ঢাকা বুধবার, ০২ জুলাই ২০২৫

জাবিতে গাছ উপড়ে ফেলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ 

গাছ নিধন বন্ধে বেলার চিঠি

জাবিতে গাছ উপড়ে ফেলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ 

জাবিতে গাছ উপড়ে ফেলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ। ছবি-সমকাল 

সমকাল প্রতিবেদক ও জাবি প্রতিনিধি 

প্রকাশ: ০১ জুলাই ২০২৫ | ২২:৩৮

সরকারের কারণ দর্শানোর নোটিশ উপেক্ষা করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের গাণিতিক ও পদার্থবিষয়ক অনুষদের সম্প্রসারিত ভবন নির্মাণের জন্য অর্ধশতাধিক গাছ উপড়ে ফেলার কৈফিয়ত চেয়ে বিক্ষোভ করেছেন একদল শিক্ষার্থী। মঙ্গলবার দুপুরে ‘জাহাঙ্গীরনগর বাঁচাও আন্দোলন’-এর ব্যানারে বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন কলাভবন এলাকা থেকে এ বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। মিছিলটি কয়েকটি সড়ক ঘুরে শহীদ মিনারের পাদদেশে গিয়ে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে শেষ হয়।

সমাবেশে বক্তারা তিন দফা দাবি তুলে ধরেন। দাবিগুলো হলো– সরকারের কারণ দর্শানোর নোটিশ উপেক্ষা করে অর্ধশতাধিক গাছ উপড়ে ফেলার কৈফিয়ত, পূর্ণাঙ্গ মাস্টারপ্ল্যান না হওয়া অবধি নতুন কোনো ভবনের কাজ শুরু না করা ও উন্নয়ন প্রকল্পের খপ্পরে ধ্বংস হওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ-প্রকৃতি পুনরুদ্ধারের উদ্যোগ নেওয়া।

সমাবেশে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের (মার্ক্সবাদী) জাবি শাখার সংগঠক সজীব আহমেদের সঞ্চালনায় নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ফারিয়া জামান বলেন, ‘বিগত কয়েক বছরে আমাদের যে ট্রমা, সেটি হলো, কোথাও গাছ কাটে, আর প্রশাসন বলে তারা জানে না। সেই ট্রমার ভেতর দিয়ে আমরা আরও একবার যাচ্ছি।’ 
গত ৮ মে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি চিঠি দিয়ে সংশোধিত মাস্টারপ্ল্যানের বিষয়ে আনুষ্ঠানিক জবাব চাওয়া হয়। এর পর ৯ মে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জানায়, ২০ মের মধ্যে মাস্টারপ্ল্যানের দৃশ্যমান অগ্রগতি দেখানো হবে। তবে এক মাস পেরিয়ে গেলেও সেই প্রতিশ্রুতি এখনও বাস্তবায়িত হয়নি। 

এর মধ্যেই গত সোমবার গাণিতিক ও পদার্থবিষয়ক অনুষদের সম্প্রসারিত ভবন নির্মাণের বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের সামনের নির্ধারিত স্থানে অর্ধশতাধিক গাছ উপড়ে ফেলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মাহবুব ব্রাদার্স। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য জানিয়েছেন, গাছ উপড়ে ফেলার বিষয়ে তিনি জানেন না।

জাবিতে গাছ নিধন বন্ধে বেলার চিঠি

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্প’ বাস্তবায়নের নামে নির্বিচারে গাছ কাটা ও পরিবেশ বিধ্বংসী কার্যক্রমের প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা)। মঙ্গলবার বেলার পক্ষ থেকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি পাঠিয়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন অবিলম্বে স্থগিতের দাবি জানানো হয়।

এতে বলা হয়, এখনও বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য একটি যথাযথ ও পরিবেশবান্ধব মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন হয়নি। এ পরিস্থিতিতে প্রকল্প বাস্তবায়নের নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববৈচিত্র্য ও প্রাকৃতিক পরিবেশ ধ্বংস করা হচ্ছে। চিঠিতে ইতোমধ্যে কাটা গাছগুলোর প্রজাতি নির্ধারণ করে ক্ষতিপূরণমূলক বনায়নের দাবিও জানানো হয়েছে। চিঠিটি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এবং গাণিতিক ও পদার্থবিষয়ক অনুষদের ডিনের কাছে পাঠানো হয়েছে।

চিঠিতে বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়টি শুধু শিক্ষাঙ্গন নয়, এটি বহু প্রজাতির উদ্ভিদ, প্রাণী ও পাখির আবাসস্থল। প্রতিবছর শীতে অতিথি পাখির আগমনে মুখরিত থাকত এর জলাশয়গুলো। কিন্তু এক গবেষণায় দেখা গেছে, গত ৩৫ বছরে প্রায় ৪০ শতাংশ জলাশয় এবং ২৬ দশমিক ৫ শতাংশ গাছপালাবেষ্টিত অঞ্চল হারিয়ে গেছে। ফলে অতিথি পাখির উপস্থিতিও এখন প্রায় শূন্যের কোঠায়।

আরও পড়ুন

×