ঢাকা বুধবার, ০২ জুলাই ২০২৫

ভোটকেন্দ্র স্থাপনের ক্ষমতা হারালেন ডিসি-ইউএনও

ভোটকেন্দ্র স্থাপনের ক্ষমতা  হারালেন ডিসি-ইউএনও

.

 সমকাল প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০১ জুলাই ২০২৫ | ০১:৩৩

জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ‘ভোটকেন্দ্র স্থাপন ও ব্যবস্থাপনা নীতিমালা, ২০২৫’ জারি করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এবারের নীতিমালায় সংসদ নির্বাচনের ভোটকেন্দ্র স্থাপনে জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) প্রধান করে কমিটি করার বিধান বাদ দেওয়া হয়েছে। 
অনেক দিন ধরেই ভোটকেন্দ্র স্থাপনের কাজটি ইসির কর্মকর্তারা করে আসছিলেন। তবে গত সংসদ নির্বাচনের আগে কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন কমিশন এ কাজে প্রশাসন ও পুলিশের কর্মকর্তাদের যুক্ত করে। এ জন্য নীতিমালা সংশোধন করে ডিসি ও ইউএনওদের নেতৃত্বে কমিটি গঠন করা হয়েছিল। তখন এটি নিয়ে সমালোচনা হয়। নতুন নীতিমালায় ভোটকেন্দ্র স্থাপনের ক্ষমতা ফিরে পেলেন ইসির কর্মকর্তারা।

আউয়াল কমিশনের নীতিমালায় বলা হয়েছিল, সম্ভাব্য ভোটকেন্দ্রের খসড়া তালিকা তৈরির জন্য উপজেলা পর্যায়ে ইউএনওকে আহ্বায়ক করে পাঁচ সদস্যের কমিটি থাকবে। জেলা পর্যায়ে থাকবে ডিসির নেতৃত্বে সাত সদস্যের কমিটি। উপজেলা কমিটির তৈরি করা ভোটকেন্দ্রের খসড়া তালিকা মহানগর বা জেলা কমিটিতে পাঠানো হবে। এ কমিটি দৈবচয়নের ভিত্তিতে ভোটকেন্দ্র সরেজমিন তদন্ত করে মতামত দেবে। এ মতামতসহ খসড়া তালিকা নির্বাচন কমিশনে পাঠাবেন জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা।
এ কমিটিতে সদস্য হিসেবে রাখা হয়েছিল সংশ্লিষ্ট থানার ওসি, উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা। কমিটির সদস্য সচিব উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা। আর মহানগর বা জেলায় ভোটকেন্দ্র স্থাপন কমিটিতে সদস্য সচিব জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা। সদস্য হিসেবে থাকবেন বিভাগীয় কমিশনারের প্রতিনিধি (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে), পুলিশ সুপার, সংশ্লিষ্ট মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারের প্রতিনিধি, জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ও জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা।

ইসির কর্মকর্তারা বলছেন, বর্তমান কমিশনের অধীনে করা নতুন নীতিমালায় উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে কমিটি করার বিধান বাদ দেওয়ায় ভোটকেন্দ্র স্থাপনের কাজটি ইসির মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের হাতে ফিরল। নতুন নীতিমালায় বলা হয়েছে, গড়ে তিন হাজার ভোটারের জন্য একটি কেন্দ্র এবং গড়ে ৫০০ পুরুষ ভোটারের জন্য একটি ও ৪০০ নারী ভোটারের জন্য একটি কক্ষ নির্ধারণ করতে হবে। বিদ্যমান ভোটকেন্দ্রের স্থাপনা নদীভাঙন বা অন্য কোনো কারণে বিলুপ্ত/ব্যবহারের অনুপযোগী হলে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি/রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করে ভোটকেন্দ্র স্থাপন করতে হবে। 
ভোটার সংখ্যা বাড়ার কারণে নতুন ভোটকেন্দ্র স্থাপনের প্রয়োজন হলেও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি/নির্বাচিত প্রতিনিধি/রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে ভোটকেন্দ্র স্থাপন ও তালিকা নির্ধারণ করতে হবে।

নতুন নীতিমালায় বলা হয়েছে, ভোটারদের কেন্দ্রে যাতায়াতের সুবিধা ও ভৌগোলিক অবস্থান বিবেচনা করে ভোটকেন্দ্র স্থাপন করতে হবে। এ ক্ষেত্রে দুটি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে দূরত্ব যেন তিন কিলোমিটারের বেশি না হয়, আবার একটি কেন্দ্রের খুব কাছে যেন আরেকটি ভোটকেন্দ্র স্থাপন করা না হয়। কোনো ভোটারকে যেন কাছাকাছি কেন্দ্র অতিক্রম করে দূরের কেন্দ্রে যেতে না হয়, সেটাও দেখতে বলা হয়েছে নীতিমালায়। এ ছাড়া বিদ্যমান ভোটকেন্দ্রগুলো যথাসম্ভব অপরিবর্তনীয় রাখার চেষ্টা করতে বলা হয়েছে।
নীতিমালা অনুযায়ী, বরাবরের মতো গড়ে ৩ হাজার ভোটারের জন্য একটি ভোটকেন্দ্র এবং গড়ে ৫০০  পুরুষ ও ৪০০ নারী ভোটারের জন্য একটি ভোট কক্ষ নির্ধারণ করা হবে।
গত ২১ মে এ এম এম নাসির উদ্দিন নেতৃত্বাধীন ইসির পঞ্চম কমিশন সভায় ‘জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটকেন্দ্র স্থাপন ও ব্যবস্থাপনা নীতিমালা’ অনুমোদন করা হয়। সভা শেষে নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, সংসদ নির্বাচনের ভোটকেন্দ্র স্থাপন ও ব্যবস্থাপনা নীতিমালায় থাকা কমিটি বিলুপ্ত করা হয়েছে। এটা কমিশনের অধীনে আনা হয়েছে।
সবশেষ ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারির দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ৪২ হাজারের বেশি ভোটকেন্দ্র ছিল। ভোটকক্ষ ছিল ২ লাখ ৬০ হাজারের বেশি। এবার সাড়ে ১২ কোটি ভোটারের জন্য আরও বেশি কেন্দ্র ও ভোটকক্ষ দরকার হবে। ভোটকেন্দ্র নিয়ে দাবি-আপত্তি নিষ্পত্তি করে ভোটের অন্তত ২৫ দিন সব ভোটকেন্দ্রের গেজেট প্রকাশ করবে নির্বাচন কমিশন।

আচরণ বিধিমালা নিয়ে মতামত ১০ জুলাইয়ের মধ্যে
রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা, ২০২৫ এর খসড়া চূড়ান্ত করতে নাগরিকদের কাছ থেকে মতামত চেয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। বিধিমালার খসড়া কমিশনের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করে আগামী ১০ জুলাইয়ের মধ্যে এ মতামত পাঠাতে বলা হয়েছে। গতকাল সোমবার নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়েছে। 

 

আরও পড়ুন

×