ঢাকা বুধবার, ০২ জুলাই ২০২৫

সংক্রমণ বাড়লেও টিকা নিচ্ছে না মানুষ, মৃত্যু আরও ৫

সংক্রমণ বাড়লেও টিকা নিচ্ছে না মানুষ, মৃত্যু আরও ৫

দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ আবার বাড়ছে। অনেকেই সতর্কতা মানছে না। তবে কিছু প্রতিষ্ঠান এরই মধ্যে সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নিয়েছে। রোববার নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার নৌবাহিনী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে তোলা সমকাল

 তবিবুর রহমান

প্রকাশ: ২৩ জুন ২০২৫ | ০২:০৬ | আপডেট: ২৩ জুন ২০২৫ | ০৮:৫০

করোনা সংক্রমণ বাড়লেও এই ভাইরাস প্রতিরোধে টিকা নেওয়ায় আগ্রহ নেই সাধারণ মানুষের। এতে সরকারের মজুতকৃত প্রায় ৩২ লাখ ডোজ টিকা নষ্ট হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এর মধ্যে ফাইজারের প্রায় ১৭ লাখ ডোজের মেয়াদ শেষ হবে আগামী ৬ আগস্টের মধ্যে। স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ বলছে, টিকাগুলো পুরোনো হলেও কার্যকর আছে। তবে জনসচেতনতা ও টিকাদান কার্যক্রমের গতি না বাড়ালে এই বিপুল পরিমাণ টিকা অপচয়ের মুখে পড়তে পারে। 

এদিকে গতকাল রোববার সকাল ৮টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় করোনাভাইরাসে পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে, যা আড়াই বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। সর্বশেষ ২০২২ সালের ১৮ অক্টোবর ছয়জনের মৃত্যু হয়।

গতকাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, গত এক দিনে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ৩৬ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ৬২১ জনের। সেই হিসাবে শনাক্তের হার ৫ দশমিক ৮০ শতাংশ। ২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়া পাঁচজনের চারজন পুরুষ ও একজন নারী। তাদের মধ্যে একজন ঢাকা, তিনজন চট্টগ্রাম ও একজন রাজশাহী বিভাগের। গত জানুয়ারি থেকে ২২ জুন পর্যন্ত করোনাভাইরাসে মারা গেছেন ১৬ জন। ২০২০ সালের ৮ মার্চ দেশে করোনা ধরা পড়ে এবং প্রথম মৃত্যু হয় ১৮ মার্চ।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, ২০২১ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি টিকাদান শুরু হয়। এরপর থেকে দৈনিক টিকা গ্রহীতার তথ্য জানিয়ে আসছে প্রতিষ্ঠানটি। তবে সুরক্ষা অ্যাপ সচল না থাকায় গত ৮ মার্চের পর এ তথ্য দেওয়া বন্ধ রয়েছে। সর্বশেষ সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, এক দিনে মোট টিকা নিয়েছেন ৪৩ জন। সারাদেশে মাত্র তিন কেন্দ্রে এই টিকা নেওয়ার ব্যবস্থা ছিল। জুনের শুরুতে সংক্রমণ বাড়ায় ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীকে টিকা নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। তবুও বাড়েনি টিকা নেওয়ার গতি। গত এক সপ্তাহে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ডিএনসিসি কভিড হাসপাতাল এবং কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের টিকাদান কেন্দ্রে কেউ টিকা নিতে আসেননি।

ডিএনসিসি কভিড হাসপাতালের পরিচালক কর্নেল তানভীর আহমেদ বলেন, আমাদের হাসপাতালে টিকার অভাব নেই, তবে টিকা নেওয়া মানুষের অভাব রয়েছে। মানুষের মধ্যে এখন আর করোনা ভীতি নেই, যে কারণে টিকা নিতে আসে না। সংক্রমণ বাড়লে টিকা নেওয়ায় আগ্রহ বাড়বে বলে মনে করেন তিনি। 

