ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০৩ জুলাই ২০২৫

শিশু পল্লী দিবস

নেই রক্তের বন্ধন, আছে স্নেহ-মমতা ভালোবাসা

নেই রক্তের বন্ধন, আছে  স্নেহ-মমতা ভালোবাসা

ইশতিয়াক এই শিশু পল্লীর সন্তান। এখানেই বড় হয়েছেন। পেশায় তিনি চিকিৎসক সমকাল

 সাজিদা ইসলাম পারুল

প্রকাশ: ২৩ জুন ২০২৫ | ০২:০৫

চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনামসজিদ স্থলবন্দরে কাজ করতেন এক কিশোরী। সেখানে এক লরিচালকের সঙ্গে তাঁর প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। সম্পর্ক গভীর হতে হতে এক সময় গর্ভে আসে নতুন প্রাণ। কিন্তু হঠাৎ করে সেই চালক উধাও হয়ে যায়, আর ফিরে আসেনি ওই কিশোরীর কাছে। এর পর তাঁর ওপর আসতে থাকে সমাজ-পরিবারের চোখরাঙানি ও কটূক্তি। এসব চাপে সন্তান পৃথিবীর মুখ দেখলেও তাকে আর নিজের কাছে রাখতে পারেননি মেয়েটি। বাধ্য হয়ে তুলে দেন রাজশাহীর তেরখাদিয়ার এসওএস শিশু পল্লীতে। শিশুটি এখন সেখানেই বেড়ে উঠছে।

তার মতোই আন্তর্জাতিক বেসরকারি শিশুকল্যাণ ও সমাজ উন্নয়নমূলক সংস্থা এসওএস শিশু পল্লীতে ঠাঁই হয়েছে দুই মাসের এশা ও আড়াই মাসের মাহিনের। তারা আছে সংস্থাটির রাজধানীর শ্যামলী শাখায়। পল্লীর পরিচালক হোসাইন আসিফ খান চৌধুরী বলেন, ‘গতকাল রোববার সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে ওই দুই শিশুকে এখানে পাঠানো হয়েছে। তারা আমাদের পরিবারের নতুন সদস্য। তাদের জন্য থাকবে সুরক্ষা, শিক্ষা, স্নেহ আর পরিচর্যার পরিপূর্ণ ব্যবস্থা।’

এ রকম পরিবারহীন দেড় হাজারের বেশি শিশু এখানে বেড়ে উঠেছে। এখানে কারও সঙ্গে রক্তের বন্ধন না থাকলেও আছে স্নেহ, মমতা ও ভালোবাসা। এসওএস শিশু পল্লীই যেন তাদের ‘দ্বিতীয় পরিবার’। এখানে একেকটি গ্রুপে একটি প্রশিক্ষিত এসওএস মায়ের যথার্থ স্নেহ ও যত্নে বেড়ে ওঠে শিশু।
আজ ২৩ জুন আন্তর্জাতিক এসওএস শিশু পল্লী দিবস। দিনটি বিশ্বব্যাপী পালিত হচ্ছে মা-বাবাহীন, পরিবারবিচ্ছিন্ন পরিবেশে বেড়ে ওঠা শিশুদের প্রতি দায়িত্বশীলতার প্রতীক হিসেবে। বিশ্বের ১৩৭টি দেশে সক্রিয় এই সংস্থার যাত্রা শুরু ১৯৪৯ সালে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-উত্তর ইউরোপে অনাথ শিশুদের আশ্রয় দিতে অস্ট্রিয়ার নাগরিক হারম্যান মেইনার প্রথম এসওএস গ্রাম গড়ে তোলেন।

বাংলাদেশে এসওএস শিশু পল্লীর কার্যক্রম শুরু হয় ১৯৭২ সালে, শ্যামলীতে। বর্তমানে ঢাকা (১০৪ শিশু), রাজশাহী (৯৪ শিশু), খুলনা (৯৫ শিশু), বগুড়া (৬৭ শিশু) চট্টগ্রাম (৬০ শিশু) ও সিলেটে (৭০ শিশু) এই সংস্থার শাখা রয়েছে। ঢাকার পল্লীতে প্রত্যেক মা ছয় শিশুকে নিয়ে একটি পরিবার তৈরি করেন। আগে এক মা ১০ শিশুর দেখভাল করতেন। কিন্তু শিশুর মানসিক বিকাশের স্বার্থে এই সংখ্যা কমিয়ে আনা হয়েছে। 
তেরখাদিয়ার এসওএস শিশু পল্লীটি দেশের দ্বিতীয় শিশু পল্লী। এটির যাত্রা শুরু ১৯৭৯ সালে। এখানে ৯৪ শিশু রয়েছে। সাবেক পরিচালক ড. ইকরাম নেওয়াজ ফরাজী বলেন, ‘এসওএস শুধু বাসস্থান নয়, এটি একটি বিকল্প পরিবার। এখানকার শিশুদের নৈতিক শিক্ষা, আত্মমর্যাদা ও জীবনের লক্ষ্য স্থির করতে সহায়তা দেওয়া হয়। তারা পরিবার হারায় ঠিকই, কিন্তু স্নেহ হারায় না।’
হোসাইন আসিফ খান চৌধুরী বলেন, শিশু পল্লীর ৫৪ বছরের ইতিহাসে প্রায় এক হাজার ৭০০ ছেলেমেয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তাদের অনেকেই এখন বিভিন্ন পেশাজীবী হিসেবে সফলভাবে দায়িত্ব পালন করছেন।
 

আরও পড়ুন

×