পরিবেশ পদক
গাছ-বই নিয়ে অবিরাম ছোটেন মাহমুদুল

বাইসাইকেলে গাছ ও বই সাজিয়ে গ্রামে-গঞ্জে ঘুরে বিতরণ করেন মাহমুদুল ইসলাম। ছবি: ফেসবুক থেকে
শিলু হোসেন
প্রকাশ: ২৬ জুন ২০২৫ | ০৫:৪৬
বাইসাইকেলের সামনে বসানো ছোট্ট ঝুড়ি। তার ভেতরে বিচিত্র বই। আর হাতলে ঝোলানো ব্যাগটি সব সময় ভরা গাছের চারায়। এভাবে নিজের দুই চাকার যান সাজিয়ে গ্রামগঞ্জে ছোটেন মাহমুদুল ইসলাম। হঠাৎ কোথাও থেমে চারা উপহার দেন। শিশু-কিশোরদের পড়ার জন্য ধার দেন বই। কখনও খোলা আকাশের নিচে বসান গল্প পাঠের আসর। শিশু-কিশোররা মুগ্ধ হয়ে তাঁর সেই গল্প শোনে।
গাছ ও শিশুদের বিকাশে কাজ করে যাওয়া এই উদ্যমী যুবক রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পেয়েছেন। পরিবেশ সংরক্ষণ ও দূষণ নিয়ন্ত্রণে অবদান রাখায় ব্যক্তি পর্যায়ে মাহমুদুলকে ‘জাতীয় পরিবেশ পদক ২০২৪’ দিয়েছে সরকার। বুধবার রাজধানীর বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে তাঁর হাতে পুরস্কার তুলে দেন পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার আজিজনগর গ্রামে মাহমুদুলের বাড়ি। তাঁর ডাকনাম মামুন। তিনি রংপুর কারমাইকেল কলেজ থেকে বাংলা সাহিত্যে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছেন। গাছের সঙ্গে মাহমুদুলের সখ্য শৈশব থেকে। তখন তাঁর প্রিয় কাজ ছিল বাড়ির আঙিনায় ও ফাঁকা জায়গায় গাছ লাগানো। পাশাপাশি পাখিদের খাবার খাইয়ে আনন্দ পেতেন তিনি। এভাবেই তাঁর যাত্রা শুরু। সে সময় অনেকেই মাহমুদুলকে ‘পাগল’ বলতেন। তবে এসব কথা তিনি গায়ে মাখেননি, কাজ করে গেছেন নিজের মতো।
প্রকৃতি ও পরিবেশ সংরক্ষণে মাহমুদুলের কার্যক্রম আরও বেড়ে যায় যুগ আগে, ২০১৩ সালে। তখন রংপুরের কারমাইকেল কলেজে বাংলা সাহিত্যে স্নাতক তিনি। মা-বাবার পাঠানো টাকা থেকে কিছুটা বাঁচিয়ে রাখতেন। প্রতিবার ছুটিতে বাড়ি যাওয়ার সময় রংপুর থেকে নানান জাতের ফলদ ও বনজ গাছের চারা নিয়ে যেতেন। রোপণ করতেন বাড়ির আশপাশে। ২০১৬ সালে স্নাতকোত্তর শেষ করে বাড়ি ফিরে আসেন মাহমুদুল। বাড়িয়ে দেন গাছ ও বই বিতরণ। চাকরির জন্য না ছুটে স্কুলপড়ুয়া দরিদ্র শিশুদের বাড়িতে প্রতি সন্ধ্যায় গিয়ে বিনামূল্যে পড়ান, যার নাম দিয়েছিলেন ‘সন্ধ্যা রাতের পাঠশালা’। এক সময় এলাকার মানুষের পাঠাভ্যাস গড়ে তুলতে নিজ বাড়িতে গড়ে তোলেন ‘প্রকৃতির পাঠাগার’, যেখানে আছে কয়েক হাজার বই।
মাহমুদুল শুধু বই আর গাছ বিতরণে থেমে নেই। তিনি কখনও পরিষ্কার করেন সড়কে জমে থাকা পানি, ঝোপঝাড়– যেন দুর্ঘটনা না ঘটে। চলার পথে পড়ে থাকা প্লাস্টিকের ব্যাগ কুড়িয়ে নেন। এসব কাজের ভিডিও মাঝেমধ্যে ফেসবুকে আপলোড করেন, যার প্রশংসা পান প্রতিনিয়ত। এবার পেলেন রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি। তাঁর এই প্রাপ্তিতে খুশি এলাকাবাসীসহ সবাই। নুসরাত জাহান নামে একজন ফেসবুকে লিখেছেন, ‘যোগ্য মানুষের হাতে পরিবেশ পদক দেখে খুশি লাগছে। আপনার মতো পাগল মানুষ আমাদের দরকার ভাই।’
মাহমুদুলের আদর্শ মা মাহামুদা বেগম। পুরস্কার পেয়ে সে কথা জানাতে ভোলেননি। গতকাল পুরস্কারপ্রাপ্তির প্রতিক্রিয়ায় ফেসবুকে একটি ছবি পোস্ট করেন তিনি। ছবিতে দেখা যায়, মাহমুদুল পরিবেশ উপদেষ্টা ও মায়ের পাশে দাঁড়িয়ে। ক্যাপশনে তিনি লিখেছেন, ‘আমার কাজের আদর্শ জাতীয় মঞ্চে। কাজে কথায় ইবাদতে দোয়া জানাই, ধর্ম-বর্ণ, মতভেদের সবাই সুস্থ থাকুন। কাজের জীবন গড়ে তুলুন। পরের জন্য বাঁচুন।’
তেঁতুলিয়ার ইউএনও আফরোজ শাহীন খসরু বলেন, মাহমুদুলের পদকপ্রাপ্তিতে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অভিবাদন জানাচ্ছি। তাঁর কাজে উজ্জীবিত হয়ে তরুণরা স্বেচ্ছাসেবায় উৎসাহ পাবে।
- বিষয় :
- পদক গ্রহণ