এ ছাড়া বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় এখনও টিকাদান কার্যক্রম শুরু করেনি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছে, দীর্ঘদিন টিকা গ্রহীতা না থাকায় টিকা কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছে। চাহিদা বাড়লে এ কার্যক্রম আবার শুরু হবে। একই অবস্থা ঢাকার বাইরে। ১৯ জুন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে করোনার বুস্টার ডোজ দেওয়া শুরু হয়। তবে টিকাদানকেন্দ্রে সাধারণ মানুষের উপস্থিতি আশানুরূপ ছিল না। প্রথম দিনে মাত্র সাতজন টিকা নিয়েছেন।

সরকারের সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির (ইপিআই) প্রকল্প ব্যবস্থাপক এস এম আব্দুল্লাহ-আল-মুরাদ সমকালকে বলেন, মাঠ পর্যায় ও ওয়্যারহাউস মিলে সরকারের হাতে ৩২ লাখ টিকা রয়েছে। এর মধ্যে গত দুই মাসে ১৭ লাখ ১৬ হাজার ৯০০ ডোজ ফাইজারের টিকা সব জেলায় পাঠানো হয়েছে, যার মেয়াদ শেষ হবে ৬ আগস্ট। এখন হাতে আছে আসলে ১৫ লাখ টিকা। 

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২২ জুন পর্যন্ত ১৫ কোটি ৯২ লাখ ৫ হাজার ৬২০ জন প্রথম ডোজ, ১৪ কোটি ২২ লাখ ১ হাজার ৬৮৪ জন দ্বিতীয় ডোজ এবং ৬ কোটি ৮৬ লাখ ১৫ হাজার ২৫০ জন তৃতীয় ডোজ টিকা নিয়েছেন। চতুর্থ ডোজ টিকা নিয়েছেন ৫১ লাখ ৫৫ হাজার ৯৮৩ জন। দেশে করোনা প্রতিরোধে এ পর্যন্ত ৩৭ কোটি ৮১ লাখ ডোজ টিকা আমদানি করা হয়েছে। চারটি উৎস থেকে টিকা পাওয়া গেছে। এর মধ্যে বড় অংশ কেনা। কিছু টিকা উপহার এবং বাকিগুলো বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কোভ্যাক্স সুবিধার আওতায় অনুদান হিসেবে পাওয়া গেছে।

সরকারের হাতে মজুত টিকার কার্যকারিতা আছে কিনা, এমন প্রশ্নে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক হালিমুর রশিদ সিডিসির গাইডলাইনের বরাত দিয়ে বলেন, সেখানে ২০২৪-২৫ সালের যে টিকা এসেছে, সেগুলো দেওয়ার পরামর্শ এসেছে। কারণ ওই টিকা ওমিক্রনের জন্য সুনির্দিষ্ট করা আছে। তবে বাংলাদেশে যে টিকা আছে, সেগুলোও নিরাপত্তা দেবে। 

তিনি আরও বলেন, আমাদের টিকা আরও পুরোনো। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) গাইডলাইন অনুযায়ী কোনো দেশে যদি সর্বশেষ টিকা না থাকে, তাহলে আগের টিকা দিয়েও রোগের জটিলতা কমানো যাবে। 

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, মানুষের টিকা নেওয়ায় আগ্রহ বাড়াতে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালাতে হবে। শুরুতে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের টিকা প্রয়োগে বিশেষ কর্মসূচি নিতে হবে। বিশেষ করে, যারা করোনা রোগীর চিকিৎসায় নিয়োজিত, তাদের টিকাদান কর্মসূচির আওতায় আনতে হবে। এই টিকার মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে প্রয়োগে ব্যবস্থা নিতে হবে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. আবু জাফর বলেন, বিশেষ করে অন্তঃসত্ত্বা, বয়স্ক, বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত ও এক বছরের আগে টিকা নেওয়া মানুষকে টিকা গ্রহণের আহ্বান জানানো হয়েছে। সব কেন্দ্রে টিকার সরবরাহ রয়েছে।

আরও পড়ুন

×