রচার আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। গত পাঁচ মাসে সম্পাদিত ও ভুয়া ফটোকার্ড ব্যবহার করে ১৩টি সংবাদমাধ্যমকে জড়িয়ে ২৭টি অপতথ্য প্রচার করা হয়েছে। অপতথ্য প্রচারে কালের কণ্ঠের নাম সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হয়েছে। এর পর যমুনা টিভি, কালবেলা ও জনকণ্ঠের নাম ব্যবহার করা হয়েছে। গণমাধ্যমকে জড়িয়ে প্রচারিত এসব অপতথ্যের সিংহভাগই রাজনীতিবিদদের ভুয়া ও সম্পাদিত মন্তব্যসংবলিত। খোদ সাংবাদিকসহ দায়িত্বশীল ব্যক্তিত্বরাও প্রায়ই বিভ্রান্ত হয়ে সেসব শেয়ার দেন। 

গণমাধ্যমকে জড়িয়ে অপতথ্যের প্রচারের বিষয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক মশিহুর রহমান বলেন, আগামী নির্বাচনে অবশ্যই অপতথ্যকে একটি গুরুতর গণতান্ত্রিক চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা উচিত। কারণ, এটি ভোটারের মত গঠনে প্রভাব ফেলে; রাজনৈতিক বিভাজন, সহিংসতা ও বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে। নির্বাচন প্রক্রিয়ার বিশ্বাসযোগ্যতাকেই প্রশ্নবিদ্ধ করে তোলে। ভুয়া ফটোকার্ড ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে গণমাধ্যমগুলো ভেরিফিকেশন লোগো ও ডিজিটাল ওয়াটারমার্ক ব্যবহার করতে পারে। 
 

আরও পড়ুন

×